দশ ট্রাক অস্ত্র এসেছিল সাকা পরিবারের জাহাজে!- ০ নেভির জাহাজ লাইট জ্বালিয়ে পথ দেখায় অস্ত্র খালাসের- ০ ঘুরে ফিরে আসছে হাওয়া ভবন, তারেক ও আইএসআই-এর কথা by মোয়াজ্জেমুল হক
চাঞ্চল্যকর দশ ট্রাক অস্ত্রের চালানের সঙ্গে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই কানেকশনে সম্পৃক্ত ছিল হাওয়া ভবন। আর হাওয়া ভবনের চালিকা শক্তির সঙ্গে এ চালান আসা ও খালাস কার্যক্রম নিয়ে তৎকালীন জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র্র প্রতিমন্ত্রী, সামরিক বেসামরিক ও দুই গোয়েন্দা সংস্থার কর্ণধাররা কেউ প্রত্য আর কেউ পরোভাবে জড়িত ছিলেন।
তবে একেবারে পরিষ্কার হয়েছে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফা'র (ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম) জন্য আনা এ অস্ত্রের চালান খালাসে তৎকালীন জোট সরকারের গ্রীন সিগন্যাল ছিল। আইএসআই'র মনিটরিংয়ে আনা এ অস্ত্রের চালান চট্টগ্রামে খালাসের ব্যাপারে সরকারী বিভিন্ন সংস্থার কর্ণধারদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছিল উলফার বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সামরিক প্রধান পরেশ বড়ুয়া। দেশ বিদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী এ অস্ত্র চালান মামলার তদনত্মে সংস্থা সিআইডি এসব বিষয় নিশ্চিত হয়েছে। তদনত্ম প্রক্রিয়ায় আগামীতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে আসামি করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না সিআইডি কর্মকর্তারা। তবে হাওয়া ভবনের কর্ণধার তারেক জিয়া এবং জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর সম্পৃক্ততা ছিল কিনা তদনত্মে তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার তদনত্ম কাজ মনিটরিংয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ও সিআইডির চট্টগ্রাম অঞ্চলের এসপি মোঃ মুসলিম সোমবার জনকণ্ঠকে জানান, এ মামলার তদনত্ম প্রক্রিয়ায় ডালপালার বিসতৃতি ঘটেছে বহুদূর। ফলে সবকিছু গুছিয়ে আনার প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় যাদেরই নাম আসবে এবং সা্যপ্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।অস্ত্র মামলার প্রধান আসামি হাফিজুর রহমানের রবিবার গভীর রাত পর্যনত্ম দেয়া দ্বিতীয় দফার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে সে বার বার উলেস্নখ করেছে তৎকালীন সরকারের সংশিস্নষ্ট সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা এ অস্ত্রের চালান খালাসের সঙ্গে জড়িত। অস্ত্রের চালান খালাসের আগে উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া তাকে নিয়ে হাওয়া ভবনে গিয়েছিলেন। অবশ্য তাকে হাওয়া ভবনের বাইরে রেখে পরেশ বড়ুয়া বড়ুয়া হাওয়া ভবনের অভ্যনত্মরে যান এবং সেখানে তৎকালীন এনএসআই'র পরিচালক শাহাব উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। হাফিজের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে প্রদত্ত বক্তব্য সিআইডি কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে পরীা-নিরীা করেছেন এবং এ জবানবন্দীর ভিত্তিতে আরও জোরালো করা হয়েছে তদনত্মের গতি।
