'নওয়াজের সামনে বড় বাধা ড্রোন ও মোশাররফ'

তৃতীয়বারের মতো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গতকাল বুধবার শপথ নিয়েছেন নওয়াজ শরিফ। এ মেয়াদে জ্বালানি সংকট মোকাবিলা, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি চীন ও ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্ব দেবেন তিনি- এমনটাই আশা করছেন সবাই।
তবে ঘরে-বাইরে তাঁকে বেশ কিছু সমস্যাও মোকাবিলা করতে হবে। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন (চালকবিহীন বিমান) হামলা ও পারভেজ মোশাররফ ইস্যুটি কতটা সহজে মোকাবিলা করতে পারেন তার ওপরই নির্ভর করছে নওয়াজের সাফল্য।
গতকাল প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পরই ড্রোন হামলার বিরুদ্ধে কঠোর বক্তব্য দিয়েছেন নওয়াজ। ড্রোন হামলা বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সরাসরি আহবান জানিয়েছেন, 'আমরা অন্যদের সার্বভৌমত্বকে শ্রদ্ধা করি। আমাদের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতিও অন্যদের সম্মান দেখানো উচিত। ড্রোন হামলা বন্ধ করা উচিত।' নওয়াজ বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে ন্যাটো সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে ওয়াশিংটনের পাশে থাকবে পাকিস্তান। তবে ড্রোন হামলা নিয়ে ইসলামাবাদের উদ্বেগকেও গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত ওয়াশিংটনের।
ড্রোন হামলা ছাড়াও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশেষ করে জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) বিরুদ্ধে নওয়াজ সরকারের অবস্থান কি হবে- সে দিকেও নজর থাকবে সবার। নওয়াজকে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত বিষয়গুলো এমনভাবে মোকাবিলা করতে হবে যাতে তিনি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখে না পড়েন। অবশ্য নওয়াজ বলেছেন, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে তিনি সব দলকে পাশে চান। তার আহবানে সাড়া দিয়ে টিটিপিও জানায়, তারা সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসবে। কিন্তু গত সপ্তাহে ড্রোন হামলায় টিটিপির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা ওয়ালিউর রেহমান নিহত হওয়ার পর এই ইস্যুতে নওয়াজ কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। টিটিপি বলেছে, এ অবস্থায় তারা নওয়াজ সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসবে না। তা ছাড়া ড্রোন হামলার বিষয়ে বিভিন্ন মহল থেকে নওয়াজের অবস্থানেরও কঠোর সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে। অন্য দলগুলো বলছে, ড্রোনের ব্যাপারে নওয়াজের অবস্থান অনেকখানিই নমনীয়। তবে নওয়াজ জানান, ড্রোন বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য দরকার। তার এ বক্তব্যে ড্রোন বিষয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তার গন্ধ পাচ্ছেন পর্যবেক্ষকরা।
পর্যবেক্ষকদের মতে, সমস্যাটি শুধু ড্রোন হামলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, সামরিক বাহিনী একে সমর্থন করছে কি না সে প্রশ্নটিও এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, 'দেশে মার্কিন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় সেনাবাহিনীর হাই কমান্ডের সহযোগিতা ও সমন্বয়ে।' অথচ দেশে বড় ধরনের ড্রোন হামলা হলে সেনাবাহিনীর তরফে বলা হয়, তাদের না জানিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সেনাবাহিনী এ ক্ষেত্রে দ্বৈত ভূমিকা পালন করছে। আসলে তারা কোনো সমালোচনা শুনতে চায় না। তারা চায় রাজনৈতিক নেতারাই এর দায়ভার বহন করুক। তবে দেশবাসী আশা করছে রাজনৈতিক সরকার ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে এই দড়ি টানাটানির অবস্থার পরিবর্তন এবার হয়তো হবে। নওয়াজও বলেছেন, তার সরকার চাইছে সেনাবাহিনী প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনবে। নওয়াজ তার আগের মেয়াদ থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকেই এ কথা বলেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
নওয়াজ সরকারের জন্য মোশাররফও একটি বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে। একদিকে গুঞ্জন রয়েছে, সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চাইছেন, মোশাররফকে দেশের বাইরে চলে যেতে দেওয়া হোক। নওয়াজ বলেছেন, মোশাররফকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। আবার এমন খবরও বাতাসে ভাসছে যে নওয়াজের সঙ্গে গোপন চুক্তির মাধ্যমে দেশে ছাড়ছেন মোশাররফ।
সামরিক বাহিনীর সঙ্গে নওয়াজের সম্পর্কটি কেমন দাঁড়ায় এবং আগামী পাঁচ বছরে তিনি কী করবেন তার ওপরই আসলে বহু কিছু নির্ভর করছে। এর ভেতর ড্রোন ও মোশাররফ ইস্যুটিও রয়েছে। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, এখানেই নওয়াজের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা। তেমন সহযোগিতা মেলবে- এমন এ দাবি আপাতত অযৌক্তিক মনে হতে পারে। তবে নওয়াজ আত্মপ্রত্যয়ী কণ্ঠে বলেছেন, তিনি অতীতের ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়েছেন এবং ভবিষ্যতে সবকিছু মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত আছেন। সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস।

No comments

Powered by Blogger.