ছি:এনজি কথন by ইকবাল খন্দকার

ভিক্ষা চাই না,
দুই বন্ধু হাঁটছে আর কথা বলছে। প্রথম বন্ধু বিশাল একটা গাছ দেখিয়ে বলল, দোস্ত, ওইটা কী? দ্বিতীয় বন্ধু বলল, ওইটা হচ্ছে বটগাছ। প্রথম বন্ধু সাথে সাথে প্রশ্ন করল, গাছ কীরে দোস্ত? দ্বিতীয় বন্ধু হেসে বলল, কী বলিস! গাছ চিনিস না? আরে গাছ হচ্ছে বৃক্ষ। প্রথম বন্ধু জানতে চাইল, বিরিক্ষ কী জিনিস একটু বুঝিয়ে বল তো। দ্বিতীয় বন্ধু একটু ভাবল। তারপর বলল, আরে বৃক্ষ চিনিস না? বৃক্ষ হচ্ছে গিয়ে মহীরুহ। তার মানে ওই যে বিশাল জিনিসটা দেখছিস, ওটা হচ্ছে বট মহীরুহ। প্রথম বন্ধুর মুখ কালো হয়ে গেল এবার। সে ছোটখাটো একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, নারে দোস্ত, বিরিক্ষ, মহীরুহ দুইটাই কঠিন। তার চেয়ে অনেক সহজ ওই ‘গাছ’ই। পাঠক, কোনো জিনিস কঠিন হলে তো কথাই নেই, সহজ হলেও আমরা চাই আরো সহজ হোক; কিন্তু সহজ চাইতে গিয়ে যখন দেখি সহজ তো হচ্ছেই না, বরং আগেরটার চেয়ে আরো কঠিন হচ্ছে, তখন বাধ্য হয়েই বলি ওইটাই ভালো; কিন্তু কখনো কখনো অবস্থা এমন হয় যে, ওই ভালোটা বেছে নেয়ারও সুযোগ থাকে না। কঠিনটাই নিতে হয়।

যেমন ধরুন সিএনজি’র ব্যাপারটা। এতদিন সিএনজি আমাদের সাথে যা করেছে, তাতেই আমরা অতিষ্ঠ ছিলাম। চেয়েছিলাম ব্যাপারটা আরেকটু সহজ হয় কি না। একটু কম খরচে সিএনজিতে চড়া যায় কি না; কিন্তু খরচ কমবে দূরের কথা, পাক্কা দুই গুণ বেড়েছে। এখন যদি আমরা বেশ জোর দিয়ে বলি আগেরটাই ভালো ছিল, কোনো লাভ নেই। কারণ যা হওয়ার হয়েই গেছে। এখন আমরা বরং আফসোস করে বলতে পারি, আহারে! কেন শুধু শুধু সিএনজি’র দাম নিয়ে মাথা ঘামিয়েছিলাম।
আসলে বিষয়টা এমন হয়েছেÑ বিপদে পড়ে কোথাও গেলেন ভিক্ষা চাওয়ার জন্য। বাড়িওয়ালা ভিক্ষা তো দিলোই না, বরং পেছনে লেলিয়ে দিলো বাড়ির বাঘা কুকুরটা। তখন ভিক্ষা চাওয়ার কথা মনে থাকবে কি, দৌড়াতে দৌড়াতেই তো অবস্থা দফারফা হয়ে যাবে। আমাদের অবস্থাও এই অবস্থার খুব একটা ব্যতিক্রম হয়নি।
সিএনজি’র বর্তমান অবস্থা দেখে আমাদের অবস্থা যাচ্ছেতাই। তবুও কিছু করার নেই। এর চেয়ে সহজ কিছু চাইতে যাবেন, কপালে জুটে যেতে পারে তার চেয়েও জটিল কিছু।
অতএব কোনো লাভ নেই। যা হয়েছে তাতেই আসুন আমরা সবাই বলি ‘শুকরিয়া’। এতে আর যা-ই হোক অন্তত দেশ-বিদেশের সবাই তো জানবে আমরা অতিশয় শান্তিকামী পাবলিক। শান্তি ছাড়া আমরা কিছুই বুঝি না। আমাদের ওপর যা-ই চাপিয়ে দেয়া হোক না কেন, আমরা মোটেই বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করব না। ত্যাড়ামি করার তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
তেলা মাথায় তেল,
সবাই সারা জীবন তেলা মাথায়ই তেল দিয়ে আসছে। ভবিষ্যতেও দেবে এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র অথবা আধা বিন্দুমাত্র সন্দেহ করার কোনো রকম অবকাশ নেই। সিএনজিওয়ালাদের মাথায় এমনিতেই এত বেশি পরিমাণে তেল ছিল যে, একেবারে বেয়ে বেয়ে পড়ত। এখন আবার সেই তেলের সাথে দেয়া হয়েছে আরো নতুন তেল। এখন তো তেল দিয়ে তাদের গোসল করার মতো অবস্থা। তাদের এখন পাওয়া আর আকাশের চাঁদ-তারা পেয়ে যাওয়া সমান কথা। যখন সিএনজিওয়ালাদের মাথায় এখনকার তুলনায় কম তেল ছিল, তখনই তাদের দেখলে, তাদের ভাবসাব দেখলে মনে হতো তারা বুঝি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বুশের অতীব নিকটাত্মীয়। মনে হতো তাদের সাথে কথা বলতে হলে অবশ্যই পূর্ব অনুমতির দরকার আছে। সিএনজিতে বসে কিংবা বিড়ালের মতো গোল হয়ে শুয়ে ঘুম দেবে, কিন্তু ভাড়া টানবে না। পাঁচ-সাত-দশবার ডাকলেও তারা আপনাকে পাত্তা দেবে না। অবশেষে যদি তাদের করুণা হয় আর যদি আপনার ডাকে সাড়া দেয়, তাহলে এমন একটা ভাড়া হাঁকিয়ে বসবে, যা শুনে যে কারো সুস্থ মাথায় গণ্ডগোল দেখা দেবে। তবুও কিছু করার কিংবা বলার নেই। কারণ গাড়ির মালিক তারা। আপনার আমার তো দু-একটা সিএনজি নেই। আমাদের থাকলে একটা কথা ছিল। তাদের চোখের সামনে দিয়ে সাঁই করে চলে যেতে পারতাম।
