নির্বাচনের আগে-পরে গণমাধ্যমেরও পরীক্ষা হবে by মহিউদ্দিন আহমদ
আরও
১৩টি টিভি চ্যানেলের অনুমতি দিয়েছে বর্তমান সরকার। ২৬ নভেম্বর
পত্র-পত্রিকায় এ খবরটি পড়ে তখনই কতগুলো স্মৃতি মনে পড়ল। প্রথমে মনে পড়ল, ৬
নভেম্বর নিউইয়র্কে সিপিজে- ‘কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্ট’ নামের
সংগঠনটির দুই কর্মকর্তার সঙ্গে আমার প্রায় এক ঘণ্টার আলোচনার কথা। বব ডিটজ
(Bob Dietz) এবং সুমিত গ্যালহোত্রা সিপিজের এশিয়া বিভাগে কাজ করেন; প্রথমজন
বিভাগের প্রধান, দ্বিতীয়জন তার সহযোগী। বাংলাদেশের গণমাধ্যম জগতের সাফল্য,
‘গ্লোরিয়াস’ ভূমিকার বিপরীতে আমাদের সংবাদমাধ্যমে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে
সাংবাদিকতার কেমন অপব্যবহার চলছে তা নিয়ে কথা হচ্ছিল। আমার দেশ-এর
‘বাইচান্স এডিটর’ মাহমুদুর রহমান আমাদের সর্বোচ্চ আদালতে দুই দুইবার
দণ্ডিত হওয়ার পরও কীভাবে সম্পাদক থাকতে পারেন, আমাদের অন্য সম্পাদক
সাংবাদিক সাহেবরা কীভাবে তার পত্রিকায় উস্কানিমূলক প্রচার-প্রচারণা
সত্ত্বেও তার পক্ষে বক্তৃতা-বিবৃতি দিতে পারেন, তাদের প্রশ্ন করেছিলাম আমি।
বলেছিলাম আমি, এই আলোচনায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে জার্মানির ‘দি
স্টর্মার’ পত্রিকার সম্পাদক জুলিয়াস স্ট্রেচার (Julius Streicher)-কে তার
পত্রিকায় ইহুদিবিরোধী উস্কানিমূলক অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে নুরেমবার্গ
আদালতে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল এবং এ রায় কার্যকরও করা হয়েছিল। সম্পাদক বলে তাকে
রেহাই দেয়া হয়নি, যেমনটা দাবি করেন আমাদের মতিউর রহমান চৌধুরীরা। আমাদের
সম্পাদক সাহেবদের এককথা- সম্পাদক-সাংবাদিক হলে তাদের ‘টাচ’ স্পর্শও করা
যাবে না। ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায় মাত্র ৯০ দিনে ১০ লাখ লোককে হত্যা করা
হয়েছিল। এই গণহত্যার উস্কানি দেয়ার অভিযোগে রুয়ান্ডার টাংগুরা নামের
পত্রিকা আরটিএলএম রেডিও নেটওয়ার্কের মালিক-সম্পাদক হাসান এনগেজে,
ফাডিন্যান্ড নাহিমানা এবং জ্যঁ বস্কো বারাইয়াগ্বিজকে দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড
দিয়েছিল রুয়ান্ডার গণহত্যার বিচারের জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক গঠিত আন্তর্জাতিক
অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া গেল না। কারণ আন্তর্জাতিক অপরাধ
ট্রাইব্যুনালগুলোতে এখন আর মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই। সিপিজে’র বব ডিটজ এবং
সুমিত গ্যালহোত্রাকে তখন আরও বলেছিলাম, আমাদের অধিকাংশ সম্পাদকই এই
মৃত্যুদণ্ড এবং কারাদণ্ডের রায়গুলোর কথা জানেন না। কিন্তু তারা আমাদের
সম্পাদক। আমাদের কোনো কোনো সম্পাদক যে কী পরিমাণ অজ্ঞতা দেখাতে পারেন,
তাদের লেখালেখি এবং কথাবার্তায়, তার ওপর বেশ কিছু ম্যাটেরিয়েল আমি জোগাড়
এবং সংরক্ষণ করে চলেছি।
সিপিজে’র এই দুই কর্মকর্তাকে বললাম, যে দেশের রাজধানী ঢাকায় ২৩০টি ব্রডশিট দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয় বলে সর্বশেষ ২০১১ সালের চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরের প্রতিবেদনে দেখা যায় এবং যে দেশে ২৭টি (তখন পর্যন্ত) টিভি চ্যানেল আছে, সেই দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অভাব আছে, এ অভিযোগটি কীভাবে ওঠে? গণমাধ্যমের স্বাধীনতাই যদি না থাকবে, এতগুলো পত্র-পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেল কেন আছে? আরও শত শত মানুষ কেন আরও পত্র-পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেল চায়? দরখাস্তকারীদের মতলবটা কী?
