আর্ট ক্যাম্প- চলো অচিনপুর by রজত কান্তি রায়
ক্রাক ইন্টারন্যাশনাল আর্ট ক্যাম্প, ২০১২—অনুষ্ঠিত হলো ২৫ থেকে ৩০ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার রহিমপুরে স্মরণ মৎস্য বীজ খামারে। এশিয়ার পাঁচটি দেশের ২৮ জন শিল্পী এই ক্যাম্পে অংশ নিয়েছেন। কিউরেটরের দায়িত্ব পালন করেন ভারতের শতদ্রু শোভন ভাদুড়ি ও বাংলাদেশের শাওন আকন্দ।
বাংলাদেশসহ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কার শিল্পীরা এই ক্যাম্পে অংশ নেন।
এবারের ক্যাম্পের মূল ভাবনা বা কনসেপ্ট নোট ছিল ‘অচিনপুর/অচেতন’। বাংলার সহজিয়া বাউল তরিকায় যেটাকে বলে ‘অচিনপুর’ সেটা আসলে কী? কোথায় এই দেশ? কেমন সেই দেশের ঘরবসতি? ফ্রয়েডের তত্ত্বানুসারে যেটাকে বলে ‘আনকনসাস’ তা কি অচিনপুরের অন্য নাম? তাই যদি হয় তবে সেই অচিনপুর/আনকনসাসের রূপ ও চেহারা কী ও কত প্রকার—এই মূল ভাবনাকে কেন্দ্র করে শিল্পীরা নিজস্ব ভঙ্গিতে বিভিন্ন মাধ্যমে শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন। সাইট স্পেসিফিক ইনস্টলেশন/স্থাপনাশিল্প ছাড়াও ভিডিও আর্ট ও পারফরম্যান্স আর্টের মাধ্যমে অচিনপুর বা আনকনসাস সম্পর্কে নানা ধরনের চিন্তার প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন শিল্পীরা।
এই আর্ট ক্যাম্পের একটা প্রধান বৈশিষ্ট্য এই যে এখানে শিল্পীদের আশপাশে ছড়িয়ে থাকা পরিবেশবান্ধব উপাদান দিয়ে শিল্পকর্ম তৈরিতে উৎসাহিত করা হয়। যেমন, কলকাতার শিল্পী তপতী চৌধুরী বাঁশ-কাঠ-খড় আর আশপাশে ছড়িয়ে থাকা জিনিস সংগ্রহ করে তৈরি করেছিলেন একটা বড় নৌকা—যেটা রাখা ছিল ডাঙ্গায়। ক্যাম্পের শেষদিন এটা পানিতে না ভাসিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হলো। তাঁর কাজের শিরোনাম ছিল ‘মন পবনের নাও’। তার পাশেই বাংলাদেশের শিল্পী পলাশ চৌধুরী করেছিলেন সাইটস্পেসিফিক স্থাপনাশিল্প। পুকুরের পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল সাগর জাহিদের শিল্পকর্ম। তিনি কলাগাছের বাকল, ধুন্দুল ফলের শুকনো অংশ, পাটকাঠি ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করেছিলেন অজস্র ‘পানি পোকা’-সদৃশ অবয়ব। মনের গহিনে লুকিয়ে থাকা অসংখ্য ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে সেগুলো ভাসছিল পুকুরের সবুজ পানিতে। নেপালের শিল্পী সাবিতা ডাঙ্গল পাটকাঠি দিয়ে গোলক ধাঁধা তৈরি করে তার ভেতরে স্থাপন করেছিলেন নিজের প্রতিকৃতি। তার পাশেই ছিল ভারতের শিল্পী রাকেশ প্যাটেলের স্থাপনাশিল্প। সেখানে দর্শকেরা নিজেদের অচেতন ইচ্ছাগুলো উড়িয়ে দিচ্ছিলেন সাবানের বুদ্বুদের আদলে। পানি আর মাটির সন্ধিস্থলে শুকনো ডালপালা দিয়ে বাংলাদেশের শিল্পী আফসানা শারমিন ঝুমা তৈরি করেছিলেন আরেকটি স্থাপনা—যার কেন্দ্রে ছিল অন্তহীন শূন্যতার