ভারতের কিডনি পাচারকারীদের লক্ষ্য নেপালের গরিব কৃষক!
জীবনের একমাত্র সম্বল ছোট্ট জমিটি ঋণের দায়ে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে গরিব কৃষক মাধব পারাজুলির। চোখের সামনে দুটি উপায় খোলা থাকে তাঁর। হয় জমি হারাও নয়তো সেটা রক্ষা করতে শরীরের একটি কিডনি বিক্রি করে দাও। জমি হারালে তো সংসার চলবে না! তাই মাধব সিদ্ধান্ত নেন কিডনি বিক্রির।
চলে যান ভারতে। সেখানে কিডনি দিয়ে ফিরে আসেন। সাত বছর আগের ঘটনা এটি। মাধব আজ নিঃস্ব; জমিও নেই, পরিবারও নেই। মানব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচারকারী চক্রের প্রতারণার শিকার তিনি। মাধবের মতো নেপালের কাভারে জেলার জায়ামদি গ্রামের বহু কৃষকই কিডনি পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন। ওই জেলায় পাচারকারীরা সক্রিয় থেকে দেদার চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ব্যবসা।
রাজধানী কাঠমাণ্ডুর ৫০ কিলোমিটার পূর্বে জায়ামদি গ্রামের ৩৬ বছর বয়সী পারাজুলি জানান, একটি কিডনির বিনিময়ে এক লাখ রুপি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় কিডনি ব্যবসায়ীরা। দেশে ফেরার পর তাঁকে যা ধরিয়ে দেওয়া হয়, তা প্রতিশ্রুত অর্থের এক তৃতীয়াংশও নয়। পারাজুলি বলেন, 'শেষ পর্যন্ত জমিটিও গেছে। তখন যদি বুঝতাম, তবে কখনোই কিডনি বিক্রি করতাম না।' জমিজমা হারানোর পর পরিবারও তাঁকে ছেড়ে যায়। দেহ দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং চোখমুখ বসে গেছে তাঁর। সবকিছু হারিয়ে আজ তিনি দিনমজুর। শরীর বেশি দুর্বল হওয়ায় ভারি কাজ করতে পারেন না। কোমরের ডানদিকে ছয় ইঞ্চি কাটা দাগটি দেখিয়ে তিনি বলেন, 'মাঝেমধ্যেই জায়গাটিতে ব্যথা অনুভব করি।'
নেপালে আইনে কিডনি দান বৈধ। তবে দাতাকে হতে হবে রোগীর রক্তের সম্পর্কের কেউ বা স্বামী-স্ত্রীর কেউ। অন্য কারো কাছ থেকে কিডনি নেওয়া বৈধ নয়। কিন্তু ভারতের আইন অনেকটা শিথিল। সেখানে চিকিৎসকদের অনুমোদন থাকলে যে কেউ কিডনি দান করতে পারেন। আইন পাশ কাটিয়ে যাওয়াও সেখানে সহজ। নেপালের বহু সচ্ছল লোক তাই ভারতে চলে যান কিডনি প্রতিস্থাপনে।
ভারত সীমান্তে হওয়ায় জায়ামদি গ্রামটি অঙ্গ পাচারকারীদের ব্যবসার কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রামের বেশিরভাগ লোকেরই জীবিকা কৃষি হলেও সারা বছরের খোরাক জোটে না কৃষি থেকে। অন্নের সংস্থানে তাই বাধ্য হয়ে তাদের ছুটে যেতে হয় কাঠমাণ্ডুতে কিংবা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে। তাদের এ দরিদ্রাবস্থার সুযোগ নেয় কিডনি পাচারকারীরা। গ্রামের সাবেক প্রধান কৃষ্ণ বাহাদুর তামাং সাংবাদিকদের বলেন, 'অঙ্গ পাচারকারীরা গ্রামে মাধবের মতো লোকজনকে ধরার জন্য সব সময়ই ফাঁদ পেতে থাকে।' তিনি জানান, এখানকার লোকজন গরিব ও অশিক্ষিত হওয়ায় সহজেই তারা পাচারকারীদের শিকার হয়। কিডনি নেওয়া হয়ে গেলে প্রতিশ্রুত দামও দেওয়া হয় না। অনেক সময়ই এদের মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। ভারত গিয়েই তারা আসল ঘটনা জানতে পারে। তখন আর তাদের ফেরার উপায় থাকে না।
