বিটুমিন সরবরাহ ও দাম নির্ধারণ নিয়ে অভিযোগ by সোহেল মামুন

প্রধান উপকরণ বিটুমিনের সরবরাহ ও দাম নিয়ে কারসাজির অভিযোগ করেছেন ঠিকাদাররা। তারা বলছেন, বিটুমিন সংকটের কারণে নতুন সড়ক নির্মাণ, মেরামত ও আধুনিকায়নের কাজ বন্ধ হতে চলেছে। একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা কারসাজি করে বিটুমিনের দাম বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ এনেছেন তারা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনে (বিপিসি) লিখিতভাবেও অভিযোগ করা হয়েছে। গত কয়েক দিন ডজনখানেক অভিযোগ জমা পড়েছে। এদিকে দাহ্য পদার্থ হওয়ায় হরতাল-অবরোধে বিটুমিন পরিবহন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। লরি চালকরা বিটুমিন পরিবহন করতে চাচ্ছেন না। বিপিসির চেয়ারম্যান মো. ইউনুস বলেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বিটুমিন সরবরাহ করে বিপিসি। প্রতিষ্ঠানটির চট্টগ্রাম কার্যালয় থেকে এ বিটুমিন সংগ্রহ করতে হয়। এ কার্যালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারসাজির কারণে ঠিকাদাররা চাহিদামতো বিটুমিন পাচ্ছেন না। বিপিসির কাছ থেকে বিটুমিন কিনলে প্রতি ব্যারেলের (১৫০ কেজি) দাম পড়ে ৮ হাজার ৫০০ টাকা। বাইরে থেকে কিনতে গেলে দাম পড়ে সাড়ে ৯ থেকে সাড়ে ১০ হাজার টাকা। এক ধরনের অসাধু ব্যবসায়ী বিপিসির কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ভুয়া ওয়ার্কঅর্ডার দেখিয়ে বিটুমিন তুলে বাইরে বিক্রি করে দেন। বাইরে থেকে অতিরিক্ত দাম দিয়ে বিটুমিন কিনে রাস্তার কাজ করতে গেলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হয় ঠিকাদারদের। আবার কয়েক মাস ধরে হরতাল-অবরোধ চলায় কোনো গাড়িই চট্টগ্রাম থেকে বিটুমিন বহন করতে রাজি হচ্ছে না। অতীতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিটুমিন কেনার সুযোগ থাকলেও গত এক বছর সেটা বন্ধ রেখেছে বিপিসি। একমাত্র চট্টগ্রাম থেকেই বিটুমিন কিনতে হয়। ফলে ঠিকাদাররা চাহিদা অনুযায়ী বিটুমিন পাচ্ছেন না।
বিপিসির কাছে অভিযোগ করা ৩৭ বীরউত্তম সিআর দত্ত রোডের এসএম রহমান ইন্টারন্যাশনাল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা ১০ হাজার ড্রাম বিটুমিনের জন্য বিপিসির কাছে আবেদন করেছি। বারবার তাগাদা দিয়েও বিটুমিন পাচ্ছি না। ধানমণ্ডির ১০/এ নম্বর সড়কের ২৪৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের মান্নান এন্টারপ্রাইজ নামের আরেকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, 'এক মাস হলো ৮ হাজার ড্রাম বিটুমিনের চাহিদাপত্র দেওয়া হলেও সরবরাহ করা হয়নি। পরে বিপিসির এক কর্মচারী ব্যারেলপ্রতি ৩০০ টাকা বেশি দিলেই বিটুমিনের ব্যবস্থা করে দেবে বলে আমাকে জানায়।'
ঢাকা সিটি করপোরেশনের ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খান বলেন, ১৫ হাজার ড্রাম বিটুমিনের জন্য আবেদন করেছি। আমাকে এক ড্রামও বিটুমিন দেওয়া হয়নি। আমাকে বলা হয়েছে, ব্যারেলপ্রতি ২০০ টাকা বেশি দিলে বিটুমিন দেওয়া হবে। সেটা করতে গেলে আমাকে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ গুনতে হবে।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বছরে বর্তমানে বিটুমিনের চাহিদা দেড় লাখ টন। এর মধ্যে ৭০ হাজার টন বিটুমিন আমদানি করে বিপিসি। বাকিটা বেসরকারিভাবে আমদানি করা হয়। দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বেসরকারি আমদানিকারকরাও প্রয়োজনীয় বিটুমিন আমদানি করছেন না। বিপিসি আগে কয়েকটি কোম্পানির মাধ্যমে বিটুমিন সরবরাহ করত। দেশের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি শহর থেকে ঠিকাদাররা বিটুমিন সংগ্রহ করতে পারতেন। ওইসব কোম্পানির অসাধু কর্মকর্তারা যোগসাজশ করে বাইরে বিটুমিন বিক্রি করে দেওয়ায় গত এক বছর তাদের মাধ্যমে বিটুমিন সরবরাহ বন্ধ। ফলে এখন বিটুমিনের একমাত্র উৎসস্থল চট্টগ্রামের বিপিসি কার্যালয়।
চট্টগ্রামে বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) ইউসুফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, 'তিনি কাজে যোগ দেওয়ার আগে বিটুমিন নিয়ে অনেক কারসাজি হয়েছে। সে কারণে কোম্পানির মাধ্যমে বিটুমিন সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ভুয়া ওয়ার্কঅর্ডারে বিটুমিন দেওয়া বন্ধ করেছি। এখানে বিটুমিনের কোনো ঘাটতি নেই। এত মজুদ বেড়েছে যে, বিটুমিন রিফাইনারিং বন্ধ করে দিতে হয়েছে। যাদের কাগজপত্র ঠিক আছে তারা বিটুমিন পাবে। যারা ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে বিটুমিন নিতে চায়, তারা এসব ছড়াচ্ছে।'

No comments

Powered by Blogger.