'ব্যাংকক দখল করো'

থাইল্যান্ডে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা নিশ্চিত করেছে, এ মাসের মাঝামাঝি সরকার পতন আন্দোলনে দেশটির প্রধান অর্থনৈতিক খাত পর্যটন খাত, বিমানবন্দর ও গণপরিবহন ব্যবস্থার কোনো ক্ষতি করা হবে না। এগুলো আন্দোলনের লক্ষ্যবস্তু হবে না। দেশটিতে বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার পদত্যাগ চায়। ১৩ জানুয়ারি থেকে তারা ব্যাংকক দখল করার ঘোষণা দিয়েছে। 'অপারেশন আকুপাই ব্যাংকক' চলাকালে কোনো গণপরিবহন কিংবা বিমানবন্দর, বিমান চলাচল, বাস-ট্রেন, বিটিএস স্কাইট্রেনস, এমআরটি আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেন এবং নৌপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক থাকবে বলে আন্দোলনকারীদের ইংরেজি ফেসবুক পেজে ঘোষণা করা হয়েছে। বিরোধীরা ব্যাংকক দখলের দৃঢ়প্রত্যয় ঘোষণা করে বলেছে, রাজধানীতে তারা সরকারি কর্মকর্তাদের অফিসে যেতে দেবে না। তারা প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীদের কার্যালয় এবং বাসভবনসহ সরকারি অফিসগুলোর পানি-বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেবে বলে জানিয়েছে। এ ছাড়া তারা রোববার থেকে ব্যাংকক দখলের লক্ষ্যে বিক্ষোভ শুরু করবে। বিক্ষোভকারীদের মুখপাত্র আকানাত প্রমফান জানিয়েছেন, ব্যাংকক দখল চলাকালে হোটেল-রেস্তোরাঁসমূহ খোলা থাকবে। তিনি বলেন, পর্যটকদের কোনো ভয় নেই। যদিও ইতিমধ্যে দেশটিতে পর্যটকের সংখ্যা কমে গেছে। থাই মুদ্রার মানও কমেছে। এর আগে ২০০৮ সালে বিক্ষোভের কারণে ব্যাংকক বিমানবন্দরে হাজার হাজার যাত্রী আটকা পড়ে। ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে ২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা। কিন্তু বিরোধীরা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে ইংলাকের পদত্যাগ ও অন্তর্বর্তী পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা পর্যন্ত আন্দোলনের ঘোষণা দেয়। এ পরিস্থিতিতে দেশটিতে গৃহযুদ্ধোর আশঙ্কা করা হচ্ছে। উত্তর থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথইস্ট এশিয়াবিষয়ক ইনস্টিটিউটের পরিচালক পল চেম্বার্স বলেন, আমরা একটি গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পেঁৗছে গেছি। এদিকে থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে গত দু'দশক ধরে চলা সহিসংতা বন্ধে যে শান্তি আলোচনা শুরু হয়েছিল, তা অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে। ফলে সংকট সমাধানে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। দক্ষিণাঞ্চলের সহিংসতার মূল কারণ জাতিগত মালয় মুসলিমদের প্রতি অবজ্ঞা এবং স্থানীয় ভাষা, ধর্ম ও প্রথাকে যথাযথ শ্রদ্ধা না দেখানো। দু'দশক ধরে চলা মুসলিম নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় নিত্যদিনের সহিংসতায় ৫ হাজার ৯০০র বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিনের এ সহিসংতা ও অস্থিরতা ব্যংককের মূল কেন্দ্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও তেমন কোনো গুরুত্ব পায়নি। আজ ৪ জানুয়ারি সেনা অস্ত্র ভাণ্ডারে বিদ্রোহীদের বড়ো ধরনের অভিযানের দশম বার্ষিকী। ২০০৪ সালের এ দিনে বিদ্রোহীরা এ অভিযান চালায়। সে থেকে সহিংসতার শুরু হিসাব করা হয়। কিন্তু ওই অঞ্চলের সংঘর্ষের শুরু মূলত সত্তরের শেষ ও আশির দশকের প্রথম দিকে।
২০০৪ সালের এপ্রিলে সেনাবাহিনী ওই অঞ্চলের একটি মসজিদে হামলা চালায়। এতে ৩২ সন্দেহভাজন জঙ্গি প্রাণ হারায়। এ ঘটনার পর অক্টোবরে ৮৫ মুসলিম নিহত হয়। সামরিক ট্রাকে গাদাগাদি করে নেওয়ার সময়ে তাদের অধিকাংশই দম বন্ধ হয়ে মারা যায়। এসব ঘটনার পর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের পাত্তানি, ইয়ালা ও নাথারিওয়াতে মুসলিম গেরিলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ, সহিংসতা চলছে। ওই অঞ্চলে হাজার হাজার আধাসামরিক বাহিনীসহ মোতায়েন রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার সেনা। তারা স্থানীয় গ্রামবাসী, শিক্ষক, ভিক্ষুসহ যারা ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। গত বছর ওই এলাকায় সহিংসতা বন্ধের লক্ষ্যে দফায় দফায় শান্তি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ফলে সবার মাঝে এক ধরনের আশা জাগে, শিগগিরই সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান হচ্ছে।
শান্তি আলোচনাকালে বারিসান রিভুলুসি ন্যাশনাল (বিআরএন) ৫ দফার প্রস্তাব দেয়। তারা বর্তমানে সরকারের কাছ থেকে এসব প্রস্তাবের উত্তর আশা করছে এবং একই সঙ্গে সহিংসতা অব্যাহত রেখেছে। রাজধানীতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কারণে দক্ষিণাঞ্চলের এ শান্তি আলোচনা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান পারাডম পাত্তানাতাবুত বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলে শান্তি আলোচনা জানুয়ারিতে শুরু হতে পারে। কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক সূত্র বলছে, জানুয়ারিতে শান্তি আলোচনা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

No comments

Powered by Blogger.