তেমনই এক ঘটনা ঘটে মোহন সাপকোতার বেলায়। নেপালের একজন কিডনি রোগীর সেবা করার কথা বলে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ভারতে। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর চেন্নাইতে পেঁৗছার পর তিনি আসল ঘটনা জানতে পারেন। মোহন সাপকোতা বলেন, 'আমার টাকাকড়ি বা নিজের কোনো সহায়সম্পত্তি নেই। পাচারকারীরা প্রতিশ্রুতি দেয়, আমার ছেলেমেয়ের শিক্ষার ভার বহন করবে, আমাকে টাকা দেবে। তাই আমি কিডনি দিতে রাজি হই। কিন্তু কাজ শেষে আমার হাতে মাত্র ৬০ হাজার রুপি ধরিয়ে দেওয়া হয়।'
কাভারে জেলায় মানব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচারের ওপর গবেষণা করছেন সমাজবিজ্ঞানী গণেশ গুরুং। গণেশ জানান, একবার ভারতে যেতে পারলে ক্ষতিগ্রস্তরা পাচারকারীদের হাতের পুতুল হতে বাধ্য হয়। একে তো ভাষা বোঝে না, তার ওপর তাদের জ্ঞানের স্বল্পতা। গ্রামে ফিরে এসে অনেকেই টাকাগুলো খুইয়ে ফেলেন অ্যালকোহলের পেছনে।
২০০৯ সালে পরিচালিত স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে দেখা যায়, কাভারে জেলায় ৩০০ লোক তাঁদের কিডনি বিক্রি করেছেন। যদিও এ ব্যাপারে কোনো সরকারি ডাটা নেই। তবে অনেকেই মনে করেন এ সংখ্যা আরো বেশি। ভারতের বহু কিডনি ব্যবসায়ী বিদেশি রোগীদের কিডনি সরবরাহ করে থাকে। এসব রোগীর 'ট্রান্সপ্লান্ট টুরিস্ট' বলা হয়। কাঠমাণ্ডুতে ন্যাশনাল কিডনি সেন্টারের পরিচালক রিশি কুমার কাফল জানান, নেপালের বহু সচ্ছল মানুষ কিডনি রোগে ভোগেন। তাঁরা আত্মীয়স্বজনের কিডনি ম্যানেজ করতে না পেরে ভারতে পাড়ি জমান। নেপালের আইন দুর্বল এবং ভারতের সঙ্গে সীমান্ত অরক্ষিত। তাই কিডনি পাচারকারীদের কাছে অবাধ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে সীমান্ত গ্রামগুলো। পুলিশ জানায়, তারা পাচারকারীদের ধরার জন্য চেষ্টা চালিয়ে গেলেও সম্ভব হয় না। কারণ পাচারকারীদের মূল আস্তানা সীমান্তের ওপারে। কিন্তু স্থানীয় কৃষকরা বলেছেন, পুলিশ বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করে। সূত্র : এএফপি।
রাজধানী কাঠমাণ্ডুর ৫০ কিলোমিটার পূর্বে জায়ামদি গ্রামের ৩৬ বছর বয়সী পারাজুলি জানান, একটি কিডনির বিনিময়ে এক লাখ রুপি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় কিডনি ব্যবসায়ীরা। দেশে ফেরার পর তাঁকে যা ধরিয়ে দেওয়া হয়, তা প্রতিশ্রুত অর্থের এক তৃতীয়াংশও নয়। পারাজুলি বলেন, 'শেষ পর্যন্ত জমিটিও গেছে। তখন যদি বুঝতাম, তবে কখনোই কিডনি বিক্রি করতাম না।' জমিজমা হারানোর পর পরিবারও তাঁকে ছেড়ে যায়। দেহ দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং চোখমুখ বসে গেছে তাঁর। সবকিছু হারিয়ে আজ তিনি দিনমজুর। শরীর বেশি দুর্বল হওয়ায় ভারি কাজ করতে পারেন না। কোমরের ডানদিকে ছয় ইঞ্চি কাটা দাগটি দেখিয়ে তিনি বলেন, 'মাঝেমধ্যেই জায়গাটিতে ব্যথা অনুভব করি।'
নেপালে আইনে কিডনি দান বৈধ। তবে দাতাকে হতে হবে রোগীর রক্তের সম্পর্কের কেউ বা স্বামী-স্ত্রীর কেউ। অন্য কারো কাছ থেকে কিডনি নেওয়া বৈধ নয়। কিন্তু ভারতের আইন অনেকটা শিথিল। সেখানে চিকিৎসকদের অনুমোদন থাকলে যে কেউ কিডনি দান করতে পারেন। আইন পাশ কাটিয়ে যাওয়াও সেখানে সহজ। নেপালের বহু সচ্ছল লোক তাই ভারতে চলে যান কিডনি প্রতিস্থাপনে।
