কাজ পেতে হলে আবুল হোসেন! by আরিফুজ্জামান তুহিন

গোয়েন্দা কাহিনীগুলোতে 'বিদেশি এজেন্ট' নিয়ে জমজমাট সব ঘটনা থাকে। এসব এজেন্ট আরেক দেশে গিয়ে নিজ নিজ দেশের হয়ে দুঃসাহসী সব কাজ করে থাকেন। বিশেষ করে বড় বড় যুদ্ধের সময় বিদেশি এজেন্টদের কাজ অনেক বেড়ে যায়।
তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বিশ্বব্যাপী আর একাত্তরের পরে স্বাধীন বাংলাদেশে জন্ম নেন আরেক শ্রেণীর 'বিদেশি এজেন্ট'। এঁরা সাধারণত কাজ করেন বহুজাতিক কম্পানিগুলোর হয়ে। খোলাবাজার অর্থনীতির এই যুগে এ ধরনের এজেন্টের কদর অনেক বেশি। বাংলাদেশেও এ রকম একজন বিদেশি এজেন্টের সন্ধান মিলেছে। তিনি মূলত জ্বালানি খাতের বহুজাতিক কম্পানিগুলোকে এ দেশে কাজ পাইয়ে দিতে সহায়তা করে থাকেন। তিনি আর কেউ নন- বহুল আলোচিত সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের এমপি সৈয়দ আবুল হোসেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, অন্তত ১৭ বছর ধরে তিনি এ দেশের জ্বালানি খাতে বিদেশি এজেন্টগিরি করে আসছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর কৌশল হলো- জ্বালানি খাতের বড় কোনো কাজ বা টেন্ডার হলেই বহুজাতিক কম্পানিগুলোর কাছে তিনি চিঠি হেঁকে নিজের ক্ষমতা-দাপটের কথা জাহির করেন এবং কাজ পাওয়ার জন্য তাঁকে তথা তাঁর কম্পানি সাকো ইন্টারন্যাশনালকে এজেন্ট নিয়োগের অনুরোধ করেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর সাফল্যের দৃষ্টান্তও কম নয়। কিন্তু নিজের সাফল্যের ডালি ভরলেও যে কাজগুলো আবুল হোসেনের এজেন্টগিরির মাধ্যমে হয়েছে, সেগুলোর অবস্থা যে করুণ, সে দৃষ্টান্তও কম নয়।
জানা গেছে, সৈয়দ আবুল হোসেন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য ফ্রান্স, চীন, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বেশ কয়েকটি বিদেশি কম্পানির দেশীয় এজেন্ট হয়ে কাজ করে থাকেন। গত সাড়ে চার বছরে বড় চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ আবুল হোসেনের মালিকানাধীন সাকো ইন্টারন্যাশনাল সংশ্লিষ্ট বিদেশি কম্পানিকে পাইয়ে দিয়েছে। জানা যায়, আবুল হোসেন সাকো ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৭৫ সালে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের এমপি থাকাকালে আবুল হোসেন বিদেশি কম্পানিকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য লবিং শুরু করেন। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরকালে দেশটির সঙ্গে খুলনায় ২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য 'টার্ন কি' পদ্ধতিতে সমঝোতা চুক্তি সই করেন। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য ২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল দরপত্র জমা দেয় চীনের কম্পানি চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিএমইসি)। এর আগে সিএমইসি চট্টগ্রামের রাউজানে ১ ও ২ নম্বর ইউনিটে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে। কিন্তু এ কাজে ত্রুটির অভিযোগ উঠলে খুলনার ২১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে আপত্তি ওঠে।
জানা যায়, সিএমইসির স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিল পাওয়ার রিসোর্সেস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। একে বাদ দিয়ে সৈয়দ আবুল হোসেন সিএমইসির লোকাল এজেন্ট হওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগেন। সিএমইসি কর্তৃপক্ষকে তিনি একাধিক চিঠি লিখে এ ইচ্ছার কথা জানান।