আভাস। সেখানে যুক্ত করা হয়েছিল নীল রঙের ছোঁয়া। পুকুরের পাড় দিয়ে আরেকটু এগোলেই পথের ওপর ঝুঁকে থাকা গাছে মাছ ধরা বাঁশের ‘পলো’ আর মাকড়সার জালের আদলে করা সাদা বয়নের সঙ্গে হাতুড়ি আর ক্যাকটাস যুক্ত করে ভারতের পুনার শিল্পী আর্তি কুশুওয়াহা তৈরি করেছিলেন ‘ড্রিম ক্যাচার’ বা স্বপ্ন ধরার খাঁচা। বাংলাদেশের রাজীব আশরাফের কাজ ছিল একটি সাদা জানালা এবং তার চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নানা রঙের হাতের সমন্বয়ে, অধরাকে ধরার তীব্র আকুতি তাঁর কাজে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে। কারিশমা চৌধুরীর কাজ ছিল দুটি পুতুলকে কেন্দ্র করে। হাত দিয়ে ছোঁয়া যায় এমন একটা গাছের ডালে ছোট ছোট ঘণ্টা আর পাখির পালক ঝুলিয়ে দিয়ে মায়াবী পরিবেশ তৈরি করেছিলেন তিনি। শিশুমনের কল্পনার রাজ্য কিংবা শৈশব স্মৃতি তাঁর কাজের প্রধান বিষয়বস্তু। আমাদের মনোজগতের অনেকটা গড়ে উঠে শিশুকালে—সে কথাই যেন শিল্পী বলতে চেয়েছেন তাঁর কাজে। ভারতের শিল্পী শতদ্রু শোভন পুকুরের পাড়ে একটা মাচার ওপর পাটের আঁশ, বিভিন্ন ডিজিটাল প্রিন্ট, বিশেষ ধরনের আলো দিয়ে গড়ে ছিলেন তাঁর সাইটস্পেসিফিক স্থাপনা। স্বপ্নের মায়াবী জগৎ তৈরি হয়েছিল তাঁর কাজে। এর পাশেই একই শিল্পী বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের টুকরো, কাপড়ের জালি ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করেছিলেন আরেকটি স্থাপনাশিল্প। শ্রীলঙ্কার শিল্পী আসমার আদমের কাজও ছিল আলোনির্ভর। নেপালের আরেক শিল্পী শংকর সান শ্রেষ্ঠা তাঁর দুটি কাজে সচেতন থেকে অচেতনে পৌঁছানোর দীর্ঘ যাত্রার অনুভূতি তুলে ধরেছেন। তাঁর ব্যবহার্য উপাদান ছিল মটির সানকি, পাতা, ফুলের পাপড়ি ইত্যাদি।
খুলনার শিল্পী রাজনের কাজ ছিল মাটির ছোট ছোট অবয়বের সঙ্গে পাটকাঠির কাঠামো তৈরি করে সাদা কাপড়ের ওপর নানা রঙের আলোর খেলা। এর পাশে পলাশ চৌধুরী ও অনন্তকুমার দাস তৈরি করেছিলেন ‘অচেতনের পথ’। পাকিস্তানের শিল্পী তাইয়্যাবা আনোয়ার আহমেদ মূলত লিখিয়ে। তিনি তৈরি করেছিলেন একটি কবরস্থান—যেখানে দর্শকেরা তাদের দুঃস্বপ্নগুলো কাগজে লিখে চিরদিনের জন্য কবর দিচ্ছিল। তাইয়্যাবা চান সবাই যেন দুঃস্বপ্ন ভুলে শান্তিতে থাকে—এমন কি দুঃস্বপ্নগুলোও। কলকাতার শিল্পী তপতী আরেকটি কাজে বিভিন্ন দরজা তৈরি করেছিলেন প্রতীকী অর্থে—যেন এই দরজাগুলো দিয়ে পৌঁছে যাওয়া যাবে অচিনপুরে। পাকিস্তানের আরেক শিল্পী শিবলী মুনীর আদিগন্ত বিস্তৃত সবুজের মাঝে স্থাপন করেছিলেন লাল কাপড়ের একটা বৃত্ত। আরেকটা কাজে তিনি লাল কাপড় লাইনের মতো ব্যবহার করে আটকাতে চেয়েছেন সীমানা। ভারতের শিল্পী সুনীল শ্রী মাটি দিয়ে কাজ করেছেন—যার মধ্যে তিনি স্থাপন করেছেন নানা গাছের বীজ।