ভারত সীমান্তে হওয়ায় জায়ামদি গ্রামটি অঙ্গ পাচারকারীদের ব্যবসার কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রামের বেশিরভাগ লোকেরই জীবিকা কৃষি হলেও সারা বছরের খোরাক জোটে না কৃষি থেকে। অন্নের সংস্থানে তাই বাধ্য হয়ে তাদের ছুটে যেতে হয় কাঠমাণ্ডুতে কিংবা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে। তাদের এ দরিদ্রাবস্থার সুযোগ নেয় কিডনি পাচারকারীরা। গ্রামের সাবেক প্রধান কৃষ্ণ বাহাদুর তামাং সাংবাদিকদের বলেন, 'অঙ্গ পাচারকারীরা গ্রামে মাধবের মতো লোকজনকে ধরার জন্য সব সময়ই ফাঁদ পেতে থাকে।' তিনি জানান, এখানকার লোকজন গরিব ও অশিক্ষিত হওয়ায় সহজেই তারা পাচারকারীদের শিকার হয়। কিডনি নেওয়া হয়ে গেলে প্রতিশ্রুত দামও দেওয়া হয় না। অনেক সময়ই এদের মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। ভারত গিয়েই তারা আসল ঘটনা জানতে পারে। তখন আর তাদের ফেরার উপায় থাকে না।
তেমনই এক ঘটনা ঘটে মোহন সাপকোতার বেলায়। নেপালের একজন কিডনি রোগীর সেবা করার কথা বলে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ভারতে। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর চেন্নাইতে পেঁৗছার পর তিনি আসল ঘটনা জানতে পারেন। মোহন সাপকোতা বলেন, 'আমার টাকাকড়ি বা নিজের কোনো সহায়সম্পত্তি নেই। পাচারকারীরা প্রতিশ্রুতি দেয়, আমার ছেলেমেয়ের শিক্ষার ভার বহন করবে, আমাকে টাকা দেবে। তাই আমি কিডনি দিতে রাজি হই। কিন্তু কাজ শেষে আমার হাতে মাত্র ৬০ হাজার রুপি ধরিয়ে দেওয়া হয়।'
কাভারে জেলায় মানব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচারের ওপর গবেষণা করছেন সমাজবিজ্ঞানী গণেশ গুরুং। গণেশ জানান, একবার ভারতে যেতে পারলে ক্ষতিগ্রস্তরা পাচারকারীদের হাতের পুতুল হতে বাধ্য হয়। একে তো ভাষা বোঝে না, তার ওপর তাদের জ্ঞানের স্বল্পতা। গ্রামে ফিরে এসে অনেকেই টাকাগুলো খুইয়ে ফেলেন অ্যালকোহলের পেছনে।
২০০৯ সালে পরিচালিত স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে দেখা যায়, কাভারে জেলায় ৩০০ লোক তাঁদের কিডনি বিক্রি করেছেন। যদিও এ ব্যাপারে কোনো সরকারি ডাটা নেই। তবে অনেকেই মনে করেন এ সংখ্যা আরো বেশি। ভারতের বহু কিডনি ব্যবসায়ী বিদেশি রোগীদের কিডনি সরবরাহ করে থাকে। এসব রোগীর 'ট্রান্সপ্লান্ট টুরিস্ট' বলা হয়। কাঠমাণ্ডুতে ন্যাশনাল কিডনি সেন্টারের পরিচালক রিশি কুমার কাফল জানান, নেপালের বহু সচ্ছল মানুষ কিডনি রোগে ভোগেন। তাঁরা আত্মীয়স্বজনের কিডনি ম্যানেজ করতে না পেরে ভারতে পাড়ি জমান। নেপালের আইন দুর্বল এবং ভারতের সঙ্গে সীমান্ত অরক্ষিত। তাই কিডনি পাচারকারীদের কাছে অবাধ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে সীমান্ত গ্রামগুলো। পুলিশ জানায়, তারা পাচারকারীদের ধরার জন্য চেষ্টা চালিয়ে গেলেও সম্ভব হয় না। কারণ পাচারকারীদের মূল আস্তানা সীমান্তের ওপারে। কিন্তু স্থানীয় কৃষকরা বলেছেন, পুলিশ বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করে। সূত্র : এএফপি।
No comments