আমার প্রশ্নটা বরং উল্টো, সংবাদপত্রের যে স্বাধীনতা আছে, তা কি সাংবাদিকরা প্রয়োগ করছেন? এই যে প্রায় প্রতিদিন বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয় থেকে রুহুল কবীর রিজভী এবং অন্যসব নেতা কথা বলেই চলেছেন, তারা বলছেন সরকার পক্ষের লোকজনই বাস, ট্রেন, টেম্পোতে আগুন দিচ্ছে, মানুষ মারছেই; রিজভীকে কখনো পাল্টা কোনো প্রশ্ন কোনোদিন কোনো সাংবাদিক কি করেছেন?
অবরোধকারীদের ধাওয়া খেয়ে সিএনজি উল্টে গেল, তাতে মারা গেল সিএনজির ড্রাইভার। এই অবরোধকারীরাও কি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কর্মী? সাংবাদিকরা যে প্রশ্নটি কখনোই করছেন না, এসব ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, আগুনে পোড়ানো, তার নিন্দা করছেন না কেন আপনারা? সরকার পক্ষের লোকজনের ‘ষড়যন্ত্রের’ কারণেই যদি এসব নাশকতামূলক ঘটনা ঘটে থাকে, তার নিন্দা জানানোটা তো বিএনপির পক্ষে আরও ‘ফরজ’। সরকার পক্ষের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করা তো বিএনপির কর্তব্য। কিন্তু বিএনপি তার ধারেকাছেও নেই এবং আমাদের এই ঢাকা শহরেই এত হাজার হাজার সাংবাদিক, কিন্তু কেউই বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া বা ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আমলগীরকে এ প্রশ্ন করে না। এখানে কি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অভাব আছে? স্বাধীনতার অভাবেই কি প্রশ্নগুলো করা হচ্ছে না?
বিএনপি নেত্রী কদাচিৎ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। কিন্তু সেদিন যখন তিনি কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়া প্রেস ক্লাবে গেলেন, তখন তার ‘শর্ট’ বক্তৃতার পর তো তাকে কিছু প্রশ্ন করা যেত। এমন প্রশ্ন আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীদেরও করা উচিত। আমাদের জাতীয় সংসদই তো কার্যকর হল না গত ২০ বছরেও। আমাদের সাংবাদিকরা যদি একটু সাহসী হন, একটু লেখাপড়া করে ঝুঁকি নেন, তাহলে তারাই নেতা-মন্ত্রীদের জবাবদিহিতা আদায় করতে পারতেন। বুঝতে পারি, একটু শক্ত প্রশ্ন করলে, পত্রিকার মালিক কর্তৃপক্ষই হয়তো সেই ‘বেয়াড়া’ সাংবাদিককে বরখাস্ত করে দেবে। তাহলে প্রশ্নটা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অভাব নয়; অভাব, সাহসের।
দুই.
