আওয়ামী লীগ প্রার্থীর চ্যালেঞ্জ 'ঘরের লোক'

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জ করে নির্বাচনে 'স্বতন্ত্র প্রার্থী'র হিসেবে অংশগ্রহণ করছেন দলের অনেক নেতাই। এতে বিভিন্ন স্থানে ভোটাররা মনে করছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপক্ষে ঘরের লোকরাই প্রার্থী হয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধি, সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর;
বাগেরহাট :বাগেরহাটের ৪টি আসনের মধ্যে একটি আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জেলার মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলা নিয়ে গঠিত বাগেরহাট-৪ আসন। এ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান এমপি ডা. মোজাম্মেল হোসেন ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ড. আবদুর রহিম খান এবং মোরেলগঞ্জ পৌরসভা মেয়র মনিরুল হক তালুকদার একই দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তবে বিরোধীদলীয় জোটের কোনো প্রার্থী অংশ না নেওয়ায় ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
নওগাঁ :নওগাঁর ছয়টি আসনের মধ্যে তিনটিতে একক প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হলেও অন্য তিন আসনে অনুষ্ঠিত হবে ভোট। ওই সব আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে ভোটযুদ্ধে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছি) আসনে প্রার্থী হয়েছেন দু'জন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী (নৌকা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিম উদ্দীন তরফদার (কলস)।
নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনে প্রার্থী হয়েছেন চারজন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য ইমাজ উদ্দীন প্রামাণিক (নৌকা), জাতীয় পার্টি (এরশাদ) মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট এনামুল হক (লাঙ্গল), আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর (জেপি) মনোনীত প্রার্থী সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুর রহমান বকুল (সাইকেল) ও স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার আফজাল হোসেন (উড়োজাহাজ)। ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নৌকা ও সাইকেলের ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে। তবে লাঙ্গল ও উড়োজাহাজের পোস্টার চোখে পড়েনি।
নওগাঁ-৫ (সদর) আসনে ভোট করতে মাঠে নেমেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুল মালেক (নৌকা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন যুবলীগের সাবেক সভাপতি আলহাজ রফিকুল ইসলাম (কলস)।
জেলার তিনটি সংসদীয় আসনের মধ্যে দুটিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যারা, তারাও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ফলে এখানেও রয়েছে দলে বিভক্তি।

নড়াইল :নড়াইল-২ আসনে ১৪ দলের প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শেখ হাফিজুর রহমানের নৌকা প্রতীকের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও নড়াইল পৌরসভার সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেনের কলস মার্কার লড়াই জমে উঠেছে। তাছাড়া এখানে জামায়াত-বিএনপির তেমন সাংগঠনিক অবস্থা ও সহিংসতা না থাকায় দুই প্রার্থী বেশ মাঠ গরম করে রেখেছেন।
এ আসনটি নড়াইল পৌরসভাসহ সদর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও লোহাগড়া পৌরসভাসহ ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনে প্রথমে জেলা আওয়ামী লীগ মনোনীত আসিফুর রহমান বাপ্পীকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও শেষ মুহূর্তে ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছাড় দিতে হয়।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী চার বার নড়াইল পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র সোহরাব হোসেনের সঙ্গে দলের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের একটি অংশ প্রত্যক্ষভাবে কাজ করায় এখানে নৌকা ও কলস প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে বলে সবাই মনে করছেন। সোহরাব হোসেনের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আজহারুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সিকদার, মাহবুবুর রহমান বাচ্চু, অ্যাডভোকেট উত্তম ঘোষ, রেজাউল বিশ্বাসসহ সহযোগী সংগঠনের একটি অংশ এবং সাবেক ও বর্তমান কয়েক ইউপি চেয়ারম্যান রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ :নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে মাত্র একটি আসনে ভোট গ্রহণ হবে। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় এরই মধ্যে চারটি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের দু'জন ও জাতীয় পার্টির দু'জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে গেছেন। নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগেরসহ তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সাংসদ গাজী গোলাম দস্তগীর, জাতীয় পার্টির জয়নাল আবেদীন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. শওকত আলী।
রূপগঞ্জে নির্বাচনটি মূলত হবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গাজীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ডা. শওকতের লড়াই হবে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. শওকতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটি বিশাল অংশ থাকায় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর জয় অতটা সহজ হবে না বলে মনে করেছেন স্থানীয় ভোটাররা।
তবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সিনিয়র নেতাকর্মীরা মনে করেন, মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গাজীর সঙ্গে ডা. শওকতের হলেও নির্বাচনে গাজীই জয়লাভ করতে পারেন।
গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) :গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান এমপি আলহাজ প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী। অন্যদিকে মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ। ফলে এখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে নীরবে চলছে গৃহদাহ। কারণ আওয়ামী লীগের একটি অংশ কাজ করছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে।
বাঘা (রাজশাহী) :রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বর্তমান ও সাবেক দুই সংসদ সদস্য। দুই প্রার্থীর একজন আওয়ামী লীগ দলীয় বর্তমান সাংসদ শাহরিয়ার আলম (নৌকা), অন্যজন একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সাংসদ আলহাজ রায়হানুল হক রায়হান (প্রজাপতি)। দলের দুই প্রার্থী নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরা। বাঘা পৌর মেয়র আক্কাছ আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ঠিকাদার আজিজুল আলম, লে. কর্নেল (অব.) রমজান আলী, চর এলাকার নেতা আজিজুল আযম, যুবলীগ নেতা বাবুল ইসলামসহ দলের বড় একটি অংশ প্রচারণায় কাজ করছেন দলীয় প্রার্থী শাহরিয়ার আলমের পক্ষে। নির্বাচনী প্রচারে মাঠে নেমেছেন জাসদ (রব) নেতা মুক্তিযোদ্ধা শফিউর রহমান শফি, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আমানুল হাসান দুদু, আবদুল কুদ্দুস সরকার, কামাল হোসেনসহ কিছু নেতাকর্মী।
ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) : ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনে এবার ১৪ দলীয় মহাজোটের প্রার্থীর বিপক্ষে লড়ছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী এক প্রার্থী। এ আসনে দুই প্রার্থীই নির্বাচনে জয়ী হতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন। শেষ সময়ে প্রচার-প্রচারণার হিসাব-নিকাশ চলছে। এ আসনে মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এমএ হান্নান এবং আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সমঝোতা হওয়ার পর এ আসনে প্রার্থী হন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এমএ হান্নান। তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রিয়ভাজন হওয়ায় এ আসনে মহাজোটের আসন ভাগাভাগিতে মনোনয়ন পান। তিনি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্দেশে ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনে আওয়ামী লীগ সাংসদ রেজা আলী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। এতে এমএ হান্নানের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ ছিল। তবে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেন। পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্দেশে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার না করে আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

No comments

Powered by Blogger.