মুখ সামলে কথা বলুন- মওদুদকে গয়েশ্বর রায়

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের প্রতি ইঙ্গিত করে যেসব সিনিয়র নেতা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে মিডিয়ায় অতিরিক্ত কথা বলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, তাঁদের মুখ বন্ধ করে জিহ্বা সামাল দিতে বলেছেন স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
তিনি বলেন, 'অতিরিক্ত কথা বলা বন্ধ করুন। জিহ্বায় লাগাম দিন। বেশি কথা বলে বিভ্রান্তির চেষ্টা করবেন না। আপনি যত বড় নেতাই হোন, খালেদা জিয়া বিচার না করলেও নেতা-কর্মীরা আর বসে থাকবে না।'
গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে অল কমিউনিটি ফোরাম আয়োজিত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এসব কথা বলেন।
এক-এগারো সরকারের আমলে জেল-জীবনে নিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদের লেখা একটি বই সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে। বইতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ১৫ আগস্টের জন্মদিনকে বিতর্কিত বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর বলেন, 'ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগ, বিএনপিকে ধ্বংস করা যাবে না। যদি আমরা নিজেরাই সঠিক রাজনীতিটা না করি, তাহলে দলের ভেতর থাকা ষড়যন্ত্রকারীদের নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করে সফল হওয়া যাবে না।' তিনি আরো বলেন, 'অতীতে যারা দলের সঙ্গে বেইমানি করেছে, পরবর্তী সময়ে নেত্রীর কাছে মাফ চেয়ে রক্ষা পেয়েছেন। এবার যদি একই কাজ করেন, তাহলে আর রক্ষা পাবেন না।'
একই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির কড়া সমালোচনা করে গয়েশ্বর বলেন, তিনি বাংলাদেশের মন্ত্রী নন। উনি পরের রাষ্ট্রের মন্ত্রী। তিনি যেভাবে একজন রাজনীতিবিদকে (তারেক রহমান) ফেরারি আসামি বলেছেন, তা রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত।'
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর বলেন, 'ওই লম্পট আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে সামরিক শাসন জারি করে ৯ বছর ক্ষমতায় ছিল।'
ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম, সংসদ সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, নির্বাহী কমিটির সদস্য হেলেন জেরিন খান প্রমুখ।
সম্পদের চেয়ে বাজেট বেশি : এম কে আনোয়ার
এদিকে গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটের কলেবর জনগণের সম্পদের তুলনায় অনেক বেশি।
পুঁজিবাজার থেকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের হাজার হাজার কোটি টাকা সরকারদলীয় লোকরা লুটে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, 'আমরা চাই নির্দলীয় ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সরকার ব্যবস্থা। ওই সরকারের প্রধানমন্ত্রীর পদে শেখ হাসিনা কিংবা অন্য কোনো দলের লোক হলে সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না।' সরকারি দলের পক্ষ থেকে বিরোধী দলকে সংসদে প্রস্তাব দেওয়ার জবাবে তিনি বলেন, 'আমরা প্রস্তাব দেব কেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক যেটা ছিল সেটি আপনারাই ধ্বংস করেছেন। এর বিকল্প কি করতে চান তা আপনারাই বলেন।'
সংগঠনের উপদেষ্টা সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, জিয়া নাগরিক ফোরামের সভাপতি মিয়া মো. আনোয়ার প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মওদুদ জ্ঞানপাপী : সুরঞ্জিত
এদিকে গতকাল রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক আলোচনায় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে জ্ঞানপাপী হিসেবে অভিহিত করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে যোগদানের প্রথম দিনই বিএনপির ওয়াকআউটের পরিপ্রেক্ষিতে মওদুদকে উদ্দেশ করে সুরঞ্জিত সেন বলেন, 'উনি বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। কিন্তু দুঃখ প্রকাশ করার সুযোগ না দিয়েই উনি চলে গেলেন। মওদুদ সাহেব, একজন সিনিয়র সংসদ সদস্যের কাছে এটা আমরা আশা করিনি। উনি যে নিজে বোঝেন না, তা নয়; উনি হলেন জ্ঞানপাপী।'
বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, 'বিরোধী দলকে বুঝতে হবে, নয়াপল্টনে ৫০টি সভা, শাপলা চত্বরে ১০০টি সভার চেয়ে জাতীয় সংসদে এসে একটা বক্তৃতা দেওয়া অনেক বেশি কার্যকর। এটাই মানুষের প্রত্যাশা।'
নৌকা সমর্থক গোষ্ঠী আয়োজিত এ আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী সেলিম, আয়োজক সংগঠনের সম্পাদক ফাতেমা জামান সাথী প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.