রাজপুত্রের জন্মদিনে...

প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক ও ছড়াকার সুকুমার বড়ূয়ার জন্ম ১৯৩৮ সালের ৫ জানুয়ারি; চট্টগ্রামের রাউজান থানার বিনাজুড়ি গ্রামে। তোমাদের ভালোবেসে তিনি লিখেছেন পাগলা ঘোড়া, এলোপাতাড়ি, নানা রঙের দিন, ঠিক আছে ঠিক আছে, চন্দনা রঞ্জনার ছড়া, লেজ আবিষ্কার ইত্যাদি বই। ছড়া নিয়ে খেলা করা এই মানুষটি বয়স নিয়েও বড্ড খেলতে পারেন। খেলতে খেলতে কাটিয়ে দিলেন ৭৬টি বছর। বয়সটা দেখে কেউ আবার কপালে হাত ঠেকিও না! ছড়ার এই রাজপুত্রের জন্য আসলে এটা তেমন কোনো বয়সই নয়। কী বলো, হু? তা আসছে ৫ জানুয়ারি প্রিয় এই ছড়াকারটার ৭৭ তম জন্মদিন। বিশেষ এই দিনকে সামনে রেখে তার সঙ্গে হয়ে গেল এক আড্ডা। ঘাসফড়িংয়ের পক্ষে আড্ডা জমিয়েছিলেন আশিক মুস্তাফা। চলো সেই আড্ডার কথাগুলোতে ঢুকে পড়ি...
ঘাসফড়িং : তোমার ছোটবেলা তো গ্রামে কেটেছে। গ্রামের সেই দিনগুলো কীভাবে কাটিয়েছিলে?
সুকুমার বড়ূয়া : আমি কিন্তু তোমাদের মতো অত বুদ্ধিমান ছিলাম না। বোকা-সোকা টাইপের ছিলাম। সাধাসিধে বলে একটা কথা আছে না; এই সাধাসিধেই আর কি! আবার হাবাগোবাও ছিলাম। সবাই শুধু কাজের ফুট-ফরমায়েশে আমায় খাটাতে চাইতো। ইশকুলে সহপাঠীরা মারলেও কিছু বলার সাহস পেতাম না।
ঘাসফড়িং : কেন, তোমার বাবা ছিলেন না?
সুকুমার বড়ূয়া : না, একদিন বাবা আমাকে বললেন, 'তোকে তো স্কুলে ভর্তি করতে হবে।' তো এই বলে আমায় স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেন। এর কিছুদিন পর তিনি কোথায় যেন নিরুদ্দেশ হয়ে যান। আর ফিরে আসেননি।
ঘাসফড়িং : তারপর?
সুকুমার বড়ূয়া : বাবা হারিয়ে যাওয়ার পর বাড়ি ছেড়ে আমি মামার বাড়ি চলে যাই। নতুন স্কুলে ভর্তি হই। মামি আমার নাম দিলেন 'সুকুমোল।' মামির দেওয়া সেই নামকে আমি পরে করেছি সুকুমার। তা ছাড়া সুনীল, অনীল, নোয়ামিয়া এবং বিলাতিসহ অনেক নাম ছিলো। গ্রামের মানুষরা এখনও বিলাতি বলে আমায়।
ঘাসফড়িং : তোমার স্কুলের কথা বলো তো?
সুকুমার বড়ূয়া : আমি তিনটা স্কুলে পড়েছি। তাও আড়াই ক্লাস। মামার বাড়ি ও দিদির বাড়ির স্কুলে পড়ে সবশেষে ভর্তি হয়েছি পশ্চিম বিনাজুড়ির সোনাইমুখ উচ্চ বিদ্যালয়ে। জানো, স্কুলে আমার অনেক বন্ধু ছিলো। তাদের ডাকতাম আঞ্চলিক ভাষায়। এই ধরো, সাহজানকে সাইজ্যা, খলিলকে খইল্যা_ এমন আর কী! তবে তোমরা আবার কাউকে এমন নামে ডেকো না। তখন না বুঝলেও এখন বুঝি; এমন নামে কাউকে ডাকা ঠিক নয়।
