তিন মেয়েসহ মাকে পুড়িয়ে হত্যায়- জাহাঙ্গীর এখনো গ্রেপ্তার হননি

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় তিন মেয়েসহ মাকে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলার মূল আসামি জাহাঙ্গীর আলমকে পুলিশ এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পুলিশের ভাষ্য, জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তারে এলাকায় চিরুনি অভিযান চলছে। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদে নতুন করে আরও দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। এর আগে এ ঘটনায় আরও দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।
মির্জাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শ্যামল কুমার দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, জাহাঙ্গীরের খালাতো ভাই বাদশা ও বন্ধু সুশান্তকে গতকাল বুধবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার হওয়া জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই হানিফ মিয়াকে (২২) আজ বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হবে। গত মঙ্গলবার রাতে মির্জাপুরের ইন্নত খাঁ চালা গ্রাম থেকে তাঁকে আটক করা হয়।
পুলিশের ভাষ্য, হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তারে এলাকায় চিরুনি অভিযান চলছে। এর আগে মঙ্গলবার রাতেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পেট্রল আনার কাজে ব্যবহৃত রিকশাটির চালক আলী হোসেন ও জাহাঙ্গীরের চাচি নাছিমা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আটক করে।

পবিত্র ঈদুল আজহার দিন গত সোমবার রাতে মির্জাপুরের সোহাগপুর গ্রামে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় মালয়েশিয়াপ্রবাসী মজিবর রহমানের স্ত্রী হাসনা বেগম (৩৫) এবং তাঁর তিন মেয়ে উপজেলার সোহাগপুর উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মনিরা আক্তার (১৪), বাকপ্রতিবন্ধী মীম আক্তার (১০) ও স্থানীয় ব্র্যাক স্কুলের নার্সারি শ্রেণির শিক্ষার্থী মলি আক্তারকে (৭)।
পুলিশ ও এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্যমতে, সোমবার রাতে মেয়েদের নিয়ে একতলা বাড়ির একটি কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন হাসনা বেগম। দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে প্রতিবেশীরা হাসনাদের বাড়ির বারান্দায় আগুন জ্বলতে দেখে। আগুন নেভানোর পর দেখা যায়, তিন মেয়েসহ হাসনা বেগম যে কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন, সেটার দরজা ভেতর ও বাইরে থেকে লাগানো। এলাকাবাসী দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখে, বিছানার ওপর পড়ে আছে চারজনের পুড়ে যাওয়া লাশ। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশগুলো উদ্ধার করেন।
হাসনা বেগমের পরিবারের অন্য সদস্য ও প্রতিবেশীদের অভিযোগ, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মনিরা আক্তারকে একই গ্রামের বাহার উদ্দিনের ছেলে ও সিঙ্গাপুরপ্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম সম্প্রতি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু এ প্রস্তাবে রাজি হননি মনিরার মা। এতে ক্ষুব্ধ ও প্রতিহিংসাপরায়ণ জাহাঙ্গীর আলম সহযোগীদের নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এ ঘটনায় হাসনা বেগমের ভাই মো. মোফাজ্জল হোসেন বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে মির্জাপুর থানায় মামলা করেন। মামলায় জাহাঙ্গীর আলমসহ ১০ জনকে আসামি করা হয়। ঘটনার পর থেকে জাহাঙ্গীর ও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরা পলাতক। তাঁর চার চাচার ঘরও তালাবদ্ধ। মঙ্গলবার সকাল থেকে বাড়িগুলোয় পুলিশের পাহারা বসানো হয়।

No comments

Powered by Blogger.