এ ছাড়া এই আর্ট ক্যাম্পে একাধিক পারফরম্যান্স আর্ট হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও আর্ট। এর সবকিছুতেই বিভিন্নভাবে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে অচিনপুরের/অচেতনের ঘরবাড়ি ও মানুষজন।
এবারের ক্যাম্পের মূল ভাবনা বা কনসেপ্ট নোট ছিল ‘অচিনপুর/অচেতন’। বাংলার সহজিয়া বাউল তরিকায় যেটাকে বলে ‘অচিনপুর’ সেটা আসলে কী? কোথায় এই দেশ? কেমন সেই দেশের ঘরবসতি? ফ্রয়েডের তত্ত্বানুসারে যেটাকে বলে ‘আনকনসাস’ তা কি অচিনপুরের অন্য নাম? তাই যদি হয় তবে সেই অচিনপুর/আনকনসাসের রূপ ও চেহারা কী ও কত প্রকার—এই মূল ভাবনাকে কেন্দ্র করে শিল্পীরা নিজস্ব ভঙ্গিতে বিভিন্ন মাধ্যমে শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন। সাইট স্পেসিফিক ইনস্টলেশন/স্থাপনাশিল্প ছাড়াও ভিডিও আর্ট ও পারফরম্যান্স আর্টের মাধ্যমে অচিনপুর বা আনকনসাস সম্পর্কে নানা ধরনের চিন্তার প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন শিল্পীরা।
এই আর্ট ক্যাম্পের একটা প্রধান বৈশিষ্ট্য এই যে এখানে শিল্পীদের আশপাশে ছড়িয়ে থাকা পরিবেশবান্ধব উপাদান দিয়ে শিল্পকর্ম তৈরিতে উৎসাহিত করা হয়। যেমন, কলকাতার শিল্পী তপতী চৌধুরী বাঁশ-কাঠ-খড় আর আশপাশে ছড়িয়ে থাকা জিনিস সংগ্রহ করে তৈরি করেছিলেন একটা বড় নৌকা—যেটা রাখা ছিল ডাঙ্গায়। ক্যাম্পের শেষদিন এটা পানিতে না ভাসিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হলো। তাঁর কাজের শিরোনাম ছিল ‘মন পবনের নাও’। তার পাশেই বাংলাদেশের শিল্পী পলাশ চৌধুরী করেছিলেন সাইটস্পেসিফিক স্থাপনাশিল্প। পুকুরের পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল সাগর জাহিদের শিল্পকর্ম। তিনি কলাগাছের বাকল, ধুন্দুল ফলের শুকনো অংশ, পাটকাঠি ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করেছিলেন অজস্র ‘পানি পোকা’-সদৃশ অবয়ব। মনের গহিনে লুকিয়ে থাকা অসংখ্য ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে সেগুলো ভাসছিল পুকুরের সবুজ পানিতে। নেপালের শিল্পী সাবিতা ডাঙ্গল পাটকাঠি দিয়ে গোলক ধাঁধা তৈরি করে তার ভেতরে স্থাপন করেছিলেন নিজের প্রতিকৃতি। তার পাশেই ছিল ভারতের শিল্পী রাকেশ প্যাটেলের স্থাপনাশিল্প। সেখানে দর্শকেরা নিজেদের অচেতন ইচ্ছাগুলো উড়িয়ে দিচ্ছিলেন সাবানের বুদ্বুদের আদলে। পানি আর মাটির সন্ধিস্থলে শুকনো ডালপালা দিয়ে বাংলাদেশের শিল্পী আফসানা শারমিন ঝুমা তৈরি করেছিলেন আরেকটি স্থাপনা—যার কেন্দ্রে ছিল অন্তহীন শূন্যতার আভাস। সেখানে যুক্ত করা হয়েছিল নীল রঙের ছোঁয়া। পুকুরের পাড় দিয়ে আরেকটু এগোলেই পথের ওপর ঝুঁকে থাকা গাছে মাছ ধরা বাঁশের ‘পলো’ আর মাকড়সার জালের আদলে করা সাদা বয়নের সঙ্গে হাতুড়ি আর ক্যাকটাস যুক্ত করে ভারতের পুনার শিল্পী