বিশ্বের প্রথম মুসলিম নারী মহাকাশচারী
আনুশেহ আনসারি মুসলিম বিশ্বের প্রথম নারী মহাকাশচারী। প্রথম মুসলিম নারী মহাকাশ পর্যটক হিসেবে বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেন তিনি। ২০০৬ সালের ১৮ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ১২ দিন মহাকাশ ভ্রমণ করেন আনুশেহ।
মহাকাশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লেখেন তিনি। হোমার হিকামের সঙ্গে যৌথভাবে লেখা তাঁর এ বইয়ের নাম ‘ড্রিমস অব স্টারস’। ২০১০ সালে বইটি প্রকাশিত হয়। মহাকাশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে আনুশেহ চমৎকার বলে উল্লেখ করেন। এ ভ্রমণের মাধ্যমে ছোটবেলা থেকে লালিত তাঁর একটি স্বপ্ন পূরণ হয় বলে তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। ১৯৬৬ সালে ইরানে আনুশেহ আনসারি জন্মগ্রহণ করেন। রাজধানী তেহরানে তিনি শৈশব ও কৈশোরকাল কাটান। ষোলো বছর বয়সে তিনি পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। অনুশেহ আনসারি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। প্রোডিয়া সিস্টেম নামক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি তিনি। আনুশেহ আনসারি জর্জ ম্যাশন ইউনিভার্সিটি থেকে তড়িৎ প্রকৌশল ও কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন তিনি।প্রথম মুসলিম নারী মহাকাশচারী হিসেবে আনুশেহ আনসারি ইতিহাস গড়েন। ছোটবেলা থেকে আনুশেহ মহাকাশ ভ্রমণের স্বপ্ন দেখতেন। স্বপ্ন দেখতেন বড় হয়ে মানুষের সেবা করার। চেষ্টা ও পরিশ্রম থাকলে সবকিছু করা সম্ভব আনুশেহ তা প্রমাণ করেছেন। মহাকাশ ভ্রমণের জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণ। সেই সঙ্গে প্রচুর অর্থও। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে আনুশেহ তাঁর স্বপ্ন পূরণ করেন। মহাকাশ ভ্রমণে তাঁর ব্যয় হয় প্রায় দুই কোটি ডলার।
মহাকাশ ভ্রমণে আনুশেহকে তাঁর পরিবার যথেষ্ট উৎসাহ ও প্রেরণা দেয়, বিশেষ করে স্বামী হামিদ আনসারি ও দেবর আমির আনসারি তাঁকে নানাভাবে সাহস ও সহযোগিতা করেন। ২০০৬ সালে তাঁদের সবার উদ্যোগে মহাকাশ বিষয়ক প্রতিযোগিতামূলক একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ‘আনসারি এক্সপ্রেস’ নামের এ প্রতিষ্ঠানটি আত্মপ্রকাশ করে। মহাকাশে তিনজন আরোহী বহন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি মহাকাশযান তৈরির উদ্দেশ্যে প্রতিযোগিতা চালু করা হয়। এছাড়াও অন্তত ১৪ দিন মহাকাশে অবস্থান করার বিষয়টিও এখানে প্রাধান্য দেয়া হয়। এ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীকে পুরস্কার হিসেবে এক কোটি ডলার দেয়া হয়।
স্যুয়জ টিএমএ-৮৯ ক্যাপসুলে করে আনুশেহ মহাকাশযান স্টেশনে পৌঁছেন। মহাকাশ ভ্রমণের জন্য ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে আটদিন অবস্থান করেন আনুশেহ। ভ্রমণ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের একটা অংশ এখান থেকে লাভ করেন তিনি। সব ধরনের অভিজ্ঞতার কথা তিনি চমৎকারভাবে বর্ণনা করেন। ভ্রমণ অভিজ্ঞতার বিস্তারিত বর্ণনা তাঁর লেখা বইটিতে তিনি প্রকাশ করেন।
আনুশেহ আনসারির মহাকাশ ভ্রমণে সহযোগিতার হাত নিয়ে এগিয়ে আসে নাসা। সংস্থাটির সহযোগিতা ও প্রচেষ্টায় জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আনুশেহ একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। মহাকাশ ভ্রমণের জন্য আনুশেহ এ বিষয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করেন। ভ্রমণের সময় তিনি ইউএস-এর পতাকা এবং সাধারণ ইরানী ভাষা সংবলিত পোশাক পরিধান করেন। উভয় দেশকে সম্মান জানাতে আনুশেহ তা করেছেন। তাঁর ভ্রমণে দু’দেশের প্রচুর অবদান রয়েছে বলে তিনি জানান। আনুশেহ মহাকাশ বিষয়ক অনেক পুরস্কার লাভ করেছেন। ২০০১ সালে ফরচুন ম্যাগাজিনের শীর্ষ ৪০ নারী ব্যবসায়ীর মধ্যে আনুশেহও ছিলেন।
আনুশেহ আনসারি একাধারে একজন প্রযুক্তিবিদ ও ব্যবসায়ী। মহাকাশ সম্পর্কে তাঁর ব্যাপক আগ্রহ তাঁকে স্বপ্নপূরণের পথে নিয়ে যায়। তাঁর অদম্য সাহস ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টার দ্বারা তিনি তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করেন। সমস্ত বাধাবিপত্তি জয় করে এগিয়ে যান দৃঢ়পদক্ষেপে। সূচনা করেন নতুন যুগের, নতুন ইতিহাসের। তাঁরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে এগিয়ে যাবে এই সময়ের নারীরাও।
ইয়াসমিন হোসেন
No comments