নতুন আরও ১৩টি চ্যানেল মঞ্জুর করার খবরটি পড়ে মনে পড়ল সায়মন ড্রিং-এর কথা। বাংলাদেশে একুশে টেলিভিশনের মাধ্যমে এই মানুষটি আমাদের টিভি জগতে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। তার হাতে প্রশিক্ষিত টিভি কর্মীরা এখন অনেক টিভির দায়িত্বপূর্ণ পদে আছেন। তো এই মানুষটিকে বিএনপি-জামায়াত চক্র কীভাবে ২০০২ সালে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছিল, তা কি রুহুল কবীর রিজভীদের মনে করিয়ে দেয়া যায় না? মাহমুদুর রহমানের পক্ষে যারা কথা বলে তাদের সায়মন ড্রিং-এর কথাটি মনে করিয়ে দেন না আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সাংবাদিকরাও। ২০০২ সালে একুশে টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়ার জন্য দরখাস্তকারী কারা ছিলেন? সদ্যপ্রয়াত এবং জাতীয়তাবাদী সাংবাদিকদের এক ‘খাম্বা’ গিয়াস কামাল চৌধুরী, ঢাকা ইউনিভার্সিটির দুই প্রফেসর, ফার্মেসির চৌধুরী ফারুক এবং জিওগ্রাফির আবদুর রব। বর্তমান সরকার যখন চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি এবং ইসলামী টিভি বন্ধ করে দিল তখন জাতীয়তাবাদীরা হৈচৈ করতে থাকল। কিন্তু ‘একুশে টেলিভিশন’ বন্ধ করে দেয়ার কথাটি আমাদের কোনো সাংবাদিক তাদের মনে করিয়ে দেননি। তখন তো গিয়াস কামাল চৌধুরী, চৌধুরী ফারুক এবং আবদুর রবের সাক্ষাৎকার নেয়া উচিত ছিল। একুশে টিভি বন্ধ করে দেয়ার জন্য তারা মামলা করেছিলেন, সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত তারা লড়েছেন যেন একুশে টিভি বন্ধ করে দেয়া হয়। বর্তমান সরকার যখন এই তিনটি চ্যানেল বন্ধ করে দিল তখন এই তিন জাতীয়তাবাদী খাম্বার প্রতিক্রিয়া জানতে আমার খুব ইচ্ছা হচ্ছিল । কিন্তু কোনো সাংবাদিক তা করেননি।
গণমাধ্যমের অপব্যবহার কেমন হচ্ছে এখন তার তিনটি উদাহরণ। গোলাম আযমের সাক্ষাৎকার কে নিয়েছিল, কোন চ্যানেলে তার প্রচার হয়েছিল? মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাজাকার বাচ্চু কোন চ্যানেলে আমাদের বছরের পর বছর মুসলমান হওয়ার জন্য, মুসলমান থাকার জন্য ‘নসিহত’ করে গেছে? বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কর্নেল রশিদের সাক্ষাৎকারটি প্রথম পর্বটি প্রচারের পর বন্ধ করে দেয়া হল।
সায়মন ড্রিং বছর দুই আগে একটি কথা বলেছিলেন, নতুন টিভি চ্যানেলের জন্য শত কোটি টাকার মেশিন, সরঞ্জামাদি আনা হচ্ছে, কিন্তু এগুলো চালানোর জন্য প্রশিক্ষিত লোক কি আছে? প্রসঙ্গত আমার খুব আমোদজনক একটি অভিজ্ঞতার কথা এখন বলি। ‘চ্যানেল আই’ তো পুরনো একটি চ্যানেল, তারা কত কিছু করছে দেশে-বিদেশে, কিন্তু চ্যানেল আইতে খবর শুনতে বসে একটি মজার অভিজ্ঞতা প্রায়ই হয়- খবর পাঠক/পাঠিকা হয়তো একটি শিরোনাম বললেন। কিন্তু বিস্তারিত বিবরণটি বলার সময় দেখা যায়, খবর পাঠক বা পাঠিকা তাকিয়ে আছেন, বিবরণটি তার হাতে আসেনি তখনও। সুতরাং তিনি এদিক-ওদিক তাকাচ্ছেন, কী করবেন বুঝতে পারছেন না, তারপর বলেই ফেললেন, ‘দর্শক, বিস্তারিত খবরটি এখনও আমাদের হাতে আসেনি বা প্রতিবেদনটি প্রক্রিয়াধীন আছে, খবরটি আমাদের হাতে এসে পৌঁছলেই আপনাদের জানিয়ে দেব।’ এত বছরের পুরনো একটি টিভি চ্যানেলে তারপরও এই সাধারণ ত্র“টিটি বছরের পর বছর চলছেই। মনে হয় নজর দেয়ার কেউ নেই।