এদিকে, এ মামলায় গ্রেফতারকৃত গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই'র তৎকালীন ডিজি মেজর জেনারেল (অব) রেজ্জাকুল হায়দারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত আবারও ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। সিআইডির প থেকে তাকে ৭ দিনের রিমান্ড দানের আবেদন জানানো হলে সোমবার এ আবেদনের শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুল হক ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ঢাকায় সিআইডি সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হবে যে কোন সময়। এনএসআইর সাবেক এ ডিজি হাওয়া ভবনের অত্যনত্ম ঘনিষ্ঠজন বলে সা্যপ্রমাণ রয়েছে।
তদনত্মকারী সংস্থা সিআইডি মনে করছে_ রেজ্জাকুল হায়দারের কাছ থেকে পাওয়া যাবে গুরম্নত্বপূর্ণ আরও অনেক তথ্য। কিন্তু ইতোপূর্বে দুদফা রিমান্ডে নিয়ে ঢাকায় টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদ করেও তার মুখ খোলানো যায়নি। এনএসআই'র গ্রেফতারকৃত ৫ কর্মকর্তার মধ্যে ৪ জনই ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিলেও রাজি করানো যায়নি রেজ্জাকুলকে। অথচ গ্রেফতারকৃত অন্যান্য আসামির বক্তব্যে নানাভাবে এসেছে তার নাম। সে কারণে তাকে তৃতীয় দফার রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে সিআইডির ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে। তদনত্ম কর্মকর্তা সিআইডির এএসপি মনিরম্নজ্জামান এনএসআই'র সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা রেজ্জাকুল হায়দারের সাত দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করেন। আবেদনে তিনি বলেন, একই সংস্থার অন্য সবাই জবানবন্দী প্রদান করলেও রেজ্জাকুল হায়দারের বক্তব্য গ্রহণ সম্ভব হয়নি। মামলার সুষ্ঠু তদনত্ম রিপোর্ট দাখিলের জন্য তার বক্তব্য সংযোজন অপরিহার্য।
রাষ্ট্র পরে কেঁৗসুলি চট্টগ্রাম মহানগর পিপি এ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে তৎকালীন সরকারের নীতিনির্ধারক মহল জড়িত ছিল, যা বিভিন্ন সা্য প্রমাণে বেরিয়ে এসেছে। রেজ্জাকুল হায়দার ছিলেন গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই-এর তৎকালীন পরিচালক এবং সরকারের প্রভাবশালী নীতিনির্ধারক মহলের ঘনিষ্ঠজন। কিন্তু দফায় দফায় রিমান্ডেও তিনি কোন তথ্য প্রদান করেননি। অথচ, এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে তার সরাসরি সংশিস্নষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। তাকে পুনরায় সময় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে। এ সময় আদালতে রেজ্জাকুল হায়দারের আইনজীবী রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করেন। আদালত উভয় পরে বক্তব্য বিবেচনা করে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সিআইডির বিশেষ সুপার মোঃ মুসলিম জনকণ্ঠকে জানান, সুবিধাজনক যে কোন সময় মেজর জেনারেল (অব) রেজ্জাকুল হায়দারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। এ জন্য তারা প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনার অপোয় রয়েছেন।
এদিকে, এ পর্যনত্ম তদনত্ম শেষে সিআইডি কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়েছেন, এ মামলায় গ্রেফতারকৃত গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই'র তৎকালীন পরিচালক উইং কমান্ডার (অব) শাহাব উদ্দিন ছিলেন অস্ত্র চালানের ঘটনা নিয়ে হাওয়া ভবন সিন্ডিকেটের সঙ্গে তৎপরতার মূল হোতা। তার নির্দেশে এনএসআই'র চট্টগ্রাম অফিসের তৎকালীন ফিল্ড অফিসার গ্রেফতারকৃত আকবর হোসেন অস্ত্রের চালান খালাস করার জন্য ট্রাক ভাড়ায় নিয়োজিত হয়েছিলেন। হাফিজ তার প্রদত্ত জবানবন্দীতে আরও বলেছে, গ্রেফতার হবার পর থেকে সে তার জবানবন্দীর এসব কথা শুরম্নতে প্রকাশ করতে উদ্যত হয়েছিলেন। কিন্তু গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের প েক্রসফায়ারের হুমকি দেয়ার কারণে তিনি তখন থমকে যান।
