দেশবাসী তাকিয়ে আছে বঙ্গভবনের দিকে by মোঃ মাহমুদুর রহমান
জাতীয় জীবনের বর্তমান সহিংসতা, অস্থিরতা ও
অনিশ্চয়তায় কে আমাদের সাহায্য করতে পারে? রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, সুশীল
সমাজ, সাধারণ মানুষ অথবা বিদেশী কূটনীতিকরা? আসলে তারা সবাই আমাদের সাহায্য
করতে পারে যার যার দায়িত্ব থেকে। আমরা তথা সাধারণ মানুষের উন্নয়ন, শান্তি ও
স্বস্তি নিশ্চিত করার দায়িত্ব মূলত রাজনীতিকদের ওপর বর্তায়। দেশ ও জনগণের
সেবা করার অঙ্গীকারের ভিত্তিতে রাজনীতিকরা রাজনীতিতে এলেও বাস্তব অবস্থা
ভিন্ন। স্বাধীনতার ৪২ বছরের ইতিহাসে রাজনীতি আমাদের কিছুই দেয়নি বললে ভুল
হবে। শিক্ষায় অগ্রগতি, অবকাঠামোর উন্নয়ন ও দারিদ্র্যকে পেছনে ফেলে আমরা
অনেক দূর এগিয়ে এসেছি এ রাজনীতিকদের নেতৃত্বেই। যদিও সাধারণ মানুষের
অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্তরিক প্রচেষ্টাকে এক্ষেত্রে খাটো করে দেখার সুযোগ
নেই। অনেকেই মনে করেন, সাধারণ মানুষই এ উন্নয়নের মূল দাবিদার। সবচেয়ে বড়
কথা, আমাদের স্বাধীনতা সাধারণ মানুষের সম্মিলিত অংশগ্রহণে রাজনীতিকদের
নেতৃত্বেই এসেছে। পূর্ববর্তী রাজনীতিকদের কারণে দেশটা আমরা পেয়েছি। শীর্ষ
পর্যায়ে না থাকলেও তাদের অনেকেই আজও রাজনীতিতে সক্রিয়। দেশের স্বাধীনতা
সংগ্রামে অবদান রাখা রাজনীতিকদের জীবদ্দশায় মানুষ আজ আতংকিত। বর্তমান হিংসা
ও বিভেদের রাজনীতি চূড়ান্তভাবে আমাদের অস্তিত্ব সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে
কি-না, জনগণের চোখে-মুখে আজ এ জিজ্ঞাসা।
এই হতাশাজনক অবস্থার জন্য দায়ী মূলত আমাদের প্রতিহিংসাপরায়ণ অগণতান্ত্রিক রাজনীতি। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় নিয়ে সবাই ভাবছেন। রাজনীতির বাইরে এর কোনো সমাধান আছে কি-না খুঁজে দেখছেন সবাই। আসলে রাজনীতির সমস্যা রাজনীতিকদেরই সমাধান করতে হয়। অন্যদের সহযোগিতা ইতিবাচক ফল প্রদানে সহায়ক হয়, তবে সরাসরি হস্তক্ষেপ সাময়িক শান্তি নিয়ে এলেও দীর্ঘমেয়াদে ভালো কিছু দিতে পারে না। অনেকের মতে, শরীরে স্বাভাবিক ওষুধে কাজ না হলে যেভাবে অনেক সময় সার্জারির দ্বারস্থ হতে হয়, তেমনি আমাদের মতো দেশে মাঝে মাঝে রাজনীতির বাইরের শক্তির হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়ে। আমরা সম্ভবত এরকম একটি জায়গায় অবস্থান করছি বলে কেউ কেউ মনে করছেন। বিদেশী কূটনীতিকরা চেষ্টা করছেন অনেকদিন থেকে। কিন্তু কোনো দৃশ্যমান রেজাল্ট জনগণ দেখতে পাচ্ছে না। তবে বিদেশীদের সহযোগিতা গ্রহণের আগে সবাইকে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, বিদেশীরা সব সময় তাদের নিজ নিজ দেশের স্বার্থ দেখবে সর্বাগ্রে। বাংলাদেশের স্বার্থের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব আমাদের রাজনীতিকদেরই। এক্ষেত্রে তারা কে কতটুকু দক্ষতা ও দেশপ্রেমের পরিচয় দিতে পারছেন, তা বিচারের দায়িত্ব জনগণের।
ব্যবসায়ী, শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী তথা সুশীল সমাজের দায়িত্বও কম নয়। রাজনৈতিক অচলাবস্থার ক্ষেত্রে বিদেশী কূটনীতিক ও সামরিক বাহিনীর চেয়ে এই শ্রেণীর সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি কাম্য। রাজনীতির বাইরের মানুষ হিসেবে এরা সংকটের সময়ে জনগণের কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করতে পারেন। ব্যক্তিগত লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষভাবে রাজনীতিকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করলে সত্যি সত্যি একটা সমাধানে পৌঁছা খুব কষ্টকর হওয়ার কথা নয়। