চাটগাইয়া মেজ্জান খাইলে বুঝিবা, ন খাইলে ফস্তাইবা- চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী 'মেজবান' by মাকসুদ আহমদ
চাটগাঁইয়া মেজ্জাইন্না খন, খাইলে বুঝিবা ন খাইলে ফস্তাইবা (অর্থাৎ চট্টগ্রামের মেজবানের খাবার খেলে স্বাদ বোঝা যায়, না খেলে আফসোস করতে হয়) এ উক্তিটি চট্টগ্রামে সর্বৰেত্রে প্রচলিত।
প্রায় চার যুগ ধরে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান দেশব্যাপী আলোচিত হয়ে আসছে। ইদানীং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এমনকি টকশোতেও চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী এ মেজবান নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা এমনকি মেজবানের ইতিবৃত্ত নিয়েও আলোচকরা মেতেছেন। চট্টগ্রামে মেজবানের জন্য হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে। এছাড়াও ঐতিহ্যবাহী এ মেজবানের অতিথিদের খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়ামে।ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রামের মেজবান শুধু দেশেই নয় প্রবাসীদের কাছেও স্মরণীয়। দেশের একমাত্র চট্টগ্রামেই এ ধরনের মেজবানের আয়োজন করা হয় বলে ইতিহাস রয়েছে। প্রায় ৫০ বছর ধরে এ আয়োজনটি চট্টগ্রামে দিন দিন জমজমাট হয়ে উঠছে। প্রকৃতপৰে মৃতু্যবার্ষিকী, কোন প্রতিষ্ঠানের অভিষেক, পুনর্মিলনীসহ বড় বড় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মেজবানের আয়োজন করা হয়। চট্টগ্রামবাসীও ৫০ বছরের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এ মেজবান করে আসছে।
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানে সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কন্যা টুম্পার মৃতু্যবার্ষিকীতে প্রায় ৬০ হাজার নগরবাসীকে দাওয়াত দেয়া হয়। সুবিশাল এ আয়োজনের জন্য নগরীর ৫টি স্থানে একসঙ্গে খাবার পরিবেশনের মাধ্যমে অতিথিদের আপ্যায়ন করানো হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার মৃতু্যতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পৰ থেকে রংপুরে প্রায় ৬০টি গরম্ন জবাই করে মেজবানের প্রথমবারের মত উত্তরাঞ্চলে আয়োজন করা হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী চাঁটগাইয়া মেজবানের। এ মেজবানের রান্নার জন্য বাবুর্চিও নেয়া হয়েছিল চট্টগ্রাম থেকে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম কাবে আয়োজিত রিহ্যাব মেলার শেষ দিনে ঐতিহ্যবাহী এ মেজবান এ কাবকে ঘিরে জমে উঠেছিল ভিন্ন আঙ্গিকে। এছাড়াও বিজিএমইএ'র তত্বাবধানেও এ ধরনের মেজবানের আয়োজন করা হয়েছে বেশ কয়েকবার। এছাড়াও দেশের বেশ কয়েকটি জাতীয় পত্রিকাও বাজারে আসার আগে মেজবানের আয়োজন করেছে। বিশেষ করে পত্রিকাগুলো হকারদেরকে আয়ত্বে রাখার উদ্দেশ্যেই এ ধরনের আয়োজন করেছে বলে শোনা গেছে।
মেজবানকে ঘিরে প্রয়োজন হয় বড় আঙিনার। চট্টগ্রামের সমতল থেকে সুউচ্চে গড়ে উঠা কিং অব চিটাগাং এর আঙিনাই সবচেয়ে বড় এবং মেজবানের জন্য উপযোগী। এছাড়াও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তন, লেডিস কাব, চট্টগ্রাম কাবের টেনিস গ্রাউন্ড, এমনকি চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামকেও মেজবানের মিলনায়তন হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
চট্টগ্রামবাসির মতে, মেজ্জাইন্না খন, খাইলে বুঝিবা ন খাইলে ফসত্মাইবা (অর্থাৎ মেজবানের খেলে স্বাদ বুঝা যায়, না খাইলে আফসোস করতে হয়) এ উক্তিটি প্রায় শোনা যায় চট্টগ্রামে বিভিন্ন অঞ্চলে। এক সময় মেজবানের বিষয়টি শুধুমাত্র চট্টগ্রামের গ্রামাঞ্চলে ছোটখাট আয়োজনে পরিবেশন ছিল। কিন্তু তা এখন ছড়িয়ে শহরমুখী যেমন হয়েছে তেমনি বিশালতাও চলে এসেছে। বিশেষ করে বিত্তশালী ও ধনাঢ্য পরিবারের পৰ থেকে চট্টগ্রামের বিশাল আয়তন কমিউনিটি সেন্টারগুলো ভাড়া নেয়া হয় এ উপলৰে। পরিপাটি আয়োজনের মধ্য দিয়ে চলে আকনি বিরিয়ানির সঙ্গে চনার ডালে হাড্ডিসহ মাংস ও সে সঙ্গে রয়েছে গরম্নর নলার ঝোল। আয়োজনটি দেখে অনেকেরই জি্বভে পানি চলে আসে। এ মেজবান খেতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নামীদামী ও খ্যাতনামা মানুষকেও এ আয়োজনে পাওয়া যায়।
No comments