২০০১ সালের ৯ মে এক চিঠিতে সিএমইসির বাংলাদেশে চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ চাং ছুনকে (Mr. Zhang Chun) সৈয়দ আবুল হোসেন লিখেছেন- 'আজকের দিনে এটা কে না জানে, স্থানীয় এজেন্টের রাজনৈতিক ক্ষমতা, ওপর মহলের সঙ্গে যোগাযোগ, দহরম-মহরম না থাকলে খুলনা ২১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বড় প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা প্রায় অসম্ভব।' তিনি আরো লেখেন, 'পরিস্থিতি আপনাদের যত প্রতিকূলেই থাকুক না কেন, রাউজানের কাজে আপনাদের যত বদনামই থাকুক না কেন, আপনি যদি আমার সহায়তা (সার্ভিস) নিতে রাজি থাকেন, আমি সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সবাইকে ম্যানেজ করে কাজটি যাতে আপনাদের প্রতিষ্ঠান পায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারব, সেই আত্মবিশ্বাস আমার আছে।'
এ চিঠি দেওয়ার পরও যখন সিএমইসির পক্ষ থেকে কোনো উত্তর আসে না, তখন ক্ষিপ্ত হয়ে আবুল হোসেন নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে আরেক চিঠিতে লেখেন, 'আগের চিঠিতে আমার ক্ষমতা সম্পর্কে আপনাকে জানিয়েছি। আপনার লোকাল এজেন্ট যে এ রকম একটি কাজ আপনাকে পাইয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে না, সে কথাও জানিয়েছি। এত কিছুর পর আপনাদের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া মিলছে না। এমনকি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীও আমার কম্পানির সার্ভিস নেওয়ার জন্য আপনাদের সুপারিশ করেছেন। তাতেও আপনারা কর্ণপাত করছেন না!'
অবশ্য এত কিছুর পরও এ কাজটি করতে আবুল হোসেন ব্যর্থ হয়েছেন। তবে এর পর থেকে বিদেশি এজেন্টগিরিতে তাঁর সাফল্যই বেশি আর সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর ক্ষতিও সমানতালে।
সিদ্ধিরগঞ্জে সরকারের ক্ষতি ৩০০ কোটি টাকা : অনুসন্ধানে জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জে ৪৫০ মেগাওয়াট সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের জন্য ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (ইজিসিবি) গত বছর দরপত্র আহ্বান করে। এতে দুটি কম্পানি অংশ নেয়। একটি হলো স্পেন ও দক্ষিণ কোরিয়ার আইসোলেক্স-স্যামসং জেভি, অন্যটি ফ্রান্সের কোবরা। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর কোবরা ৩০০ মিলিয়ন ডলার এবং আইসোলেক্স-স্যামসং ৩৪২ মিলিয়ন ডলারে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দরপত্র প্রস্তাব জমা দেয়। পরবর্তী সময়ে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি দেখতে পায়, সর্বনিম্ন দরদাতা কোবরা 'অপ্রয়োজনীয়' তথ্য উল্লেখ করেছে। আর আইসোলেক্স-স্যামসংয়ের এ ধরনের কাজে কোনো পূর্বঅভিজ্ঞতা নেই। এ অবস্থায় কমিটি উভয় প্রতিষ্ঠানকে 'অযোগ্য' বিবেচনা করে ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি এ ব্যাপারে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংকের মতামত চেয়ে পাঠায়।
এদিকে ৩০০ কোটি টাকা বেশি দামে কাজটি বাগিয়ে নিতে আইসোলেক্স-স্যামসং জেভি মরিয়া হয়ে ওঠে। তারা এ কাজে তাদের লোকাল এজেন্ট সাকো ইন্টারন্যাশনালকে চাপ দেয়। কাজ শুরু করে সাকো।
