কামাল মজুমদারের দুর্গে আঘাত হানতে চান এখলাস মোল্লা by আলতাব হোসেন

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৫ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনজন। আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদার, জাসদের সাইফুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এখলাস উদ্দিন মোল্লা। তাদের মধ্যে বর্তমানে মাঠে আছেন কামাল মজুমদার ও এখলাস উদ্দিন মোল্লা। নির্বাচনে কামাল মজুমদারের দুর্গে এবার আঘাত হানতে চান এখলাস মোল্লা। গত পাঁচ বছরে কামাল আহমেদ মজুমদার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য সমালোচিত হয়ে অনেকটা নড়বড়ে অবস্থায় পড়েছেন। এখলাস মোল্লা একই দলের লোক হওয়ার পাশাপাশি মিরপুরের আদি বাসিন্দা হওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও লড়াই জমিয়ে তুলছেন। একসময় তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এখলাস মোল্লার আরেক ভাই ঢাকা-১৬ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা। কাফরুল থানা ও মিরপুর থানার অংশ নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৫ আসনের ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৯ হাজার ৬০ জন। ১২৯টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে। গতবার এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদার এক লাখ ২০ হাজার ৭৮০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির প্রার্থী হামিদুল্লাহ খান। তিনি পেয়েছিলেন ৭৬ হাজার ৪৭২ ভোট।
মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমান এমপি কামাল আহমেদ মজুমদারকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলেও বিভিন্ন কারণে স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের একাংশ মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী মোল্লা পরিবারের এখলাস উদ্দিন মোল্লাকে সমর্থন দিয়েছেন। গত তিন মেয়াদ ধরে এ আসনে (মিরপুর-কাফরুল) নির্বাচিত হয়ে আসছেন কামাল আহমেদ মজুমদার। অসৌজন্যমূলক আচরণ ও ভর্তি বাণিজ্যের কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর সঙ্গে তার দূরত্ব দৃষ্টি হয়। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মোহনার চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ মজুমদার মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের প্রধান। ভর্তি বাণিজ্য নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির জন্য শেওড়াপাড়ায় প্রতিষ্ঠানের তিন নম্বর শাখায় স্বয়ং কামাল মজুমদারের রোষানলের শিকার হন এক নারী সাংবাদিক।
এলাকার প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে দূরত্বের সৃষ্টি হলেও তৃণমূল কর্মীদের কাছে অবশ্য কামাল মজুমদার আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ নেতা হিসেবেই পরিচিত। দলের যে কোনো কর্মসূচিতে তিনি অংশ নেন। নিজে মিছিলেও থাকেন।
কামাল মজুমদারের বিরুদ্ধে এবার লড়ছেন এখলাস উদ্দিন মোল্লা। তিনি মিরপুরের মোল্লা পরিবারের সন্তান। তার দাদা কুজরতউল্লা মোল্লা টানা ২৭ বছর মিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সে সময় মিরপুর এলাকা ছিল কেরানীগঞ্জ থানার অধীনে। কুজরতউল্লা মোল্লার মৃত্যুর পর পরিবারের রাজনীতির হাল ধরেন তার ছেলে হারুন অর রশিদ মোল্লা। তিনি মিরপুর পৌরসভার একাধিকবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। হারুন মোল্লা ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা, পঁচাত্তর-পরবর্তী দুর্দিনে মিরপুরে দলকে সংগঠিত করেন তিনিই। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে হারুন মোল্লার বদলে ড. কামাল হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। মরহুম হারুন মোল্লার দুই ছেলে এখলাস উদ্দিন মোল্লা ও ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা রাজনীতিতে সক্রিয়। এখলাস মোল্লার ছোট ভাই ইলিয়াস মোল্লা ঢাকা-১৬ আসনের এমপি।
মিরপুর-১০ নম্বর এলাকার ফল বিক্রেতা আমির হোসেন বলেন, নির্বাচন নিয়ে মানুষের আগ্রহ কম থাকলেও এ আসনে কামাল মজুমদার ও এখলাস মোল্লার মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। শেওড়াপাড়ার মুদি দোকানি শফিকুল ইসলাম বলেন, অন্যবারের মতো এবার কোনো আমেজ নেই। প্রার্থীদের পক্ষে হাত মিলিয়ে যাচ্ছেন নেতারা। এ আসনে কামাল মজুমদার ও এখলাস মোল্লার মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী এখলাস উদ্দিন মোল্লা তার পারিবারিক ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরে বলেন, আমাদের পরিবারের ইতিহাস হচ্ছে মানুষের পাশে থেকে সেবা করা। তিনি বলেন, মিরপুরে আমাদের পূর্বপুরুষের বসবাস। মিরপুরে রাজনীতি করে আমরা গুলশান-বনানীতে গিয়ে বাস করি না।
এদিকে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদারও। সমকালকে তিনি বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামসহ যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে এলাকার মানুষ দেখতে পায় আমাকে। নির্বাচনী এলাকায় স্কুল-কলেজের উন্নয়ন, শিক্ষা বিস্তারে কী ভূমিকা রেখেছি_ এলাকার মানুষ তা জানে। কবরস্থানসহ এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়নেরও কথা তুলে ধরেন তিনি। কামাল মজুমদার দাবি করেন, প্রতিদ্বন্দ্বীদের জামানতও বাতিল হয়ে যাবে। নির্বাচন জাঁকজমকপূর্ণ হবে বলে দাবি করেন কামাল আহমেদ মজুমদার।

No comments

Powered by Blogger.