গত ৩০ জুন সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে অর্থমন্ত্রী মুহিতের বাজেটোত্তর ডিনারে চ্যানেল আইয়ের মালিক পক্ষের একজনকে দেখে তাকে এই ত্র“টিটির কথা জানাতে তার কাছে গেলাম। প্রথম বাক্যটি শেষ করিনি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসে গেছেন, এই বলে তিনি দিলেন ছুট দরজার দিকে। দেখলাম প্রধানমন্ত্রী দরজা দিয়ে ঢুকছেন। আমাকে একটি কথাও বললেন না, বা আবার ফিরেও এলেন না। প্রধানমন্ত্রীকে দেখে তার দৌড় দেয়ার স্মৃতিটা মনে পড়লে এখনও আমার হাসি পায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য তার এত ভক্তি প্রসঙ্গে বলি, বিএনপি-জামায়াত চক্রের শাসনামলে ২০০৩ বা ২০০৪-এ তারেক রহমান যখন বাংলাদেশের অনেকগুলো জেলা-উপজেলা সফরে বের হলেন, তখন সালেহ বিপ্লব নামের চ্যানেল আই-এর এক রিপোর্টার উৎসাহের যে আতিশয্য দেখিয়েছিল, তা এখনও মনে পড়ে।
দৈনিক ‘প্রথম আলো’ এবং ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি স্টার’কে বাংলাদেশের দুটো উন্নত মানের পত্রিকা হিসেবে আমি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কিন্তু দৈনিক প্রথম আলো কিছু দিন ধরে মনে হচ্ছে, প্রকাশ্যে অবরোধকারীদের পক্ষ নিয়েছে, বিএনপি-জামায়াতকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম ছিল ‘আরও নয়জনের প্রাণ গেল’। তারা যদি নাশকতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিত, তাহলে শিরোনামটি হওয়া উচিত ছিল, ‘আরও নয়জনকে পুড়িয়ে মারা হল’ বা ‘আরও নয়জনকে পোড়ানো হল’। পরদিন শুক্রবারেও প্রথম আলোর একই অবস্থান দেখতে পাই, আগুনে পুড়ল ১৯ বাসযাত্রী। কিন্তু শিরোনামটি হওয়া উচিত ছিল, ‘আগুনে পোড়ানো হল আরও ১৯ বাসযাত্রী।’ এসব নাশকতামূলক কাজে যারা জড়িত তাদের কীভাবে বর্ণনা করা হবে সেই বিষয়ে কোনো ‘ইউনিফরম’ নীতি সম্পাদকরা অনুসরণ করছেন না। তারা কি ‘অবরোধকারী’ নাকি ‘সন্ত্রাসী’ নাকি ‘জাতীয়তাবাদী-জামায়াত-শিবির’ কর্মী, নাকি দুষ্কৃতকারী? তাদের ‘অবরোধকারী’ বা ‘জামায়াত-শিবির’ কর্মী বললে তো সম্মান দেয়া হয়। কোনো রকমের দ্বিধা-সংকোচ ছাড়াই তাদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে বর্ণনা করা উচিত আমাদের পত্রপত্রিকায় এবং টিভিতে।
তিন.
টিভি চ্যানেল আরও ১৩টি, সবগুলো প্রচারে গেলে সংখ্যা দাঁড়াবে ৪০। আমাদের বিজ্ঞাপন বাজার কি এত বড়, এত ব্যাপক যে, এতগুলো টিভি চ্যানেল এবং পত্রপত্রিকা এই সীমিত বিজ্ঞাপন বাজারে টিকতে পারবে? মিরপুরের আওয়ামী লীগ এমপি কামাল মজুমদারের ‘মোহনা’ টিভি আধ্যাÍিক হুজুরদের দোয়ার বরকত, জ্যোতিষীদের ভবিষ্যদ্বাণী এবং সর্বরোগের মহৌষধ পাথরের বিজ্ঞাপন প্রচার করে চলেছে। তবে এই বান্দা তার ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সাফল্যের জন্য কী কী পাথর ব্যবহার করছে বা কোন হুজুরের দোয়া-দরুদ নিচ্ছে, অন্য কোনো একটি চ্যানেল তার ওপর একটি রিপোর্ট প্রচার করতে পারে। আমাদের সম্পাদক-সাংবাদিকরা জাতির বিবেক, এই প্রচারণা এ দেশে খুবই কার্যকর, কথাটি আংশিক সত্য, পুরো সত্য নয়।
জাতির এই বিবেকরা যেমন বিজ্ঞাপন সন্ত্রাস চালাচ্ছে তাদের টিভি চ্যানেলগুলোতে, তার ওপর কি কোনো খবর থাকে? দেশের দর্শকরা যে এত বিরক্ত, তারপরও কি চ্যানেল মালিকরা, চ্যানেলগুলোর সম্পাদক-সাংবাদিকরা এতটুকু গ্রাহ্য করছেন, দর্শকদের অনুভূতিকে এতটুকু সম্মান দিচ্ছেন? দর্শকদের তো তারা বরং ‘কনটেম্পট’ দেখাচ্ছেন। দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার প্রতি মাসে তাদের অফিসে কোনো না কোনো বিষয়ের ওপর আলোচনাসভার আয়োজন করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমান সাংবাদিকতা, দর্শক-পাঠকদের পছন্দ-অপছন্দ বা অনুভূতির ওপর কখনও কি তারা একটিও রাউন্ড টেবিলের আয়োজন করেছে? শুধু রাজনৈতিক নেতারা নন, আমাদের সম্পাদক-সাংবাদিকরাও তাদের দুর্বলতার কথাগুলো বাইরের মানুষকে জানতে দেন না। সমালোচনা যে শুধু নেতা-মন্ত্রীরা সহ্য করেন না, তা নয়; সমালোচনা আমাদের গণমাধ্যমের মালিক-সম্পাদকরাও সহ্য করেন না।
চার.
