পবিত্র কোরআনের আলো-যারা সাম্প্রদায়িক বা বৈষম্যবাদী তাদের কোনো নীতি-আদর্শ নেই

৭৪. ইয়াখ্তাস্সু বিরাহ্মাতিহী মাইঁয়্যাশা-উ ওয়াল্লাহু যুল ফাদ্বলি আ'যীম। ৭৫. ওয়ামিন আহ্লিল কিতা-বি মান ইন তা'মানহু বিকি্বনত্বা-রিন ইউওয়াদ্দিহী ইলাইকা; ওয়া মিনহুম্ মান ইন তা'মানহু বিদীনা-রিন লা-ইউআদ্দিহী ইলাইকা ইল্লা- মা- দুম্তা আ'লাইহি ক্বা-য়িমান; যা-লিকা বিআন্নাহুম ক্বা-লূ লাইছা আ'লাইনা- ফিল উম্মিয়্যীনা ছাবীল; ওয়াইয়াক্বূলূনা আ'লাল্লাহিল কাযিবা ওয়া হুম ইয়া'লামূন।
৭৬. বালা- মান আওফা- বিআ'হ্দিহী ওয়াত্তাক্বা- ফাইন্নাল্লা-হা ইউহিব্বুল মুত্তাক্বীন। [সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৭৪-৭৬]
অনুবাদ
৭৪. তিনি যাকে ইচ্ছা করেন তাকেই নিজের দয়া দিয়ে সঠিক পথপ্রদর্শনের জন্য নির্দিষ্ট করেন। আল্লাহ তায়ালা অসীম দয়া ও সৌভাগ্যের মালিক।
৭৫. আহলে কিতাবদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যদি আপনি তার কাছে ধনসম্পদের এক স্তূপও আমানত রাখেন সে তা আপনাকে ফিরিয়ে দেবে; আবার এদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যার কাছে যদি একটিমাত্র দিনারও আপনি রাখেন সে তা ফিরিয়ে দেবে না। তবে হ্যাঁ, যদি আপনি তার ওপর চেপে বসতে পারেন সেটা ভিন্নকথা। এটা এ কারণে যে এরা বলে, অ-ইহুদি অশিক্ষিত লোকদের ব্যাপারে আমাদের ওপর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই; এরা (ইহুদিরা) জেনে-বুঝে আল্লাহর ওপর মিথ্যা কথা বলে।
৭৬. অবশ্য যে ব্যক্তি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে চলে এবং দায়িত্বনিষ্ঠতা অবলম্বন করে; তারা জেনে রাখুক, আল্লাহ তায়ালা দায়িত্বনিষ্ঠ লোকদের খুব ভালোবাসেন।
ব্যাখ্যা
৭৪ নম্বর আয়াতটি আল্লাহ তায়ালার একটি চিরন্তন নীতিবাক্য। এই আয়াতের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে যারা আল্লাহর কাছে সঠিকপথের সন্ধান চায় এবং আন্তরিকভাবে তা চায় তাদের তিনি সঠিক পথের দিশা দেওয়ার জন্য বাছাই করে নেন। আল্লাহ তায়ালার কাছে অপরিসীম সৌভাগ্য রয়েছে। তিনি যাকে চান তাকে সৌভাগ্য দান করেন। আর তাঁর কাছে শ্রেষ্ঠ সৌভাগ্য হচ্ছে জীবনের সঠিকপথের দিশা।
৭৫ নম্বর আয়াতে আহলে কিতাব, বিশেষ করে ইহুদিদের কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে আমানত আত্মসাৎ করা। তবে এই নিকৃষ্টতম বৈশিষ্ট্য সব ইহুদির মধ্যেই আছে এমন নয়। কোনো কোনো ইহুদি একেবারেই এ রকম নয়, তবে অনেকেই এ রকম। এদের এ রকম বৈশিষ্ট্য থাকার কারণটা কী, তাও এ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণটি হলো, তাদের সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধিজনিত শিক্ষা। ইহুদিরা বিশ্বাস করত, যে ইহুদি ছাড়া অন্য সব লোক মূর্খ ও অশিক্ষিত এবং অশিক্ষিত লোকদের আমানত ফেরত দেওয়ার বা তাদের সম্মান দেখানোর কোনো বাধ্যবাধকতা ইহুদিদের নেই। এ কুশিক্ষা থেকেই তাদের নিকৃষ্ট বৈশিষ্ট্যটির জন্ম।
৭৫ নম্বর আয়াতটির শানেনুজুল এ রকম_ইহুদি আলেম আবদুল্লাহ ইবনে সালামের কাছে কেউ বারো শ উকিয়া স্বর্ণ আমানত রেখেছিল। আমানতকারী ইহুদি ছিলেন না; অথচ তিনি তা আমানতকারীকে যথাযথভাবে ফেরত দিয়েছিলেন। পক্ষান্তরে ফাখ্খাছ ইবনে আছুরা নামক ইহুদির কাছে জনৈক অশিক্ষিত কুরাইশ একটিমাত্র দিনার আমানত রেখেছিল। অথচ সে তা আত্মসাৎ করেছিল। এ ঘটনাগুলোর প্রসঙ্গ ধরেই আয়াতটি নাজিল হয়। তবে আয়াতের মূল মর্মবাণীটি বলা হয়েছে শেষাংশে। বলা হয়েছে, এটা এ কারণে যে ইহুদিরা বলে, 'অ-ইহুদি অশিক্ষিতদের ব্যাপারে আমাদের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, অর্থাৎ এদের ধনসম্পদ যেকোনো উপায়ে আত্মসাৎ করা জায়েজ।' তারা এটাকে তাওরাতের উক্তি বলেও প্রচার করতেন। এটা হচ্ছে তাদের কুশিক্ষার মূল জায়গা। ইহুদিরা ছিল দারুণভাবে সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধিসম্পন্ন। সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি বা গোষ্ঠীগত দৃষ্টিভঙ্গি তৎকালীন সভ্যতার সর্বত্রই ছিল। কিন্তু ইহুদিরা ছিল এ ক্ষেত্রে অধিকতর অনড় এবং আভিজাত্যের আত্মশ্লাঘায় টইটম্বুর। আভিজাত্যের বাস্তব কারণ থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রদায়িক আভিজাত্য এবং ভেদবুদ্ধি মানবসমাজের যে চরম অধঃপতন ঘটায়_এটাই এ আয়াতে বলা হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.