হত্যা, অপহরণের অভিযোগ-মুরসির বিরুদ্ধে ১৫ দিনের আটকাদেশ

ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ১৫ দিনের আটকাদেশ দিয়েছে আদালত। ফিলিস্তিনের জঙ্গি সংগঠন হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক, সেনা হত্যা, অপহরণসহ বেশ কিছু অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই তাঁকে আটক করা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এমইএনএ গতকাল শুক্রবার এই তথ্য জানায়। ২০১১ সালে হোসনি মুবারকবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকার জন্য মুরসিকে আটকের ঘটনা 'মুবারকের আমল' আবারও ফিরে আসার ইঙ্গিত বলে মন্তব্য করেছে মুসলিম ব্রাদারহুড। গতকাল কয়রোয় মুরসির সমর্থক ও তাঁর বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।
এমইএনএ জানায়, মিসরের রাজধানী কায়রোর একটি আদালত দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে আটকের আদেশ দিয়েছেন। ফিলিস্তিনি জঙ্গি সংগঠন হামাসের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত কি না, সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদেশটি দেওয়া হয়। পুলিশ স্টেশনে হামাসের হামলা, সেনা কর্মকর্তাদের আক্রমণ এবং কারাগার ভাঙচুরের কয়েকটি ঘটনা নিয়েও তাঁকে প্রশ্ন করা হবে। গত ৩ জুলাই ক্ষমতাচ্যুত করার পর মুরসিকে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখেছে মিসরের সেনাবাহিনী।
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলাকালীন ২০১১ সালের জানুয়ারিতে কয়রোর এক কারাগারে ভাঙচুর হয়। এ সময় মুরসির দল মুসলিম ব্রাদারহুডের অনেক নেতা কারাগার থেকে পালিয়ে যান। এ ঘটনার কিছু দিন আগেই হামাসের সহায়তা চেয়েছিল ব্রাদারহুড। এ কারণে কারাগারে ভাঙচুরের ঘটনায় হামাস ও মুরসি জড়িত বলে প্রথম থেকেই সন্দেহ করা হচ্ছিল। প্রয়োজনে আটকের সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে বলেও জানিয়েছেন আদালত।
হামাস ইতিমধ্যে আদালতের এ সিদ্ধান্তে নিন্দা জানিয়েছে। গতকাল দলের মুখপাত্র সামি আবু জহরি জানান, হামাসের আন্দোলনকে শত্রুভাবাপন্ন ধরে নিয়ে কায়রো এই পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্রাদারহুডের মুখপাত্র জেহাদ আল-হাদ্দাদ বলেন, মুবারকের আমল পূর্ণোদ্যমে ফিরে আসার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে মুরসি ও ব্রাদারহুডের নেতাদের মুক্তি দিতে দেশটির সামরিক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। গতকাল এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান তিনি।
মিসরে গতকাল শুক্রবার সেনাবাহিনী ও ইসলামপন্থীদের ডাকা পাল্টাপাল্টি প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ঘিরে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়। মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করায় শুরু হওয়া সহিংসতা বন্ধে 'যুদ্ধ' ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসি এ যুদ্ধে সমর্থন আদায়ে দেশবাসীকে গতকাল রাস্তায় নামার আহ্বান জানান। সিসির এ আহ্বানের জবাবে ব্রাদারহুডও একই দিনে বিক্ষোভ-সমাবেশের ডাক দেয়। গতকাল বিকেলে কায়রোর শুব্রা এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তবে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, মিসরে মুরসিকে অপসারণের ঘটনা সামরিক অভ্যুত্থান কি না- এমন বিষয়ে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। গত বৃহস্পতিবার ওবামা প্রশাসন কংগ্রেসে তাদের এ অবস্থান তুলে ধরে। মিসরকে যুক্তরাষ্ট্র বছরে প্রায় ১৫০ কোটি ডলার সহায়তা দেয়। সেনা অভ্যুত্থান ঘটেছে- এমন সিদ্ধান্তে এলে এ সহায়তার বেশির ভাগই বন্ধ হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হয়। সূত্র : বিবিসি, এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.