দেশের সংকট গভীর থেকে মনে হচ্ছে গভীরতর হচ্ছে। আর আমার মনে পড়ছে নিউইয়র্কের বাঙালি পাড়া জ্যাকসন হাইটসে এক দুপুরে খাওয়ার সময় পাশের টেবিলের দুই বাংলাদেশীর কথাবার্তা। বাংলাদেশী তরিতরকারির খাবার দোকান। দেয়ালে বাংলাদেশী একটি টিভি চ্যানেল চলছে। তখনই পর্দায় ভেসে উঠল অনন্ত জলিলের একটি বিজ্ঞাপন চিত্র। একটি মোবাইল কোম্পানির।
এই বিজ্ঞাপন চিত্রে অনন্ত জলিলের শেষ বাক্যটির উদ্ধৃতি দিয়ে একজন অন্যজনকে বলল, আমাদের এসব রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজের লোকজন, পত্রিকার সম্পাদক-সাংবাদিক, টকশোতে অংশগ্রহণকারী- তারা কি অনন্ত জলিলকে দেখতে পান না? প্রশ্নকারীর দিকে অন্যজন একটু তাকিয়ে থাকতেই প্রথমজন বললেন, এই যে অনন্ত জলিল বলছেন, অসম্ভবকে সম্ভব করাই অনন্ত জলিলের কাজ। দুই নেত্রীর মধ্যে সমঝোতা আনতে অনন্ত জলিলকে দায়িত্ব দিলেই তো হয়।
জবাবে দ্বিতীয়জন অনন্ত জলিলের পারিবারিক জীবনের কিছু কথা উল্লেখ করে যে কথাগুলো বললেন, তা এখানে উল্লেখ করা শোভনীয় হবে না।
‘শিউলীতলা’, উত্তরা,
সিপিজে’র এই দুই কর্মকর্তাকে বললাম, যে দেশের রাজধানী ঢাকায় ২৩০টি ব্রডশিট দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয় বলে সর্বশেষ ২০১১ সালের চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরের প্রতিবেদনে দেখা যায় এবং যে দেশে ২৭টি (তখন পর্যন্ত) টিভি চ্যানেল আছে, সেই দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অভাব আছে, এ অভিযোগটি কীভাবে ওঠে? গণমাধ্যমের স্বাধীনতাই যদি না থাকবে, এতগুলো পত্র-পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেল কেন আছে? আরও শত শত মানুষ কেন আরও পত্র-পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেল চায়? দরখাস্তকারীদের মতলবটা কী?
আমার প্রশ্নটা বরং উল্টো, সংবাদপত্রের যে স্বাধীনতা আছে, তা কি সাংবাদিকরা প্রয়োগ করছেন? এই যে প্রায় প্রতিদিন বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয় থেকে রুহুল কবীর রিজভী এবং অন্যসব নেতা কথা বলেই চলেছেন, তারা বলছেন সরকার পক্ষের লোকজনই বাস, ট্রেন, টেম্পোতে আগুন দিচ্ছে, মানুষ মারছেই; রিজভীকে কখনো পাল্টা কোনো প্রশ্ন কোনোদিন কোনো সাংবাদিক কি করেছেন?
অবরোধকারীদের ধাওয়া খেয়ে সিএনজি উল্টে গেল, তাতে মারা গেল সিএনজির ড্রাইভার। এই অবরোধকারীরাও কি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কর্মী? সাংবাদিকরা যে প্রশ্নটি কখনোই করছেন না, এসব ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, আগুনে পোড়ানো, তার নিন্দা করছেন না কেন আপনারা? সরকার পক্ষের লোকজনের ‘ষড়যন্ত্রের’ কারণেই যদি এসব নাশকতামূলক ঘটনা ঘটে থাকে, তার নিন্দা জানানোটা তো বিএনপির পক্ষে আরও ‘ফরজ’। সরকার পক্ষের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করা তো বিএনপির কর্তব্য। কিন্তু বিএনপি তার ধারেকাছেও নেই এবং আমাদের এই ঢাকা শহরেই এত হাজার হাজার সাংবাদিক, কিন্তু কেউই বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া বা ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আমলগীরকে এ প্রশ্ন করে না। এখানে কি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অভাব আছে? স্বাধীনতার অভাবেই কি প্রশ্নগুলো করা হচ্ছে না?