তিনি পরিষ্কার করে জবানবন্দীতে বলেছেন, অস্ত্রের চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিল বিগত জোট সরকারের নীতিনির্ধারকরা। পুরো বিষয়টি মনিটরিং করেছে বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। আর সরকারী প্রভাবশালী মহলের নির্দেশনায় বিশাল এ চালান খালাস ও গনত্মব্যে পেঁৗছাতে তৎপর ছিল সরকারের দুটি গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এবং ডিজিএফআই। সোমবার সিআইডির প থেকে তদনত্ম কাজে জড়িত এক কর্মকর্তা জানান, প্রধান আসামি হাফিজুর রহমানের দ্বিতীয় দফা জবানবন্দীর পর এ নিয়ে আর কোন সংশয় নেই।
প্রসঙ্গত, অস্ত্রের গনত্মব্য সম্পর্কে নিশ্চিত হবার পর তদনত্মে এখন সিআইডির মিশন অস্ত্র বহনকারী জাহাজ শনাক্ত করা। মূলত সে কারণেই মামলার প্রধান আসামি হাফিজুর রহমানকে তৃতীয়বার রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ১৬৪ ধারায় প্রদত্ত জবানবন্দীতে তিনি নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করলেও জাহাজ সম্পর্কে কোন তথ্য প্রদান করেননি। বলেছেন, জাহাজ দেখলেও রাতের অন্ধকারে তিনি নাম পড়তে পারেননি।
এদিকে, আসামিদের কেউ জাহাজ সম্পর্কে তেমন নিশ্চিত করে তথ্য না দিলেও বসে নেই সিআইডি। ইতোমধ্যে তদনত্মকারী সংস্থা তিনটি শিপিং কোম্পানির চট্টগ্রামের কার্যালয়ে তলস্নাশি চালিয়েছে। পরীা নিরীা করেছে ঐ সময়ের চট্টগ্রামে আসা-যাওয়া জাহাজের তালিকা। কিছু কাগজপত্রও নিয়ে যাওয়া হয় ঐ তিন অফিস থেকে।
চট্টগ্রাম সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ২০০৯ সালের মার্চ মাসে বিভিন্ন মিডিয়ার সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেছিলেন, তিনি নিশ্চিত অস্ত্রের এ চালান এসেছে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পরিবারের মালিকানাধীন কিউসি শিপিংয়ের একটি জাহাজযোগে। তাঁর দেয়া তথ্য মতে, ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে অবস্থানরত জাহাজের তালিকায় কিউসি শিপিংয়ের জাহাজ 'কিউসি টিল' এর নাম রয়েছে। অস্ত্রের এ চালান আসা এবং খালাস কাজে কোস্টগার্ড, নেভি, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ সরকারের সব ক'টি মহলের সহযোগিতা ছিল বলে জোর দাবি রেখে তিনি বলেন, সুষ্ঠু তদনত্ম করলে মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
সিআইডির একটি সূত্র জানায়, মামলার প্রধান আসামি হাফিজুর রহমান দ্বিতীয় দফায় জবানবন্দীতে অত্যনত্ম খোলামেলা বক্তব্য রাখায় তদনত্ম কাজে নতুন গতি এসেছে।
আদালতের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা যায়_ জবানবন্দীতে হাফিজ বলেছেন, অস্ত্রগুলো সরকারের জেনেই তিনি খালাসের ঠিকাদারী নিয়েছিলেন। পরে ঘটনাস্থলে চট্টগ্রামের তৎকালীন ডিসি (পোর্ট) আবদুলস্নাহ হেল বাকি এবং এসি (পোর্ট) মাহমুদুর রহমানের ভূমিকার কারণে তিনি বুঝতে পারেন, অস্ত্রগুলো উলফার। এর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এবং ডিজিএফআই। যেহেতু সরকারের দায়িত্বশীল এ দুটি সংস্থার লোকজন সর্বণিক তদারকিতে ছিলেন সেহেতু তিনি ধারণা করেছিলেন এ অস্ত্র রাষ্ট্রের। ২০০৫ সালে গ্রেফতারের পর প্রথম জিজ্ঞাসাবাদেও তিনি এসব তথ্য দিয়েছিলেন। কিন্তু উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা তখন তাকে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, এসব কথা বললে তুই মরবি।
