অনলাইন থেকে-নওয়াজ শরিফ ও সন্ত্রাস

আফগানিস্তানের পশতুনে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে পাকিস্তানের যোগ দেওয়ার কালেই নিজেরা সন্ত্রাসের চোরাবালিতে আটকে গিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সেই সন্ত্রাসবিরোধী হামলা সেখানকার অসংখ্য বেসামরিক জনগণের প্রাণহানি ঘটিয়েছিল।
গএর প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত অঞ্চলের উপজাতি জনগোষ্ঠীর মধ্যে।
তারা আফগানিস্তানে ঢুকে যেতে থাকে। আর যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। পাকিস্তান আর আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে বসবাসকারী বিক্ষুব্ধ সেই জনসংখ্যা চার কোটির বেশি। ওয়াশিংটন পাকিস্তান সরকারকে চাপ প্রয়োগ করে সীমান্ত পাড়ি দেওয়া বন্ধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। ফল দেখা দেয় বিপরীত। আগে যেখানে বিক্ষুব্ধ মানুষগুলো মার্কিন বাহিনীর দিকে বন্দুক উঁচিয়ে ধরেছিল, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তারা পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধেও অস্ত্রধারণ করে। এভাবেই গোটা পাকিস্তানে সেই বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ে, যা আজও তাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে ভেতরে ও বাইরে।
৬৩ বছর বয়সের নওয়াজ শরিফ তাঁর ৩০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তৃতীয়বারের মতো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করছেন। নির্বাচনের আগে বহু দেশি ও বিদেশি রাজনৈতিক বিশ্লেষক মন্তব্য করেছিলেন, পাকিস্তানে একটি ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হতে যাচ্ছে, যা দেশটির স্থিতিশীল রাজনীতির জন্য আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। কিন্তু পাকিস্তানের ভোটাররা সেই আশঙ্কাকে ভুল বলে প্রমাণ করেছেন। পাকিস্তানের ভোটারদের অর্ধেকের বেশি বাস করে গ্রামাঞ্চলে। তারা আসলে একটা পরিবর্তন চেয়েছিল। আর এই পরিবর্তনের সূত্র ধরেই পিটিআইয়ের সাফল্য দেখা গেছে। পাকিস্তানের গ্রামগুলোর প্রতিটিতে দুই কিংবা তিনজন গ্রামপ্রধান থাকেন। তাঁরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তাঁরা কাকে সমর্থন জানাবেন। এই গ্রামপ্রধানদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা ও পরিষদ সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের সম্পর্ক থাকে। এই গ্রামপ্রধানদের একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তাঁরা সহজে তাঁদের দলীয় আনুগত্য পরিবর্তন করেন না। তাঁরা দেশের জন্য কোন প্রার্থী অধিক যোগ্য- এতটা বিচার করার সুযোগ পান না।
পিএমএল থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীরা আসলে সেই সুযোগই কাজে লাগিয়েছেন। অন্যদিকে পিটিআই কাজে লাগিয়েছে পশতুন অঞ্চলের সাধারণ মানুষের চিন্তাকে। সেই এলাকার মানুষ যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রশক্তির সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের সামনে থাকা সমস্যাগুলো নিয়ে পিটিআই প্রার্থীরা অধিক মনোযোগী হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন নির্বাচনের আগে। আর সেই আশ্বাসে হাজার হাজার মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে পিটিআইয়ের পক্ষে। কিন্তু নির্বাচন চলাকালে ও নির্বাচন পরবর্তীকালে পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে যে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে, তার জন্য প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তিকে দোষারোপ করার প্রবণতাও দেখা গেছে। আর এ হত্যাকাণ্ড
থেকে পিটিআই ভাইস চেয়ারম্যানও রেহাই পাননি। কয়েক ডজন হত্যার পর বলা
যাচ্ছে না পাকিস্তানের আগামী দিনগুলো খুব একটা সুখের হবে। নওয়াজ শরিফকে
সেই কণ্টকাকীর্ণ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই (৫ জুন) শপথ নিতে হচ্ছে।
পাকিস্তানে জিইয়ে থাকা সন্ত্রাসবাদ দমন করা কতটা সম্ভব হবে তৃতীয়বার
ক্ষমতায় আসা শরিফের পক্ষে, তা দেখার বিষয়। সময়ই প্রমাণ করবে তিনি পূর্বসূরি সেনা স্বৈরশাসকদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন কি না।

লেখক : গুল জাম্মাস হোসাইন
ইরানের পত্রিকা তেহরান টাইমস থেকে ভাষান্তর মোস্তফা হোসেইন

No comments

Powered by Blogger.