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, সর্বগ্রাসী রাজনীতি আমাদের সব শ্রেণী-পেশার মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। তাই কোনো ব্যবসায়ীর নাম বললে প্রথমেই সবাই চিন্তা করে তিনি কোন দলের সমর্থক। এভাবে শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের সবাইকে আমরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে ফেলি। এখন যে কোনো সংকটে মধ্যস্থতা করার মতো কাউকে দেশে খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাই স্যার নিনিয়ান, বান কি মুনের প্রতিনিধি, রবার্ট ও ব্ল্যাক কিংবা নিশা দেশাই বিসওয়ালকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসতে হয়। আমরা তাদের কাছ থেকে সুবোধ বালকের মতো শুনি কী করতে হবে, কিভাবে চলতে হবে। এর জন্য শুধু রাজনীতিকদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমাদের পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীরাও দায়ী। রাজনীতির উচ্ছিষ্ট ভোগের জন্য এই শ্রেণীর অনেকেই যেভাবে লালায়িত থাকেন, তা দেখলে যে কারও লজ্জা পাওয়ার কথা। তাদের অন্ধ দলপ্রীতি ও নেতানেত্রীদের স্তুতির কারণে অনেকের ভাগ্যে উপদেষ্টা, ব্যাংকের পরিচালকসহ বিভিন্ন পর্যায়ে নানা পদ-পদবি জোটে। এতে দুর্বল চিত্তের অনেকেই এ লাইনে অগ্রসর হয়ে নিজের আখের গোছানোর ফন্দি আঁটেন। আবার অনেকে অতি নিরপেক্ষ সাজতে গিয়ে সত্য প্রকাশে ভীত হয়ে পড়েন। যেমন- আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো অপকর্মের কথা বলতে বাধ্য হলে সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি সরকারের একই ধরনের অপকর্মের উদাহরণ টেনে এনে ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করেন। একইভাবে বর্তমান হরতাল-অবরোধে মানুষ হত্যার কথা বলতে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বলতে হয় আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকাবস্থায় কিভাবে আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা করেছিল। এতে অপরাধগুলোকে এক ধরনের জায়েজ বা হালকা করার চেষ্টা থাকে, হয়তো তাদের অনিচ্ছায়। এরকম ভারসাম্য রক্ষা না করেও উপায় নেই। যারা সম্পূর্ণ সত্য কথা বলছেন, তাদের অন্য দলের সমর্থক বিবেচনা করে নাজেহাল করা হচ্ছে। পরিবারসহ নিজের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে দেশের জন্য কাজ করার মানুষ সত্যি কম।
তবে একেবারে যে নেই তা বলা যাবে না। অনেকেই বার্ন ইউনিটে অগ্নিদগ্ধদের দেখে যেভাবে বিরোধী দলের সমালোচনা করছেন, একইভাবে সরকারের অনড় অবস্থান, একদলীয় নির্বাচনের চেষ্টা ও পুলিশের বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধেও কথা বলছেন। কিন্তু কোনো পক্ষই কথা শুনছে না। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সুশীল সমাজের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বঙ্গভবনের বাইরে এসে ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন হলে গণতন্ত্র বিপর্যস্ত হবে বলে রাষ্ট্রপতিকে বলেছেন। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতির কিছু করার না থাকলেও রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে অনানুষ্ঠানিক উদ্যোগ নিয়ে জাতিকে দীর্ঘমেয়াদি সংকটের হাত থেকে রক্ষা করবেন বলে সবাই আশা করছেন। যদিও এর আগে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে এরকম উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। তাই এখন রাষ্ট্রপতি কী করতে পারবেন বা করবেন, তা নিয়ে মানুষ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছে। কিন্তু কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে আসতে হবে। দেশকে এভাবে নৈরাজ্যের হাতে ছেড়ে দেয়া যায় না। আজ মানুষের জীবন-জীবিকা ও গণতন্ত্র হুমকির সম্মুখীন। দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচিতে আগের মতোই সহিংসতা চলছে। এতে রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও প্রাণ হারাচ্ছেন। কারও মৃত্যুই কোনো সুস্থ বিবেকবান মানুষের কাম্য হতে পারে না। এ সংঘাতের মাধ্যমে কোন পক্ষের কী অর্জন হচ্ছে জনগণের কাছে তা পরিষ্কার না হলেও দেশ যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেটা কারও বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। মানুষ খুঁজে পাচ্ছে না কোনো আশ্রয়, কোনো অভিভাবক। এ অবস্থায় মানুষ তাকিয়ে আছে রাষ্ট্রপতির দিকে।
