বিবিসির বিশ্লেষণ- দিল্লির গণধর্ষণের ঘটনায় আত্ম-অনুসন্ধানী ভারত

ভারতে গণধর্ষণের শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভরত এক ব্যক্তি জ্বলন্ত মোমবাতি হাতে নিয়ে গত সপ্তাহে মৌন সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁর হাতের পোস্টারে লেখা ছিল: ‘আসুন, আগে নিজেদের দিকে তাকাই।’
নয়াদিল্লিতে গত ডিসেম্বরে একটি চলন্ত বাসে ওই গণধর্ষণের ঘটনায় দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ভারতীয়দের এখন ‘আত্ম-অনুসন্ধানের’ সময় এসেছে। দেশটিতে অর্থনীতি ও শিক্ষাব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি সত্ত্বেও নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। বিত্তশালী এবং শিক্ষিত সমাজেও নারী ও তরুণী নিপীড়ন বন্ধ হয়নি। পরিবারের কর্তাব্যক্তিরা ছেলেসন্তান আকাঙ্ক্ষা করায় প্রতিবছর হাজার হাজার নারী গর্ভপাত করাতে বাধ্য হন। গর্ভস্থ সন্তানের লিঙ্গ কী, তা জানতে চিকিৎসক ও নার্সদের ঘুষ দেওয়া হয়। পরিণামে নারী-পুরুষের অনুপাতের ব্যবধান বেড়েই চলেছে।
সেই বাসের চালকসহ ধর্ষণকারীদের চারজন দিল্লির দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন। এলাকাটির নাম সংবাদমাধ্যমে আলোচিত হওয়ায় সেখানকার মানুষ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। নিম্নবিত্ত-অধ্যুষিত জায়গাটি এখন যেন ভারতের অন্ধকারাচ্ছন্ন অপরাধজগতের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় লোকজন প্রধানত গ্রাম থেকে এসে দিল্লির বাসিন্দা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ এবং পয়োনিষ্কাশন-ব্যবস্থার বিবেচনায় সেখানে জীবনযাত্রার মান অন্যান্য বস্তি এলাকার তুলনায় ভালো। তবে তাদের সমাজে ধর্ষণের ঘটনা বিরল নয়। নারীর প্রতি স্থানীয় মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই বিষয়টি স্পষ্ট।
স্থানীয় এক নারী বলেন, এখানকার সবাই অপরাধী নয়। গম থেকে যখন আটা তৈরি করা হয়, কিছু পোকাও মিশে যেতে পারে।
স্থানীয় ছেলেমেয়েরা সবাই প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যায়। তারা নির্ভুল ইংরেজিও বলতে পারে। ধর্ষণবিরোধী মিছিলে সম্প্রতি তারা অংশ নিয়েছে। তারা সেই গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত বলে অভিযুক্তদের চেনে। তবে তারা মনে করে, এলাকার সবাই ও রকম খারাপ নয়। ভারতের শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম আরও উদার ও উন্মুক্ত সমাজব্যবস্থার পক্ষপাতী।
তবে পরিস্থিতি যে একেবারেই পাল্টাচ্ছে না, তা নয়। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা আগের তুলনায় বেড়েছে।

No comments

Powered by Blogger.