আর্তি কুশুওয়াহা তৈরি করেছিলেন ‘ড্রিম ক্যাচার’ বা স্বপ্ন ধরার খাঁচা। বাংলাদেশের রাজীব আশরাফের কাজ ছিল একটি সাদা জানালা এবং তার চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নানা রঙের হাতের সমন্বয়ে, অধরাকে ধরার তীব্র আকুতি তাঁর কাজে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে। কারিশমা চৌধুরীর কাজ ছিল দুটি পুতুলকে কেন্দ্র করে। হাত দিয়ে ছোঁয়া যায় এমন একটা গাছের ডালে ছোট ছোট ঘণ্টা আর পাখির পালক ঝুলিয়ে দিয়ে মায়াবী পরিবেশ তৈরি করেছিলেন তিনি। শিশুমনের কল্পনার রাজ্য কিংবা শৈশব স্মৃতি তাঁর কাজের প্রধান বিষয়বস্তু। আমাদের মনোজগতের অনেকটা গড়ে উঠে শিশুকালে—সে কথাই যেন শিল্পী বলতে চেয়েছেন তাঁর কাজে। ভারতের শিল্পী শতদ্রু শোভন পুকুরের পাড়ে একটা মাচার ওপর পাটের আঁশ, বিভিন্ন ডিজিটাল প্রিন্ট, বিশেষ ধরনের আলো দিয়ে গড়ে ছিলেন তাঁর সাইটস্পেসিফিক স্থাপনা। স্বপ্নের মায়াবী জগৎ তৈরি হয়েছিল তাঁর কাজে। এর পাশেই একই শিল্পী বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের টুকরো, কাপড়ের জালি ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করেছিলেন আরেকটি স্থাপনাশিল্প। শ্রীলঙ্কার শিল্পী আসমার আদমের কাজও ছিল আলোনির্ভর। নেপালের আরেক শিল্পী শংকর সান শ্রেষ্ঠা তাঁর দুটি কাজে সচেতন থেকে অচেতনে পৌঁছানোর দীর্ঘ যাত্রার অনুভূতি তুলে ধরেছেন। তাঁর ব্যবহার্য উপাদান ছিল মটির সানকি, পাতা, ফুলের পাপড়ি ইত্যাদি।
খুলনার শিল্পী রাজনের কাজ ছিল মাটির ছোট ছোট অবয়বের সঙ্গে পাটকাঠির কাঠামো তৈরি করে সাদা কাপড়ের ওপর নানা রঙের আলোর খেলা। এর পাশে পলাশ চৌধুরী ও অনন্তকুমার দাস তৈরি করেছিলেন ‘অচেতনের পথ’। পাকিস্তানের শিল্পী তাইয়্যাবা আনোয়ার আহমেদ মূলত লিখিয়ে। তিনি তৈরি করেছিলেন একটি কবরস্থান—যেখানে দর্শকেরা তাদের দুঃস্বপ্নগুলো কাগজে লিখে চিরদিনের জন্য কবর দিচ্ছিল। তাইয়্যাবা চান সবাই যেন দুঃস্বপ্ন ভুলে শান্তিতে থাকে—এমন কি দুঃস্বপ্নগুলোও। কলকাতার শিল্পী তপতী আরেকটি কাজে বিভিন্ন দরজা তৈরি করেছিলেন প্রতীকী অর্থে—যেন এই দরজাগুলো দিয়ে পৌঁছে যাওয়া যাবে অচিনপুরে। পাকিস্তানের আরেক শিল্পী শিবলী মুনীর আদিগন্ত বিস্তৃত সবুজের মাঝে স্থাপন করেছিলেন লাল কাপড়ের একটা বৃত্ত। আরেকটা কাজে তিনি লাল কাপড় লাইনের মতো ব্যবহার করে আটকাতে চেয়েছেন সীমানা। ভারতের শিল্পী সুনীল শ্রী মাটি দিয়ে কাজ করেছেন—যার মধ্যে তিনি স্থাপন করেছেন নানা গাছের বীজ।
এ ছাড়া এই আর্ট ক্যাম্পে একাধিক পারফরম্যান্স আর্ট হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও আর্ট। এর সবকিছুতেই বিভিন্নভাবে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে অচিনপুরের/অচেতনের ঘরবাড়ি ও মানুষজন।
No comments