পাকিস্তানে অচলাবস্থার আশঙ্কা
পাকিস্তানে ভয়াবহ রাজনৈতিক অচলাবস্থার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। সুপ্রীমকোর্ট মঙ্গলবার দুর্নীতির অভিযোগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফসহ ১৬ জনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছে।
এর ফলে পাকিস্তানজুড়ে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অচলাবস্থা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফের একজন মুখপাত্র বলেছেন, পাকিস্তানে সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগ সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। পাকিস্তানে গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র নতুন কিছু নয়। এ ধরনের ষড়যন্ত্র, দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্বের কারণে সেখানে এখন পর্যন্ত গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। এ কারণে খেসারত দিতে হচ্ছে পাকিস্তানের সাধারণ জনগণকে। এ ছাড়া গত প্রায় তিন দশকের বেশি সময় ধরে মৌলবাদী সন্ত্রাস সেখানকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা কেউ কেউ পাকিস্তানকে ‘অকার্যকর রাষ্ট্র’ হিসেবে অভিহিত করতে শুরু করেছেন। সুপ্রীমকোর্ট কর্তৃক সেখানকার প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফকে গ্রেফতারের নির্দেশ জারির পর এ রাষ্ট্রটি আত্মধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেখানকার আইন, বিচার ও শাসন বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এই রাষ্ট্রীয় দুরবস্থার দায় অস্বীকার করতে পারেন কি? কারণ একটি দেশে গণতন্ত্র সফল হয় সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে। পাকিস্তানে এ ধরনের দায়িত্বশীল সমন্বয় ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি কখনই গড়ে ওঠেনি। এবার সেখানকার প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্ট অভিযোগ এনেছে, তিনি ২০১০ সালে পানি ও বিদ্যুতমন্ত্রী থাকাকালে ঘুষ নিয়েছিলেন। এই মামলায় নয়টি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্প প্রতিষ্ঠানকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, কোনো বিদ্যুত প্ল্যান্ট স্থাপন ছাড়াই এ প্রকল্পের জন্য অগ্রিম দুই হাজার দু’শ’ কোটি রুপি নিয়েছে। এ মামলার অভিযোগে বলা হয়, রাজা পারভেজসহ অভিযুক্তরা সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনকালে ঘুষ নিয়ে কম মূল্যে প্রকল্পের কাজ দেন। এ কারণে বিদ্যুতের দাম পরবর্তীতে ৭ থেকে ১৪ শতাংশ বেড়ে যায়।গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিচার বিভাগের যথেষ্ট দায়িত্বশীল ভূমিকা রয়েছে। এখানে আইনের শাসন সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। আইনের দৃষ্টিতে দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান ব্যক্তি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে কোন তফাত নেই। তবে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক শাসন পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়নি। দেশটি বেশিরভাগ সময় শাসিত হয়েছে স্বৈরাচারী সামরিক শাসকদের দ্বারা। এরা গণতান্ত্রিক শাসন ও মূল্যবোধকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছে। সেখানকার বেসামরিক শাসকরাও সর্বদা একে অপরের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত থেকেছেন। সারা পাকিস্তানে এখন কট্টরপন্থী সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো সক্রিয়; তারা কেউ কেউ আধুনিক উন্নয়নের বিপক্ষে। ঠিক এমনই একটি মুহূর্তে সেখানে যে রাজনৈতিক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা সে দেশের জন্য শুভ হতে পারে না।
No comments