সূত্র জানায়, সাকো ইন্টারন্যাশনালের হয়ে আবুল হোসেন নিজেই বিশ্বব্যাংকে দৌড়াদৌড়ি করেন কাজটি আইসোলেক্স-স্যামসংকে দেওয়ার জন্য। ফলও আসে। বিশ্বব্যাংকের নিজস্ব প্যাডে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়সহ একাধিক জায়গায় চিঠি লিখে আইসোলেক্স-স্যামসং জেভিকে কাজটি দেওয়ার জন্য তদবির করা হয়। বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর অ্যালেন গোল্ডস্টেইন ২০১১-এর ৩১ মার্চ তৎকালীন বিদ্যুৎসচিব আবুল কালাম আজাদকে প্রতিষ্ঠানের প্যাডে লিখিত একটি চিঠি পাঠান। চিঠিতে আইসোলেক্স-স্যামসংয়ের দরপত্রটি পুনর্মূল্যায়নের অনুরোধ জানানো হয়। একই ধরনের বক্তব্যসংবলিত চিঠি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইউনিটের জ্যেষ্ঠ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মো. ইকবাল। তিনি ২০১১-এর ৩১ মার্চ বিদ্যুৎসচিবকে চিঠি দিয়ে স্যামসংয়ের পূর্ব অভিজ্ঞতার বিষয়টি জানতে চান। মো. ইকবাল অবশ্য সিদ্ধিরগঞ্জের পিকিং পাওয়ার প্রজেক্টের টাস্ক টিম লিডারও। তিনি একই ধরনের চিঠি পাঠান ইজিসিবি কম্পানির সেক্রেটারি নজরুল ইসলামের কাছে, যার স্মারক নম্বর ২১২৩।
বিশ্বব্যাংকের এসব চিঠির পর নড়েচড়ে বসে বিদ্যুৎ বিভাগ। তাদের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা কোবরাকে বাদ রেখে সর্বোচ্চ দরদাতা আইসোলেক্স-স্যামসংয়ের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠায়। কোবরা তাদের প্রস্তাবের বিপরীতে ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ চাইলেও তা দেওয়া হয়নি। একপ্রকার প্রকাশ্যেই বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী সর্বোচ্চ দরদাতা আইসোলেক্স-স্যামসংয়ের পক্ষে অবস্থান নেয় বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুটি কম্পানিই অযোগ্য। কিন্তু কোবরাকে দিয়ে করলে সরকারের ৩০০ কোটি টাকা কম ব্যয় হতো। বাড়তি ৩০০ কোটি টাকা থেকে লোকাল এজেন্ট সাকো ইন্টারন্যাশনাল মোটা অর্থ বাগিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
শেষ পর্যন্ত কাজ পেল আবুলের ক্লায়েন্ট : ঘোড়াশাল কম্বাইন্ড সাইকেল ৩০০ থেকে ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও পেয়েছে সাকো ইন্টারন্যাশনালের মক্কেল চায়না ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএনটিআইসি)। বিগত জোট সরকারের আমলে পরিকল্পনা নেওয়া এ কেন্দ্রটিতে প্রথম থেকেই সুযোগ খুঁজছিলেন সৈয়দ আবুল হোসেন। এ কারণে দরপত্র চারবার পুনর্মূল্যায়ন করা হয়েছে।
জানা যায়, এ কেন্দ্রটি নির্মাণে সর্বশেষ দরপত্র অনুযায়ী ২০১১-এর ২৬ ডিসেম্বর কম্বাইন্ড সাইকেলের দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত বছরের ২১ জুন পর্যন্ত ছয়টি কম্পানি দরপত্র জমা দেয়। এর মধ্যে পিডিবি কাজটি সিএনটিআইসিকে দেওয়ার সুপারিশ করে। প্রতিষ্ঠানটি এক হাজার ৯৪৪ কোটি ৯৩ লাখ সাত হাজার ৯৯৪ টাকা দর দেয়। মন্ত্রিসভা কমিটি এই প্রস্তাবটির অনুমোদন দেয়।
পিডিবি সূত্র বলছে, দরপত্রে বলা হয়েছে, নেট হিটের আউটপুট হবে ১৫০ শতাংশ। দরপত্রে সিএনটিআইসি বলেছে, নেট হিটের আউটপুট হবে ১৪১.১২ শতাংশ। ফলে গ্যাসের অপচয় হবে।
পিডিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত ৩০০ মেগাওয়াটের সিম্পল সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তর করলে সর্বোচ্চ ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। কিন্তু রূপান্তরের যে হার চাওয়া হয় তা কম হলে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুই বছর পর্যন্ত খুচরা যন্ত্রাংশ দেওয়ারও নিশ্চয়তা দেয়নি কাজ পাওয়া কম্পানি। প্রথম দুই বছরে অন্তত ১০০ কোটি টাকার খুচরা যন্ত্রাংশ প্রয়োজন হয়।