হাফিজুর রহমান তার জবানবন্দীতে আরও জানান, রাতের আঁধারে অস্ত্র বহনকারী জাহাজটিকে পথ দেখাতে নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে আলো দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে। প্রথমে এ চালান খালাসের চিনত্মা ছিল চট্টগ্রাম বন্দরে। কিন্তু সেখানে সমস্যা হবে মনে করে নেয়া হয় সিইউএফএল জেটিতে। তিনি নিজেকে স্রেফ একজন শ্রমিক সরবরাহকারী বলে দাবি করেন।
তৎকালীন সরকারের কোন মন্ত্রী জড়িত ছিলেন কিনা এ প্রসঙ্গে হাফিজ জানান, এর সঙ্গে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র জড়িত থাকতে পারে। তবে সরাসরি খালাস প্রক্রিয়ায় ছিল দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা। তবে সংস্থা দুটি কাদের নির্দেশনায় কাজ করেছে তা তার জানা নেই। দীর্ঘ জবানবন্দীতে ইনিয়ে বিনিয়ে তার কথায় উঠে আসে হাওয়া ভবনের নাম। এনএসআই'র তৎকালীন পরিচালক উইং কমান্ডার (অব) শাহাব উদ্দিন তাঁকে নিয়ে হাওয়া ভবনে গিয়েছিলেন। তবে সেখানে কার সঙ্গে কথা হয়েছে তা তিনি জানেন না। কারণ তিনি ছিলেন বাইরে। আর অস্ত্র বহনকারী জাহাজ দেখলেও অন্ধকারের জন্য তিনি জাহাজটির নাম দেখেননি।
তদনত্মকারী সংস্থা সিআইডি সূত্রে জানা যায়, হাফিজের জবানবন্দীতে ঘুরেফিরে এসেছে এনএসআই ও ডিজিএফআই'র নাম। অস্ত্র খালাসে জড়িত থাকার কথা তিনি অস্বীকার করেননি। তবে তার দাবি_ অস্ত্রগুলো যে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার ছিল তা তিনি জানতেন না। শুধু তাই নয়, সেগুলো যে অস্ত্র ছিল তাও তিনি আগে থেকে জানতেন না।
এদিকে, গ্রেফতারকৃত আসামি ও সন্দেহভাজনদের জবানবন্দীতে বার বার একই ধরনের বক্তব্য আসায় সিআইডির তদনত্ম কাজ ঘুরপাক খাচ্ছে মূলত দুই গোয়েন্দা সংস্থার অর্ধডজন কর্মকর্তার মধ্যে। গ্রেফতারকৃত ৫ গোয়েন্দা কর্মকর্তার মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব) রেজ্জাকুল হায়দার বিগত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পুত্র তারেক রহমান এবং হাওয়া ভবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। টিএফআই সেলে দু'দফায় জিজ্ঞাসাবাদের পরও তিনি মুখ খোলেননি এ ব্যাপারে। হাফিজের কাছ থেকে বেশকিছু গুরম্নত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ায় এসব বিষয়ে আবারও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে রেজ্জাকুল হায়দারকে।
উলেস্নখ্য, ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে সিইউএফএল ঘাটে খালাসকালে ধরা পড়ে এ অস্ত্রের চালান। এ ঘটনায় অস্ত্র ও চোরাচালানের অপরাধে দুটি মামলা দায়ের হয়। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন এনএসআই'র সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আবদুর রহিম, মেজর জেনারেল (অব) রেজ্জাকুল হায়দার, পরিচালক উইং কমান্ডার (অব) শাহাব উদ্দিন, উপপরিচালক মেজর (অব) লিয়াকত হোসেন এবং এনএসআই'র মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন। মামলায় সিইউএফএলের তৎকালীন এমডি মহসিন তালুকদার ও জিএম প্রশাসন এনামুল হকও এখন কারাগারে। বিভিন্ন বিষয়ে এ পর্যনত্ম জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে মামলার প্রথম তদনত্ম কমিটির সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্র্র সচিব ওমর ফারম্নক, সিআইডির তৎকালীন ডিআইজি ফররম্নখ আহমেদ, এসবির তৎকালীন ডিআইজি শামসুল ইসলাম এবং এনএসআই'র আরেক সাবেক পরিচালক এনামুর রহমানকে।