প্রশ্ন হচ্ছে, সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার কথা বলে রাষ্ট্রপতি কি চুপ করে থাকবেন? নাকি রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে বিবেকের তাড়নায় সমঝোতার উদ্যোগ নেবেন? অন্য যে কোনো পক্ষের হস্তক্ষেপ বা উদ্যোগের চেয়ে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ গণতন্ত্রের জন্য সহায়ক হবে। তাই ১৬ কোটি মানুষের ৩২ কোটি চোখ এখন বঙ্গভবনের দিকে। এই চোখে শুধু হতাশার চিহ্ন থাকবে, না আশার আলো ফুটে উঠবে, তা রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ নেয়া ও তাতে দুই পক্ষের ইতিবাচক সাড়া দেয়া না-দেয়ার ওপর নির্ভর করছে।
মোঃ মাহমুদুর রহমান : ব্যাংকার
এই হতাশাজনক অবস্থার জন্য দায়ী মূলত আমাদের প্রতিহিংসাপরায়ণ অগণতান্ত্রিক রাজনীতি। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় নিয়ে সবাই ভাবছেন। রাজনীতির বাইরে এর কোনো সমাধান আছে কি-না খুঁজে দেখছেন সবাই। আসলে রাজনীতির সমস্যা রাজনীতিকদেরই সমাধান করতে হয়। অন্যদের সহযোগিতা ইতিবাচক ফল প্রদানে সহায়ক হয়, তবে সরাসরি হস্তক্ষেপ সাময়িক শান্তি নিয়ে এলেও দীর্ঘমেয়াদে ভালো কিছু দিতে পারে না। অনেকের মতে, শরীরে স্বাভাবিক ওষুধে কাজ না হলে যেভাবে অনেক সময় সার্জারির দ্বারস্থ হতে হয়, তেমনি আমাদের মতো দেশে মাঝে মাঝে রাজনীতির বাইরের শক্তির হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়ে। আমরা সম্ভবত এরকম একটি জায়গায় অবস্থান করছি বলে কেউ কেউ মনে করছেন। বিদেশী কূটনীতিকরা চেষ্টা করছেন অনেকদিন থেকে। কিন্তু কোনো দৃশ্যমান রেজাল্ট জনগণ দেখতে পাচ্ছে না। তবে বিদেশীদের সহযোগিতা গ্রহণের আগে সবাইকে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, বিদেশীরা সব সময় তাদের নিজ নিজ দেশের স্বার্থ দেখবে সর্বাগ্রে। বাংলাদেশের স্বার্থের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব আমাদের রাজনীতিকদেরই। এক্ষেত্রে তারা কে কতটুকু দক্ষতা ও দেশপ্রেমের পরিচয় দিতে পারছেন, তা বিচারের দায়িত্ব জনগণের।
ব্যবসায়ী, শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী তথা সুশীল সমাজের দায়িত্বও কম নয়। রাজনৈতিক অচলাবস্থার ক্ষেত্রে বিদেশী কূটনীতিক ও সামরিক বাহিনীর চেয়ে এই শ্রেণীর সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি কাম্য। রাজনীতির বাইরের মানুষ হিসেবে এরা সংকটের সময়ে জনগণের কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করতে পারেন। ব্যক্তিগত লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষভাবে রাজনীতিকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করলে সত্যি সত্যি একটা সমাধানে পৌঁছা খুব কষ্টকর হওয়ার কথা নয়। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, সর্বগ্রাসী রাজনীতি আমাদের সব শ্রেণী-পেশার মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। তাই কোনো ব্যবসায়ীর নাম বললে প্রথমেই সবাই চিন্তা করে তিনি কোন দলের সমর্থক। এভাবে শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের সবাইকে আমরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে ফেলি। এখন যে কোনো সংকটে মধ্যস্থতা করার মতো কাউকে দেশে খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাই স্যার নিনিয়ান, বান কি মুনের প্রতিনিধি, রবার্ট ও ব্ল্যাক কিংবা নিশা দেশাই বিসওয়ালকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসতে হয়। আমরা তাদের কাছ থেকে সুবোধ বালকের মতো শুনি কী করতে হবে, কিভাবে চলতে হবে। এর জন্য শুধু রাজনীতিকদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমাদের পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীরাও দায়ী। রাজনীতির উচ্ছিষ্ট ভোগের জন্য এই শ্রেণীর অনেকেই যেভাবে লালায়িত থাকেন, তা দেখলে যে কারও লজ্জা পাওয়ার কথা। তাদের অন্ধ দলপ্রীতি ও নেতানেত্রীদের স্তুতির কারণে অনেকের