আসছে নতুন বাজেট- বিরোধী দলের যথার্থ ভূমিকা প্রত্যাশা করি

২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেট আজ সংসদে উপস্থাপন করা হবে। এরপর সরকারি দলের পক্ষ থেকে বাজেটকে জনবান্ধব ও বিরোধী দলের পক্ষ থেকে গণবিরোধী আখ্যায়িত করে চলবে বক্তৃতা-বিবৃতি।
কিন্তু সাধারণভাবে বাজেট এলেই মানুষের মনে এক ধরনের শঙ্কা কাজ করে- এই বুঝি বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেল। এবারও তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে না। তবে অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট-পূর্ব বক্তৃতায় বলেছেন, আসছে বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্কারোপ করা হয়নি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে শুল্ক কমানো হয়েছে। ফলে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু বাস্তবে কী হয়, তা দেখতে আমাদের আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।
অনেক দিন পর বিরোধী দল চলতি বাজেট অধিবেশনে যোগ দিয়েছে। ফলে সংসদ অনেকটাই প্রাণ ফিরে পেয়েছে- যদিও পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বিরোধী দল বাজেট পেশের সময় অধিবেশন বয়কট করবে। আমরা চাই, বিরোধী দল সংসদে উপস্থিত থেকে বাজেটের সব দিক বিশ্লেষণ করুক। বাজেটের গণবিরোধী দিকগুলো তুলে ধরে প্রতিবাদ করুক। আগের বছর বিএনপির পক্ষ থেকে একটি বিকল্প বাজেট তুলে ধরা হয়েছিল। এবার সে ধরনের কোনো বাজেট প্রস্তাব তারা দেয়নি। আমরা আশা করি, সক্রিয়ভাবে আলোচনায় অংশ নিয়ে ও চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাজেটকে প্রকৃত অর্থেই জনবান্ধব করে তোলার ক্ষেত্রে তারা তাদের ভূমিকা পালন করবে।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, এবারও বাজেটের সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিক হলো করযোগ্য সর্বনিম্ন আয়সীমা। এক বছরে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বাড়লেও সর্বনিম্ন করযোগ্য আয় ধরা হয়েছে মাত্র দুই লাখ ২০ হাজার টাকা। অর্থাৎ মাসিক বেতন ১৮ হাজার টাকার কিছু বেশি হলেই তাঁকে আয়কর দিতে হবে। অথচ বর্তমান বাজারে ঢাকায় যেনতেন একটি বাসা ভাড়া নিতে গেলেও মাসে ১৫ হাজার টাকা লেগে যায়। এ সীমা অবশ্যই তিন লাখ টাকা হওয়া উচিত। অন্যদিকে এমন ব্যক্তি রয়েছেন, যাঁদের মাসিক আয় এক লাখ টাকারও বেশি, অথচ তাঁরা কর দেন না। তাঁদের করের আওতায় আনার জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হোক। বাজেটে কৃষিসহ বেশ কিছু খাত থেকে ভর্তুকি তুলে নেওয়া বা কমিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানা যায়। এটি যেন সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির ওপর বুমেরাং না হয়ে যায়, সেদিকে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে।
বাজেট প্রণয়নই বড় কথা নয়, এর যথাযথ বাস্তবায়নটাই বেশি জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজেটের বাস্তবায়ন নির্ভর করে সুশাসন ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার ওপর। আমরা সেই সুশাসন ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা প্রত্যাশা করি।

No comments

Powered by Blogger.