কোরবানির পশুর চামড়া কেনা নিয়ে জটিলতার আশঙ্কা by আবুল হাসনাত

বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে বেশি দামে এবার কোরবানির পশুর চামড়া কিনেছেন মৌসুিম ব্যবসায়ীরা। আড়তদারদেরও সেই চামড়া চড়া দামেই কিনতে হয়েছে। তবে ট্যানারি মালিকেরা এ দামে তাঁদের কাছ থেকে চামড়া কিনবেন কি না, সেই শঙ্কায় আছেন তাঁরা।
অবশ্য বিশ্ববাজারে দরপতনের অজুহাত দেখিয়ে চামড়ার দর গত বছরের চেয়ে কম নির্ধারণ করে চামড়া-সংশ্লিষ্ট তিন ব্যবসায়ী সংগঠন। প্রতিবছরই বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে বেশি দামে খুচরা পর্যায়ে চামড়ার বেচাকেনা হয় বলে এবার ১৫ থেকে ২০ টাকা হাতে রেখেই দাম ঠিক করেন ব্যবসায়ীরা।
ফলে মাঠপর্যায় থেকে বেশি দামে চামড়া সংগ্রহ হওয়ায় ট্যানারি মালিকেরা লোকসানের যে আশঙ্কা করছেন, শেষ পর্যন্ত তা হবে না বলেই মন্তব্য আড়তদারদের। তবে ট্যানারি মালিকেরা বলছেন, এত দাম দিয়ে তাঁরা চামড়া কিনবেন না। দাম কমা পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।
বাংলাদেশ প্রস্তুত চামড়া, চামড়াপণ্য ও জুতা রপ্তানিকারক সমিতির (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি আবু তাহের প্রথম আলোকে বলেন, ‘মৌসুমি ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনেছেন। ট্যানারি মালিকেরা তো এত দাম দিতে পারবেন না। তাঁরা এখন লোকসান দেবেন।’
তবে চামড়ার আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘কিছু টাকা হাতে রেখেই এবার চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। তাই বেশি দামে চামড়ার বেচাকেনা হলেও লোকসানের আশঙ্কা নেই। তবে লাভ কম হবে।’
বাণিজ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ঈদের আগমুহূর্তে ট্যানারি মালিকদের দুই সংগঠন বাংলাদেশ বিএফএলএলএফইএ ও বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) এবং বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন চামড়ার দর নির্ধারণ করে। সে অনুযায়ী, প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম ঢাকায় ৭০ থেকে ৭৫, ঢাকার বাইরে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। মহিষের চামড়া ৩৫ থেকে ৪০, খাসির চামড়া ৩০ থেকে ৩৫ এবং বকরির চামড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

রাজধানীতে চামড়ার বড় আড়ত লালবাগের পোস্তায় ঈদের দিন বিকেল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে চামড়া আসতে থাকে। ওই দিন সেখানে চামড়া বিক্রি হয় প্রতি বর্গফুট ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। আড়তদারেরা বলছেন, ঈদের পর থেকে গতকাল পর্যন্ত পোস্তায় সাড়ে তিন লাখ গরুর চামড়া এসেছে।
আড়তদারেরা জানান, কোরবানিতে সবচেয়ে ভালো গরুটা জবাই করা হয়। সে কারণে চামড়াটাও ভালো হয়। তাই বেশি দাম দিয়ে তা কিনলেও সমস্যা হয় না। চড়া দামে চামড়া কেনায় মৌসুমি ব্যবসায়ীদের সমালোচনাও করেন তাঁরা।
তবে মৌসুমি ব্যবসায়ী আবদুস সোবহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যারা দামটা নির্ধারণ করে তারা তো আর মাঠে আসে না; এলে বুঝতে পারত কেন বেশি দাম দিয়ে চামড়া কিনতে হয়।’ ঈদের দিন তিনি বনশ্রী এলাকার চামড়া সংগ্রহ করেছেন।
পোস্তার একজন আড়তমালিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ট্যানারি মালিকেরা তাঁদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রতি বর্গফুট চামড়া ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় পর্যন্ত কিনেছেন। কিন্তু আমাদের বলেন, আপনারা বেশি দামে চামড়া কেনেন কেন? ওই চামড়া কিনব না। তাঁরা আমাদের জিম্মি করে নিজেদের মুনাফা বাড়াতে চান।’
এ বিষয়ে ট্যানারি মালিকদের বড় সংগঠন বিটিএর মহাসচিব মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘না পোষালে তো আমরা বেশি দামে চামড়া কিনব না। চামড়া যেহেতু কিনতেই হবে, তাই প্রয়োজনে আমরা অপেক্ষা করব। চামড়ার দামও একসময় কমে আসবে। তখন কিনব।’
কম দামে চামড়া কেনার পেছনে এর রপ্তানিমূল্য কমে যাওয়াকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছেন ট্যানারি মালিকেরা। তবে আন্তর্জাতিক পণ্যমূল্য নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ইনডেক্স মুন্ডির ওয়েবসাইট বলছে, বিশ্ববাজারে গত জুলাইতে প্রতি পাউন্ড চামড়ার দাম যেখানে ছিল এক ডলার সাত সেন্ট, সেটা আগস্টে বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক ডলার ১১ সেন্টে।
নষ্ট হওয়ার শঙ্কা: আড়তদার সমিতির মহাসচিব টিপু সুলতান বলেন, গ্রীষ্মকালে চামড়া ভালোভাবে সংরক্ষণ না করলে তা নষ্ট হয়ে যায়। গত বছর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এবারও মোট চামড়ার ১০ শতাংশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
ট্যানারি মালিকদের হিসাবে, ঢাকায় এবার ১০ থেকে ১২ লাখ গরু কোরবানি হয়েছে। সারা দেশে গবাদিপশুর কোরবানির সংখ্যা ৮০ থেকে ৮৫ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.