বিপিএলের উদ্বোধন-সফল হোক ক্রিকেট মহোৎসব
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দ্বিতীয় আসর ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে গতকাল উদ্বোধন হয়েছে।
ক্রিকেটপ্রেমী বাংলাদেশের মানুষের মনে বিপিএলখ্যাত এই টুর্নামেন্ট কতটা জায়গা করে নিয়েছে, সেটা বোঝা যায় মহামান্য রাষ্ট্রপতির বিপিএলের দ্বিতীয় আসরও উদ্বোধনের ঘটনায়। বিপিএল আয়োজন নিয়ে গেলবারও অনিশ্চয়তা ছিল। এবারও অনিশ্চয়তা ছিল। তবে ধরনটা ভিন্ন। বিদেশি খেলোয়াড়রা বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের একটা ঘরোয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশ নিতে আদৌ আগ্রহী হবেন কি-না, সে ব্যাপারে সংশয় ছিল প্রথম আসর আয়োজনের সময়। কিন্তু সে অনিশ্চয়তা দূর হয়ে বিপিএল টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। চমক, জৌলুস, চার-ছক্কার মারের ফুলঝুরি_ কোনো দিক দিয়েই বিপিএল যে হেলাফেলার নয়, সেটা প্রথম আসরেই প্রমাণ হয়ে গেছে। স্বভাবতই এবারের আসরে আরও বিদেশি ক্রিকেটার যোগ দেবেন, এমন প্রত্যাশাই করা হচ্ছিল। কিন্তু এবারের বিপিএল আয়োজনের আগে বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফর নিরাপত্তাজনিত কারণে স্থগিত হয়ে যাওয়ায় এ নিয়ে দু'দেশের ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যে এক ধরনের টানাপড়েন দেখা দেয়। পাকিস্তান তাদের দেশের নাজুক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশকে খেলতে যেতে পীড়াপীড়ি করে। কিন্তু পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটার প্রেক্ষাপটে এ সফর নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ায় এবং ক্রিকেটারদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বিসিবি পাকিস্তান সফর বাতিল করে দেয়। এতে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড নাখোশ হয়। তারা পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তাদের খেলোয়াড়দের বিপিএল দ্বিতীয় আসরে যোগদান করা থেকে বিরত রাখে। অথচ পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশে নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা যেমন নেই, কোনো ধরনের চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতিও নেই। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের এ ধরনের প্রতিশোধমূলক বৈরী সিদ্ধান্ত ক্রিকেটীয় সুস্থতার লক্ষণ নয়। তবে আশার কথা এই যে, পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা না এলেও বিশ্বের অন্য কয়েকটি দেশের বোর্ড তাদের দেশের ক্রিকেটারদের এখানে খেলার ব্যাপারে অনাপত্তি দিয়েছে। শ্রীলংকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, এমনকি ইংল্যান্ড থেকেও ক্রিকেটার পাচ্ছে বিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। ফলে বিপিএলের দ্বিতীয় আসরের ঔজ্জ্বল্য কমবে না এতটুকু। বরং সবকিছু ছাপিয়ে এ দেশের মানুষের ক্রিকেট আবেগ ৩৪ দিনের প্রতিযোগিতার প্রতিটি খেলার সময়েই মাঠের দর্শক গ্যালারিতে, টিভি সেটের সামনে ফেটে পড়বে। উদ্বোধনীতেও দর্শক গ্যালারি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। তরুণ-তরুণীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক-উৎসাহ উদ্দীপনা। পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের আসা-না আসা নিয়ে যেন তাদের কিছু আসে-যায় না। তারুণ্য ক্রিকেটীয় আবেগে এই খামতিকে জয় করতে চায়। বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিবি) পাকিস্তানে দল না পাঠানো এবং বিপিএলে শেষ মুহূর্তে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের আসার অনুমতি না দেওয়া সংক্রান্ত সংকটকে যেভাবে ক্ষিপ্রতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে সামাল দিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা প্রতিকূলতা জয় করে বিপিএলের দ্বিতীয় আসর আয়োজনের জন্য বিসিবিকে অভিনন্দন জানাই। তবে সব প্রশংসা শেষ পর্যন্ত ক্রিকেটপ্রেমী দেশবাসীকে জানাতে হয়। তারা যেভাবে উদ্বোধনী অধিবেশন উপভোগ করেছেন, এই টুর্নামেন্টের প্রতিটি ম্যাচও তারা উপভোগ করবেন নান্দনিক উচ্ছলতায়। এদেশের মানুষের ক্রিকেট আবেগকে রোধ করতে পারে সাধ্য কার!
No comments