ভাগ্যে উপদেষ্টা, ব্যাংকের পরিচালকসহ বিভিন্ন পর্যায়ে নানা পদ-পদবি জোটে। এতে দুর্বল চিত্তের অনেকেই এ লাইনে অগ্রসর হয়ে নিজের আখের গোছানোর ফন্দি আঁটেন। আবার অনেকে অতি নিরপেক্ষ সাজতে গিয়ে সত্য প্রকাশে ভীত হয়ে পড়েন। যেমন- আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো অপকর্মের কথা বলতে বাধ্য হলে সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি সরকারের একই ধরনের অপকর্মের উদাহরণ টেনে এনে ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করেন। একইভাবে বর্তমান হরতাল-অবরোধে মানুষ হত্যার কথা বলতে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বলতে হয় আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকাবস্থায় কিভাবে আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা করেছিল। এতে অপরাধগুলোকে এক ধরনের জায়েজ বা হালকা করার চেষ্টা থাকে, হয়তো তাদের অনিচ্ছায়। এরকম ভারসাম্য রক্ষা না করেও উপায় নেই। যারা সম্পূর্ণ সত্য কথা বলছেন, তাদের অন্য দলের সমর্থক বিবেচনা করে নাজেহাল করা হচ্ছে। পরিবারসহ নিজের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে দেশের জন্য কাজ করার মানুষ সত্যি কম।
তবে একেবারে যে নেই তা বলা যাবে না। অনেকেই বার্ন ইউনিটে অগ্নিদগ্ধদের দেখে যেভাবে বিরোধী দলের সমালোচনা করছেন, একইভাবে সরকারের অনড় অবস্থান, একদলীয় নির্বাচনের চেষ্টা ও পুলিশের বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধেও কথা বলছেন। কিন্তু কোনো পক্ষই কথা শুনছে না। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সুশীল সমাজের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বঙ্গভবনের বাইরে এসে ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন হলে গণতন্ত্র বিপর্যস্ত হবে বলে রাষ্ট্রপতিকে বলেছেন। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতির কিছু করার না থাকলেও রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে অনানুষ্ঠানিক উদ্যোগ নিয়ে জাতিকে দীর্ঘমেয়াদি সংকটের হাত থেকে রক্ষা করবেন বলে সবাই আশা করছেন। যদিও এর আগে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে এরকম উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। তাই এখন রাষ্ট্রপতি কী করতে পারবেন বা করবেন, তা নিয়ে মানুষ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছে। কিন্তু কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে আসতে হবে। দেশকে এভাবে নৈরাজ্যের হাতে ছেড়ে দেয়া যায় না। আজ মানুষের জীবন-জীবিকা ও গণতন্ত্র হুমকির সম্মুখীন। দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচিতে আগের মতোই সহিংসতা চলছে। এতে রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও প্রাণ হারাচ্ছেন। কারও মৃত্যুই কোনো সুস্থ বিবেকবান মানুষের কাম্য হতে পারে না। এ সংঘাতের মাধ্যমে কোন পক্ষের কী অর্জন হচ্ছে জনগণের কাছে তা পরিষ্কার না হলেও দেশ যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেটা কারও বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। মানুষ খুঁজে পাচ্ছে না কোনো আশ্রয়, কোনো অভিভাবক। এ অবস্থায় মানুষ তাকিয়ে আছে রাষ্ট্রপতির দিকে।
প্রশ্ন হচ্ছে, সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার কথা বলে রাষ্ট্রপতি কি চুপ করে থাকবেন? নাকি রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে বিবেকের তাড়নায় সমঝোতার উদ্যোগ নেবেন? অন্য যে কোনো পক্ষের হস্তক্ষেপ বা উদ্যোগের চেয়ে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ গণতন্ত্রের জন্য সহায়ক হবে। তাই ১৬ কোটি মানুষের ৩২ কোটি চোখ এখন বঙ্গভবনের দিকে। এই চোখে শুধু হতাশার চিহ্ন থাকবে, না আশার আলো ফুটে উঠবে, তা রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ নেয়া ও তাতে দুই পক্ষের ইতিবাচক সাড়া দেয়া না-দেয়ার ওপর নির্ভর করছে।
মোঃ মাহমুদুর রহমান : ব্যাংকার
No comments