বিএনপি নেত্রী কদাচিৎ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। কিন্তু সেদিন যখন তিনি কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়া প্রেস ক্লাবে গেলেন, তখন তার ‘শর্ট’ বক্তৃতার পর তো তাকে কিছু প্রশ্ন করা যেত। এমন প্রশ্ন আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীদেরও করা উচিত। আমাদের জাতীয় সংসদই তো কার্যকর হল না গত ২০ বছরেও। আমাদের সাংবাদিকরা যদি একটু সাহসী হন, একটু লেখাপড়া করে ঝুঁকি নেন, তাহলে তারাই নেতা-মন্ত্রীদের জবাবদিহিতা আদায় করতে পারতেন। বুঝতে পারি, একটু শক্ত প্রশ্ন করলে, পত্রিকার মালিক কর্তৃপক্ষই হয়তো সেই ‘বেয়াড়া’ সাংবাদিককে বরখাস্ত করে দেবে। তাহলে প্রশ্নটা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অভাব নয়; অভাব, সাহসের।
দুই.
নতুন আরও ১৩টি চ্যানেল মঞ্জুর করার খবরটি পড়ে মনে পড়ল সায়মন ড্রিং-এর কথা। বাংলাদেশে একুশে টেলিভিশনের মাধ্যমে এই মানুষটি আমাদের টিভি জগতে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। তার হাতে প্রশিক্ষিত টিভি কর্মীরা এখন অনেক টিভির দায়িত্বপূর্ণ পদে আছেন। তো এই মানুষটিকে বিএনপি-জামায়াত চক্র কীভাবে ২০০২ সালে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছিল, তা কি রুহুল কবীর রিজভীদের মনে করিয়ে দেয়া যায় না? মাহমুদুর রহমানের পক্ষে যারা কথা বলে তাদের সায়মন ড্রিং-এর কথাটি মনে করিয়ে দেন না আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সাংবাদিকরাও। ২০০২ সালে একুশে টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়ার জন্য দরখাস্তকারী কারা ছিলেন? সদ্যপ্রয়াত এবং জাতীয়তাবাদী সাংবাদিকদের এক ‘খাম্বা’ গিয়াস কামাল চৌধুরী, ঢাকা ইউনিভার্সিটির দুই প্রফেসর, ফার্মেসির চৌধুরী ফারুক এবং জিওগ্রাফির আবদুর রব। বর্তমান সরকার যখন চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি এবং ইসলামী টিভি বন্ধ করে দিল তখন জাতীয়তাবাদীরা হৈচৈ করতে থাকল। কিন্তু ‘একুশে টেলিভিশন’ বন্ধ করে দেয়ার কথাটি আমাদের কোনো সাংবাদিক তাদের মনে করিয়ে দেননি। তখন তো গিয়াস কামাল চৌধুরী, চৌধুরী ফারুক এবং আবদুর রবের সাক্ষাৎকার নেয়া উচিত ছিল। একুশে টিভি বন্ধ করে দেয়ার জন্য তারা মামলা করেছিলেন, সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত তারা লড়েছেন যেন একুশে টিভি বন্ধ করে দেয়া হয়। বর্তমান সরকার যখন এই তিনটি চ্যানেল বন্ধ করে দিল তখন এই তিন জাতীয়তাবাদী খাম্বার প্রতিক্রিয়া জানতে আমার খুব ইচ্ছা হচ্ছিল । কিন্তু কোনো সাংবাদিক তা করেননি।
গণমাধ্যমের অপব্যবহার কেমন হচ্ছে এখন তার তিনটি উদাহরণ। গোলাম আযমের সাক্ষাৎকার কে নিয়েছিল, কোন চ্যানেলে তার প্রচার হয়েছিল? মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাজাকার বাচ্চু কোন চ্যানেলে আমাদের বছরের পর বছর মুসলমান হওয়ার জন্য, মুসলমান থাকার জন্য ‘নসিহত’ করে গেছে? বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কর্নেল রশিদের সাক্ষাৎকারটি প্রথম পর্বটি প্রচারের পর বন্ধ করে দেয়া হল।
