কাশ্মীর সীমান্তে গোলাগুলিতে ১২ বেসামরিক নাগরিক নিহত -পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

বিরোধপূর্ণ কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের অব্যাহত পাল্টাপাল্টি গোলাগুলিতে গত কয়েক দিনে অন্তত ১২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। দুই দেশের সরকারি কর্মকর্তারা গতকাল বুধবার এ কথা জানিয়েছেন। এদিকে ভারতের শীর্ষ সরকারি সূত্রগুলো জানায়, পাকিস্তানের তরফ থেকে হামলা একেবারে বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ‘শক্তিশালী ও সমুচিত’ জবাব দিতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল এ বিষয়ে বলেছেন, শিগগিরই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। খবর এএফপি, রয়টার্স, ডন ও এনডিটিভির।

গোলার আঘাত থেকে বাঁচার জন্য কাশ্মীর সীমান্তের দুই দিকেই হাজার হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে চলে গেছে। গোলাগুলির জন্য ভারত ও পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ পরস্পরকে দায়ী করছে। সীমান্তে সেনাদের গোলাগুলিতে গত সোমবার নয়জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। সেখানে মাত্র এক দিনে এত বেশি বেসামরিক প্রাণহানির ঘটনা এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে এটিই প্রথম।
ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গত মঙ্গলবার রাতব্যাপী লড়াইয়ে দুই বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ১৮ জন আহত হয়। দেশটির পুলিশের মহাপরিচালক কে. রাজেন্দ্র এ তথ্য দিয়েছেন। আর পাকিস্তানি অংশে ১৯ বছর বয়সী এক নারী মর্টার গোলার আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানান স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা শওকত আলী। এদিকে, পাকিস্তানি বাহিনীর বরাত দিয়ে ডন জানায়, পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর সীমান্তের কাছাকাছি শিয়ালকোটে মঙ্গলবার রাতে ভারতীয় বাহিনীর হামলায় অন্তত তিনজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছে।
ভারতের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র এস ডি গোসওয়ানি বলেন, তাঁদের অবস্থান লক্ষ্য করে পাকিস্তানি বাহিনী মঙ্গলবার রাতে হামলা চালায়। এতে ভারতের পক্ষ থেকেও পাল্টা জবাব দেওয়া হয়। অন্যদিকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর অভিযোগ, ভারত বিনা উসকানিতে হামলা চালিয়েছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, সীমান্ত লঙ্ঘন করে পাকিস্তান হামলা করলে ভারত সেটা বরদাশত করবে না।
ভারতীয় বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের ৬০টি অবস্থান এবং আশপাশের ৩৬টি গ্রাম লক্ষ্য করে পাকিস্তানি সেনারা গোলাবর্ষণ করছে। আর পাকিস্তানিদের ৭৩টি অবস্থান লক্ষ্য করে ভারতীয়রা মর্টার ও গুলি ছুড়ে ‘উপযুক্ত জবাব’ দেয়।
পতাকা বৈঠকের জন্য পাকিস্তানের তরফ থেকে মঙ্গলবার রাতে একাধিকবার প্রস্তাব দেওয়া হলেও ভারত তাতে সাড়া দেয়নি। ভারতীয় সূত্রগুলো জানায়, পাকিস্তানকে বলে দেওয়া হয়েছে, অস্ত্রবিরতির লঙ্ঘন এবং সমঝোতার আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না।
অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত হিমালয়ের কাশ্মীর অঞ্চলকে ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই নিজেদের বলে দাবি করে। এর দুটি বড় অংশ দুই দেশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখার (এলওসি) কাছাকাছি নিয়মিত দুই দেশের সেনাবাহিনীর লড়াই হয়। কাশ্মীরের ভারত-নিয়ন্ত্রিত অংশে বর্তমানে প্রায় পাঁচ লাখ ভারতীয় সেনা মোতায়েন রয়েছে।
‘সব ঠিক হয়ে যাবে’: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল সীমান্তে পাকিস্তানের অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘনের বিষয়ে বলেছেন, শিগগিরই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। গতকাল মোদি সেনাবাহিনীর প্রধান দলবীর সিং সুহাগসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেন। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সবকিছু শিগগিরই ঠিক হয়ে যাবে।
এর আগে ভারতের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, সেনাবাহিনীকে পরিস্থিতির ব্যাপারে যথাযথ ‘ব্যবস্থা নেওয়ার’ পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। ভারত পাকিস্তানকে সতর্ক করে দিয়ে এ-ও বলেছে, তারা সংঘাতের মাত্রা চড়াতে ভীত নয়।

No comments

Powered by Blogger.