জালিয়াতির পরও কাজ পেল ওরা : খুলনার ১৫০ মেগাওয়াট দ্বৈত জ্বালানি- ডুয়েল ফুয়েল (গ্যাস ও ডিজেলে) বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে কেন্দ্র নির্মাণের কাজ পেয়েছে আইসোলেক্স-স্যামসং। এ জন্য এ প্রতিষ্ঠানটি এক হাজার ৫৪২ কোটি টাকা দরদাতা হিসেবে কাজ পেয়েছে। ফলে সরকারের ক্ষতি হয়েছে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা। শুধু তা-ই নয়, এদের দেওয়া কাগজপত্রে রয়েছে অসংগতি, এমনকি কিছু কাগজপত্র ভুয়া বলে অভিযোগ ওঠে। দরপত্র কমিটি কম্পানিটিকে প্রাথমিক তালিকা থেকে বাতিলও করে। কিন্তু এত কিছুর পরও সর্বনিম্ন দরদাতা থেকে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা বেশি দামে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ পায় কম্পানিটি। জানা যায়, এর নেপথ্যেও আবুল হোসেনের কম্পানি সাকো ইন্টারন্যাশনাল।
অথচ দরপত্র মূল্যায়নে প্রথম হয়েছিল চীনা কম্পানি স্যাংডন। তাদের দর ছিল সাড়ে ৯০০ কোটি টাকা। ২০০৮ সালে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কম্পানি খুলনায় ১৫০ মেগাওয়াটের দ্বৈত জ্বালানি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপনের দরপত্র আহ্বান করে। দরপত্রে সাতটি বিদেশি কম্পানি অংশ গ্রহণ করে। এর মধ্যে চারটি কম্পানিকে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি প্রাথমিক কৃতকার্য হিসেবে ঘোষণা করে। আর কাজ পাওয়া আইসোলেক্স-স্যামসংকে কমিটি অযোগ্য ঘোষণা করে, যার অবস্থান ছিল সাতের মধ্যে ছয় নম্বর।
দরপত্রের শর্ত অনুসারে বিদ্যুতের টারবাইন ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী কম্পানির পক্ষ থেকে গ্যারান্টি সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। অর্থাৎ টারবাইনে যদি কোনো সমস্যা দেখা যায় তাহলে টারবাইন ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারক কম্পানি সমস্যা নিরসনে বাধ্য থাকবে। কিন্তু আইসোলেক্স স্যামসংয়ের বেলায় তা হয়নি। এ কম্পানি টারবাইন ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ কেনার ব্যাপারে চুক্তি করেছে ফ্রান্সের অ্যালোসথামের সঙ্গে। চুক্তিতে বলা হয়েছে, 'অ্যালোসথাম কোনো ধরনের গ্যারান্টি প্রদান করছে না।' আবার এই অ্যালোসথাম তাদের কাছে গ্যাস টারবাইন বিক্রির ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তাই দেয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কম্পানি লিমিটেডের (এনপিজিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ এম খোরশেদ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এটা ঠিক যে স্যানডং কম দর প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তাদের কেন্দ্রটি নির্মাণ করতে দিলে মান ভালো হতো না।' তিনি নিশ্চিত করেন, আইসোলেক্স স্যামসংয়ের স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে রয়েছে সাকো ইন্টারন্যাশনাল।
এ ছাড়া এনপিজিসিএলের সিরাজগঞ্জের ১৫০ মেগাওয়াটের আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজও আইসোলেক্স পেয়েছে। এটিরও স্থানীয় এজেন্ট সাকো ইন্টারন্যাশনাল। এ কেন্দ্রেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
এসব বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য গতকাল শুক্রবার রাতে আবুল হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিক নম্বর থেকে কল করা হয়; কিন্তু তিনি সাড়া দেননি। সর্বশেষ রাত ৮টা ১৯ মিনিটে তাঁর মোবাইলে এসএমএস করে অভিযোগের ব্যাপারে তাঁর মন্তব্য জানতে চাওয়া হয়। তাতেও কোনো সাড়া না মিললে আবারও তাঁর ফোন নম্বরে কল করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।

No comments

Powered by Blogger.