সায়মন ড্রিং বছর দুই আগে একটি কথা বলেছিলেন, নতুন টিভি চ্যানেলের জন্য শত কোটি টাকার মেশিন, সরঞ্জামাদি আনা হচ্ছে, কিন্তু এগুলো চালানোর জন্য প্রশিক্ষিত লোক কি আছে? প্রসঙ্গত আমার খুব আমোদজনক একটি অভিজ্ঞতার কথা এখন বলি। ‘চ্যানেল আই’ তো পুরনো একটি চ্যানেল, তারা কত কিছু করছে দেশে-বিদেশে, কিন্তু চ্যানেল আইতে খবর শুনতে বসে একটি মজার অভিজ্ঞতা প্রায়ই হয়- খবর পাঠক/পাঠিকা হয়তো একটি শিরোনাম বললেন। কিন্তু বিস্তারিত বিবরণটি বলার সময় দেখা যায়, খবর পাঠক বা পাঠিকা তাকিয়ে আছেন, বিবরণটি তার হাতে আসেনি তখনও। সুতরাং তিনি এদিক-ওদিক তাকাচ্ছেন, কী করবেন বুঝতে পারছেন না, তারপর বলেই ফেললেন, ‘দর্শক, বিস্তারিত খবরটি এখনও আমাদের হাতে আসেনি বা প্রতিবেদনটি প্রক্রিয়াধীন আছে, খবরটি আমাদের হাতে এসে পৌঁছলেই আপনাদের জানিয়ে দেব।’ এত বছরের পুরনো একটি টিভি চ্যানেলে তারপরও এই সাধারণ ত্র“টিটি বছরের পর বছর চলছেই। মনে হয় নজর দেয়ার কেউ নেই।
গত ৩০ জুন সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে অর্থমন্ত্রী মুহিতের বাজেটোত্তর ডিনারে চ্যানেল আইয়ের মালিক পক্ষের একজনকে দেখে তাকে এই ত্র“টিটির কথা জানাতে তার কাছে গেলাম। প্রথম বাক্যটি শেষ করিনি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসে গেছেন, এই বলে তিনি দিলেন ছুট দরজার দিকে। দেখলাম প্রধানমন্ত্রী দরজা দিয়ে ঢুকছেন। আমাকে একটি কথাও বললেন না, বা আবার ফিরেও এলেন না। প্রধানমন্ত্রীকে দেখে তার দৌড় দেয়ার স্মৃতিটা মনে পড়লে এখনও আমার হাসি পায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য তার এত ভক্তি প্রসঙ্গে বলি, বিএনপি-জামায়াত চক্রের শাসনামলে ২০০৩ বা ২০০৪-এ তারেক রহমান যখন বাংলাদেশের অনেকগুলো জেলা-উপজেলা সফরে বের হলেন, তখন সালেহ বিপ্লব নামের চ্যানেল আই-এর এক রিপোর্টার উৎসাহের যে আতিশয্য দেখিয়েছিল, তা এখনও মনে পড়ে।
দৈনিক ‘প্রথম আলো’ এবং ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি স্টার’কে বাংলাদেশের দুটো উন্নত মানের পত্রিকা হিসেবে আমি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কিন্তু দৈনিক প্রথম আলো কিছু দিন ধরে মনে হচ্ছে, প্রকাশ্যে অবরোধকারীদের পক্ষ নিয়েছে, বিএনপি-জামায়াতকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম ছিল ‘আরও নয়জনের প্রাণ গেল’। তারা যদি নাশকতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিত, তাহলে শিরোনামটি হওয়া উচিত ছিল, ‘আরও নয়জনকে পুড়িয়ে মারা হল’ বা ‘আরও নয়জনকে পোড়ানো হল’। পরদিন শুক্রবারেও প্রথম আলোর একই অবস্থান দেখতে পাই, আগুনে পুড়ল ১৯ বাসযাত্রী। কিন্তু শিরোনামটি হওয়া উচিত ছিল, ‘আগুনে পোড়ানো হল আরও ১৯ বাসযাত্রী।’ এসব নাশকতামূলক কাজে যারা জড়িত তাদের কীভাবে বর্ণনা করা হবে সেই বিষয়ে কোনো ‘ইউনিফরম’ নীতি সম্পাদকরা অনুসরণ করছেন না। তারা কি ‘অবরোধকারী’ নাকি ‘সন্ত্রাসী’ নাকি ‘জাতীয়তাবাদী-জামায়াত-শিবির’ কর্মী, নাকি দুষ্কৃতকারী? তাদের ‘অবরোধকারী’ বা ‘জামায়াত-শিবির’ কর্মী বললে তো সম্মান দেয়া হয়। কোনো রকমের দ্বিধা-সংকোচ ছাড়াই তাদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে বর্ণনা করা উচিত আমাদের পত্রপত্রিকায় এবং টিভিতে।
তিন.