সিআইডি সূত্রে জানানো হয়েছে, ইতোপূর্বে গ্রেফতারকৃত ৫ এনএসআই কর্মকর্তার মধ্যে ৪ জন যে জবানবন্দী দিয়েছেন তাতে একে অপরকে দোষারোপ করেছেন। প্রথমে গ্রেফতার হয়েছিল আকবর হোসেন। জিজ্ঞাসাবাদের পর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে তিনি বলেন, পরিচালক শাহাব উদ্দিনের নির্দেশেই তিনি ট্রাক ভাড়া করেছিলেন। তাঁর বক্তব্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় শাহাব উদ্দিনকে। জবানবন্দীতে শাহাব উদ্দিন জানান, ঘটনার দিন তিনি ছিলেন সিএমএইচে চিকিৎসাধীন। তার অনুপস্থিতিতে অস্ত্র খালাসকালে দায়িত্ব পালন করেছেন পরিচালক মেজর (অব) লিয়াকত হোসেন। এ তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় লিয়াকতকে। দু'দফায় রিমান্ডে নিয়ে টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁর কাছ থেকে পাওয়া যায় বেশকিছু গুরম্নত্বপূর্ণ তথ্য। কিন্তু আদালতে স্বীকারোক্তি জবানবন্দী প্রদানের পূর্বে তিনি বেঁকে বসেন। মাত্র ৫ মিনিট চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ওসমান গনির খাস কামরায় অবস্থান করে এ কর্মকর্তা বেরিয়ে আসেন। তাঁর কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছিল। এ অবস্থায় বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ে যায় সিআইডি। শেষ পর্যনত্ম লিয়াকতকে শনাক্ত করতে আয়োজন করতে হয় টিআই প্যারেডের। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে মহানগর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমানের উপস্থিতিতে দুই পুলিশ সার্জেন্ট আলাউদ্দিন ও হেলাল উদ্দিন লিয়াকতকে শনাক্ত করে জানান, এ লিয়াকতই কথিত উলফা নেতা আবুল হোসেন পরিচয়ে সশরীরে উপস্থিত থেকে খালাস কাজ তদারক করছিলেন। শেষ পর্যনত্ম লিয়াকতের রা পাওয়ার আর কোন উপায় ছিল না। তিনি দোষ চাপান এনএসআই'র সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আবদুর রহিমের ওপর। বলেছেন, যা করেছি ডিজির নির্দেশেই করেছি। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রহিম জানান, তার সস্ত্রীক দুবাই সফর ছিল পাকিসত্মানী মালিকানার দুবাই ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এআরওয়াই-এর প েবাংলাদেশে একটি টিভি চ্যানেল চালু করা। সে সফর ছিল সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক। এর সঙ্গে অস্ত্রের চালানের কোন সংশিস্নষ্টতা ছিল না বলে তিনি দাবি করলেও তদনত্ম কর্মকর্তারা তা মানতে নারাজ। এর নেপথ্যে অস্ত্র চালান আসার ও খালাসের ব্যাপারটি জড়িত বলে তাদের বদ্ধমূল ধারণা। সিআইডির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সোমবার জানিয়েছেন, কোন একজন আসামি অপরাধের সঙ্গে সংশিস্নষ্টতার কথা নিজেই স্বীকার করল কিনা সেটিই আসল বিষয় নয়। বরং অন্যভাবে সা্য প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁর বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনে কোন বাধা নেই।
No comments