ঘাসফড়িং : তোমার প্রথম লেখা ছাপার কথা মনে পড়ে?
সুকুমার বড়ূয়া : হু পড়ে। আমার প্রথম লেখা ছাপা হওয়ার পর তো অনেকে বিশ্বাসই করলো না। সত্যিকথা বলতে কী, বাবাকে হারানোর কিছুদিন পর তো আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই। বাসা-বাড়িতে কাজ নিই। তারপর খুবই কষ্টে চলতে থাকে আমার জীবন। তখন আমি মসলা বাটতে বাটতে ছড়া নিয়ে চিন্তা করতাম। দুই লাইন মাথায় এলে হাত ধুয়ে তা লিখে আবার মসলা-মরিচ এসব বাটতাম। এমন ঘটনা আমার জীবনে অনেক হয়েছে। যা কখনও লেখা হয়নি। তো প্রথম লেখা ছাপা হওয়ার পর আমার মুনিব বাহ বাহ দিলেন। তিনিও খুব খুশি হন। আর আমার অনুভূতি তো প্রকাশ করার মতো না!
ঘাসফড়িং : তোমার প্রথম ছড়ার বইয়ের নাম তো 'পাগলা ঘোড়া'। এরপর থেকে তো অনেক বই বেরিয়েছে। কোন বইটা তোমার সবচেয়ে প্রিয়?
সুকুমার বড়ূয়া : চন্দনা রঞ্জনার ছড়া বইটি। আর আমার পড়া প্রিয় বইয়ের মধ্যে আছে_ পথের পাঁচালি, চাঁদের পাহাড়, ভোম্বল সরদার ইত্যাদি।
ঘাসফড়িং : হাসপাতাল ছেড়ে কোথাও যেতে মন চায়?
সুকুমার বড়ূয়া : হু, চায় তো। ইচ্ছে করে গ্রামের বাড়ি গিয়ে থাকি। সিলেটে বেড়াতেও ভালো লাগে। জানো, হাসপাতালে এক পিচ্চির সঙ্গে আমার ভাব হয়েছে। নাম-ঝুমুর। যা বুদ্ধি ওর! ডাকবো ওকে?
ঘাসফড়িং : ডাকো (তারপর ডাকা হয় ঝুমুর নামের পিচ্চিকে। বাপরে, যা গল্পবাজ পিচ্চিটা। আমাদের তো তার এক জীবনের সব গল্প শুনিয়ে দেয় মাত্র ৩০ মিনিটে। ফেরার সময় বলি,) ফড়িং বন্ধুদের জন্য কিছু বলবে?
সুকুমার বড়ূয়া : ওরা তো অনেক বুদ্ধিমান। ওদের কী আর বলবো। তবু বলি, তোমাদের চিন্তা করতে হবে বেশি। শুধু টিভি, ভিডিও গেমস, কম্পিউটারে পড়ে থাকলে চলবে না। বাস্তবতা নিয়ে, দেশ নিয়েও ছোট ছোট করে চিন্তা করা শিখতে হবে। শুধু চিন্তাই নয়, এর পাশাপাশি ভালো কাজের উদ্যোগও নিতে হবে।
ঘাসফড়িং : ঠিক আছে। আমরা ভালো কাজের উদ্যোগ নেবো। তুমি দোয়া করো। কেমন? এখন তোমার ওষুধ খাওয়ার সময় হয়েছে, তুমি ওষুধ খেয়ে নাও। যাওয়ার আগে তোমাকে জানিয়ে যাচ্ছি জন্মদিনের আগাম এত্তোগুলো শুভেচ্ছা। ভালো থেকো...।
সুকুমার বড়ূয়া : ধন্যবাদ। তোমাদেরও এত্তোএত্তো শুভেচ্ছা। অনেক অনেক ভালো থেকো সবাই।

No comments

Powered by Blogger.