পরকীয়া, প্রতারণা মামলা, অতঃপর পুরুষাঙ্গ কর্তন by মো.কামাল হোসেন

আমিনা বেগম। বয়স ২৮ বছর। গোপালপুর উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের বন্ধ হাজিরা গ্রামের দুবাই প্রবাসী আব্দুল জলিলের স্ত্রী। প্রায় ৬ বছর ধরে প্রবাস জীবন কাটাচ্ছেন জলিল। বিবাহিত জীবনে ছয় ও দশ বছরের দু’টি ছেলে সন্তান রয়েছে জলিল ও আমিনার। স্বামী প্রবাসে থাকায় দুই সন্তান নিয়ে শ্বশুর বাড়িতেই বসবাস করতো আমিনা। চার বছর আগে আমিনার ওপর কুনজর পড়ে একই গ্রামের আফসার উদ্দিন আফসুর ছেলে এক সন্তানের জনক ফিরোজ আহম্মেদের। একই গ্রামে বসবাসের সুবাধে প্রায়ই দেখা সাক্ষাত হতো আমিনা-ফিরোজের। একপর্যায়ে আমিনাকে ফুঁসলিয়ে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তোলে ফিরোজ। চলতে থাকে তাদের দৈহিক সম্পর্ক। নিজের সংসার ছেড়ে আমিনাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয় ফিরোজ। এমনি প্রতিশ্রুতিতে প্রবাসী স্বামী জলিলের পাঠানো টাকা তুলে দেয় ফিরোজের হাতে। গত তিন বছরে কৌশলে কয়েক দফায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় ফিরোজ। মাস দুয়েক আগে ফিরোজকে বিয়ের জন্য চাপ দেয় আমিনা। কিন্তু ফিরোজ তাতে রাজি না হয়ে কৌশলে আমিনাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। ক্ষোভ বিরাজ করতে থাকে আমিনার মাঝে। দেড় মাস আগে আমিনা তার পাওনা টাকা দাবী করে ফিরোজের কাছে কিন্তু সে ওই টাকা দিতে অস্বীকার করে। পরবর্তীতে আমিনা বাদী হয়ে ফিরোজকে প্রধান আসামী করে ফিরোজের স্ত্রী মাবিয়া বেগম ও ভাই আক্তারের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইল কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন। আর ওই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় হাদিরা ইউপি চেয়ারম্যান আব্বাস আলীর কাছে। চেয়ারম্যান আব্বাস আলী টাকা নেয়ার বিষয়ের সত্যতা পেয়ে টাঙ্গাইল কোর্টে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এদিকে মামলা করেই প্রতারণার ক্ষোভ মিটছিলনা আমিনার। তার মনের ক্ষোভ মিটানোর জন্য কৌশলে আবারও ফিরোজের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। ফিরোজও সায় দেয় তাতে। গত ২৯ শে সেপ্টেম্বর ফিরোজ দৈহিক সম্পর্ক চালানোর উদ্দেশে গভীর রাতে আমিনার ঘরে ঢুকে। আর এই সুযোগে ধারালো ব্লেড দিয়ে ফিরোজের পুরুষাঙ্গ কেটে দেয় আমিনা। ফিরোজের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। বৃহস্পতিবার সরজমিনে গোপালপুর উপজেলার হাদিরা এলাকা ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয়রা জানান, আমিনা ও ফিরোজের পরকীয়ার বিষয়টি এলাকার সবার মুখে মুখে ছিল। বেশ কয়েকবার তারা আপত্তিকর অবস্থায় ধরাও পড়েছে। এনিয়ে গ্রাম্য সালিশে তাদের সতর্কও করা হয়েছে। কিন্তু ফিরোজের কোন বিচার করা হয়নি। যার কারণে সাহস বেড়ে গিয়েছিল। এজন্য থেমে থাকেনি তাদের পরকীয়া। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ফিরোজের পক্ষে থাকায় এসব ঘটনা সে কেয়ারই করতোনা। আর গ্রামের লোকজন ভয়ে কখনোই  ফিরোজের এধরনের কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি।
এব্যাপারে ফিরোজের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। আমিনার সাথে কথা বলতে গেলে তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্বাস আলী জানান, আমিনা-ফিরোজের পরকীয়ার ঘটনা আমি শুনেছি। তবে আমিনা ফিরোজের কাছে যে সাড়ে ৪ লাখ টাকা পায় এটা সত্যি। টাকা নেয়ার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টও রয়েছে তার কাছে। টাকা দাবী করে আমিনা যে মামলা দয়ের করেছিল তদন্ত করে তার সত্যতা পেয়ে প্রতিবেদন কোর্টে প্রেরণ করেছি।
এদিকে পুরুষাঙ্গ কর্তনের ঘটনায় ফিরোজ নিজেই বাদী হয়ে আমিনা বেগমকে প্রধান আসামী করে ইমাম আলী ও মিন্টু মিঞার বিরুদ্ধে গোপালপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।  এ বিষয়ে গোপালপুর থানা অফিসার ইনচার্জ জহুরুল ইসলাম বলেন, পুরুষাঙ্গ কর্তনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে। তবে পরকীয়ার ঘটনা তিনি জানেন না বলে জানান।

No comments

Powered by Blogger.