সেই মহাভাবিস্ট সিএনজিওয়ালাদের ভাব এখন বেড়েছে দুই গুণ। এখন তাদের ভাব যে কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, তা পরিমাপ করার যদি কোনো রকম যন্ত্রপাতি থাকত, তাহলে হয়তো একটা ধারণা করা যেত। অবশ্য ধারণা করেও লাভ নেই। কারণ আপনি যদি মনে করেন তাদের সিএনজিতে আপনাকে চড়তেই হবে, তাহলে তারা যত ভাবই দেখান না কেন, সেই ভাব আপনাকে মনোযোগের সাথে দেখতে হবে। সপ্তাশ্চর্য হিসেবে বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন জিনিসের নাম উঠে এসেছে। কালের বিবর্তনে কোনো একসময় সিএনজি’র ব্যাপারটাও সপ্তাশ্চর্য হিসেবে উঠে আসাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিভাবে উঠে আসতে পারে, আগে সেটা বুঝে নিন। সিএনজিওয়ালাকে দীর্ঘ টাইম অনুনয়-বিনয় আর অনুরোধ করলে তবেই তারা আপনাকে-আমাকে সিএনজিতে তুলতে রাজি হতো। তা-ও আবার গলাকাটা ভাড়ার বিনিময়ে।
মনে করুন, যদি কখনো এমন হয় আপনি রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন, এমন সময় একজন সিএনজিওয়ালা সিএনজি নিয়ে এগিয়ে এসে আপনাকে ব্যাপক জোরাজুরি করতে লাগল তার সিএনজিতে ওঠার জন্য। আপনি উঠতে চাচ্ছেন না, তবুও উঠাতে চাচ্ছে। আপনি ভাড়ার প্রসঙ্গ তুলতেই সিএনজিওয়ালা বলছে আরে মামু, ভাড়া কোনো ব্যাপার না। খুশি হয়ে যা দ্যান, তাতেই চলবে। পাঠক, সত্যি সত্যি যদি কখনো আমাদের দেশে এমন ঘটনা ঘটে, তাহলে আপনি একে সপ্তাশ্চর্যের এক আশ্চর্য হিসেবে ধরে নিতে পারেন; কিন্তু বেদনাদায়ক হলেও সত্য যে, এমন ঘটনা কেবল স্বপ্নেই ঘটা সম্ভব। বাস্তবে এমন ঘটনা ঘটবে, এমন আশা যদি কেউ কখনো করে অথবা করার প্রস্তুতি নেয়, তাহলে তিনিই সপ্তাশ্চর্য একটা প্রাণী হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যেতে পারেন।
মেয়ের বাপেরা একেক সময় একেক পেশার ছেলেদের জামাই হিসেবে পছন্দ করেন। এখন যে তারা সিএনজিওয়ালাদের জামাই হিসেবে বেছে নেবেন, এ ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করার তেমন কোনো সুযোগ নেই। এমনি তাদের আকাশচুম্বী মুড, তার ওপর সিএনজি’র দাম বৃদ্ধি। এখন তাদের মুড সপ্তাকাশে ছড়িয়ে যাবে। এমন মুডসম্পন্ন ব্যক্তিদের জামাই হিসেবে পাওয়ার খায়েশ মেয়ের অভিভাবকদের থাকতেই পারে।
যাক, অনেক রসকষহীন কথা হলো। শেষমেশ আসুন একটা রসালো কৌতুক শুনে ফেলা যাক। এক রোগী ডাক্তার সাহেবের কাছে এসেছে তার পাওনা মেটাতে। ডাক্তার সাহেব তার পাওনা বুঝে নিলেন। তারপর এই রোগীকে বসালেন তার একেবারে কাছের চেয়ারটায়।
অতি আনন্দের সাথে তিনি অন্য রোগীদের শুনিয়ে শুনিয়ে বললেন, কি আমি ঠিক বলিনি, আপনি দু’মাসের মধ্যে হাঁটতে পারবেন? রোগী ডাক্তারের মুখের দিকে তাকালেন বেশ ক’বার। তারপর গম্ভীর গলায় বলতে লাগলেন, হ্যাঁ, তা অবশ্য বলেছিলেন। আপনি বলেছিলেন আমি হাঁটতে পারব। আমি হেঁটেই আপনার কাছে এসেছি।
কারণ আপনার ফিস মেটাতে গতকাল আমার গাড়িটা বিক্রি করে দিতে হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.