টিভি চ্যানেল আরও ১৩টি, সবগুলো প্রচারে গেলে সংখ্যা দাঁড়াবে ৪০। আমাদের বিজ্ঞাপন বাজার কি এত বড়, এত ব্যাপক যে, এতগুলো টিভি চ্যানেল এবং পত্রপত্রিকা এই সীমিত বিজ্ঞাপন বাজারে টিকতে পারবে? মিরপুরের আওয়ামী লীগ এমপি কামাল মজুমদারের ‘মোহনা’ টিভি আধ্যাÍিক হুজুরদের দোয়ার বরকত, জ্যোতিষীদের ভবিষ্যদ্বাণী এবং সর্বরোগের মহৌষধ পাথরের বিজ্ঞাপন প্রচার করে চলেছে। তবে এই বান্দা তার ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সাফল্যের জন্য কী কী পাথর ব্যবহার করছে বা কোন হুজুরের দোয়া-দরুদ নিচ্ছে, অন্য কোনো একটি চ্যানেল তার ওপর একটি রিপোর্ট প্রচার করতে পারে। আমাদের সম্পাদক-সাংবাদিকরা জাতির বিবেক, এই প্রচারণা এ দেশে খুবই কার্যকর, কথাটি আংশিক সত্য, পুরো সত্য নয়।
জাতির এই বিবেকরা যেমন বিজ্ঞাপন সন্ত্রাস চালাচ্ছে তাদের টিভি চ্যানেলগুলোতে, তার ওপর কি কোনো খবর থাকে? দেশের দর্শকরা যে এত বিরক্ত, তারপরও কি চ্যানেল মালিকরা, চ্যানেলগুলোর সম্পাদক-সাংবাদিকরা এতটুকু গ্রাহ্য করছেন, দর্শকদের অনুভূতিকে এতটুকু সম্মান দিচ্ছেন? দর্শকদের তো তারা বরং ‘কনটেম্পট’ দেখাচ্ছেন। দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার প্রতি মাসে তাদের অফিসে কোনো না কোনো বিষয়ের ওপর আলোচনাসভার আয়োজন করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমান সাংবাদিকতা, দর্শক-পাঠকদের পছন্দ-অপছন্দ বা অনুভূতির ওপর কখনও কি তারা একটিও রাউন্ড টেবিলের আয়োজন করেছে? শুধু রাজনৈতিক নেতারা নন, আমাদের সম্পাদক-সাংবাদিকরাও তাদের দুর্বলতার কথাগুলো বাইরের মানুষকে জানতে দেন না। সমালোচনা যে শুধু নেতা-মন্ত্রীরা সহ্য করেন না, তা নয়; সমালোচনা আমাদের গণমাধ্যমের মালিক-সম্পাদকরাও সহ্য করেন না।
চার.
দেশের সংকট গভীর থেকে মনে হচ্ছে গভীরতর হচ্ছে। আর আমার মনে পড়ছে নিউইয়র্কের বাঙালি পাড়া জ্যাকসন হাইটসে এক দুপুরে খাওয়ার সময় পাশের টেবিলের দুই বাংলাদেশীর কথাবার্তা। বাংলাদেশী তরিতরকারির খাবার দোকান। দেয়ালে বাংলাদেশী একটি টিভি চ্যানেল চলছে। তখনই পর্দায় ভেসে উঠল অনন্ত জলিলের একটি বিজ্ঞাপন চিত্র। একটি মোবাইল কোম্পানির।
এই বিজ্ঞাপন চিত্রে অনন্ত জলিলের শেষ বাক্যটির উদ্ধৃতি দিয়ে একজন অন্যজনকে বলল, আমাদের এসব রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজের লোকজন, পত্রিকার সম্পাদক-সাংবাদিক, টকশোতে অংশগ্রহণকারী- তারা কি অনন্ত জলিলকে দেখতে পান না? প্রশ্নকারীর দিকে অন্যজন একটু তাকিয়ে থাকতেই প্রথমজন বললেন, এই যে অনন্ত জলিল বলছেন, অসম্ভবকে সম্ভব করাই অনন্ত জলিলের কাজ। দুই নেত্রীর মধ্যে সমঝোতা আনতে অনন্ত জলিলকে দায়িত্ব দিলেই তো হয়।
জবাবে দ্বিতীয়জন অনন্ত জলিলের পারিবারিক জীবনের কিছু কথা উল্লেখ করে যে কথাগুলো বললেন, তা এখানে উল্লেখ করা শোভনীয় হবে না।
‘শিউলীতলা’, উত্তরা,
No comments