গণপূর্তের টেন্ডার নিয়ে যুবলীগ ক্যাডারদের তাণ্ডব, হামলা
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর সেগুনবাগিচায় গণপূর্তের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে তুলকালাম কা- ঘটেছে। প্রায় সোয়া কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত যুবলীগ ক্যাডাররা।
তারা ঠিকাদারদের অবরুদ্ধ করে রেখে দফায় দফায় হামলা, টেন্ডার ডকুমেন্টস ফেলে দেয়াসহ তা-ব চালিয়েছে। এ ধরনের অভিযোগ পেয়ে র্যাবের একটি টিম সেগুনবাগিচায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। র্যাবের টিম ঠিকাদারদের আটকে রাখার খবর পেয়ে গণপূর্তের স্থানীয় কার্যালয়ের বিভিন্ন অফিস কক্ষে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করে। সেগুনবাগিচার সরকারী ১২ তলার ২ ন¤¦র ভবনের ১২ তলায় গণপূর্তের ডিভিশন -৪/এর কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। র্যাবের টিম ঘটনাস্থলে যাওয়ার খবর পেয়ে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা সটকে পড়ে। র্যাব ও পুলিশের উপস্থিতিতে গ্রীন কনসোর্টিয়াম নামে একটি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার ড্রপ করেছে। র্যাবের কাছে খবর দেয়া হয় যে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে টেন্ডার ড্রপ করতে দেয়া হচ্ছে না। টেন্ডার ডকুমেন্টস ফেলে দেয়া হয়েছে। এ ধরনের একাধিক অভিযোগ করেছেন ঠিকাদাররা।ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সোলার সিস্টেমের কাজের জন্য ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার টেন্ডার জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার। সকাল আটটার দিকে অফিসে ঢুকে কয়েক যুবক টেন্ডার বাক্স খুলে ডকুমেন্টস ফেলে রেখে যায়। এরপর সকাল সাড়ে আটটায় আবার অন্য একটা গ্রুপ এসে টেন্ডার বাক্স উপুড় করে ফেলে রাখে। কিছুক্ষণ পর টেন্ডার বাক্স নিয়ে যায় একটি গ্রুপ। সকাল ১০টার দিকে রহিম আফরোজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন শিডিউল জমা দিতে আসেন। যুবলীগের ক্যাডাররা তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এরপর বেলা সাড়ে এগারোটার সময় ইস্টার্ন ইলেকট্রিক-নিউ ন্যাশন সোলার জে-ভি (জয়েন্ট ভেঞ্চার) লোকজন শিডিউল জমা দিতে যান। তাদের প্রথমে টেনেহিঁচড়ে মারধর করে ১২তলা থেকে নামিয়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
যুবলীগ নেতা ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরন্নবী চৌধুরী শাওনের নামে সেøøাগান দেয় যুবলীগের ক্যাডাররা। তারা নিজেদের এমপি শাওনের লোক বলে পরিচয় দেয়। ঘটনার সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শিডিউল জমা দিতে না পারলেও পরবর্তীতে পুলিশের সহযোগিতায় শিডিউল জমা দেয়। এ ঘটনায় যুবলীগ ক্যাডাররা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের গণপূর্তের একটি অফিস কক্ষে আটকে রাখে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। র্যাব আসার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে যুবলীগ ক্যাডাররা।
ইস্টার্ন ইলেকট্রিক-নিউ ন্যাশন সোলার জে-ভির (জয়েন্ট ভেঞ্চার) প্রতিষ্ঠানের কয়েক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, এক সংসদ সদস্যের মদদপুষ্ট ক্যাডাররা শিডিউল জমা দেয়ায় তাদের আটকে রাখে। এ জন্য তারা বার বার পুলিশকে ফোন করেছেন। পুলিশের কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে র্যাবের কাছে ফোন করেছেন।
অপরদিকে গ্রীন কনসোর্টিয়ামের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, শিডিউল জমা দিতে গেলে যুবলীগের ক্যাডাররা পুলিশের সামনেই তাদের কয়েকবার বাধা দিয়েছে। শিডিউল জমা দিতে না পেরে তারা র্যাবকে ফোন করেছে। র্যাব আসতে আসতে সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা আর শিডিউল জমা দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন।
গণপূর্ত ডিভিশন-৪ ই/এম’র স্টাফ অফিসার সহকারী প্রকৌশলী ইউসুফ সাংবাদিকদের বলেছেন, টেন্ডার জমা দিতে পারেনি এ ধরনের একটা অভিযোগ তাদের কাছে রয়েছে। তবে কোন্ প্রতিষ্ঠান অভিযোগ করেছে তা বলতে পারবেন না।
মগবাজার এলাকার র্যাব-৩-এর ডিএডি (উপ-সহকারী পরিচালক) সিরাজুল ইসলাম ঘটনাস্থলে আসার পর বলেছেন, তাদের কাছে অভিযোগ গেছে, এখানে টেন্ডার ড্রপ করতে দেয়া হচ্ছে না। গ্রীন কনসোর্টিয়ামের লোকজনকে মারধর করে বের করে দেয়া হয়েছে। র্যাব ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তল্লাশি করে কোন ঠিকাদারকে অবরুদ্ধ অবস্থায় দেখতে পায়নি।
শাহবাগ থানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কোন ঠিকাদার টেন্ডারে বাধা দান বা মারধরের ব্যাপারে মামলা করেনি। কিন্তু ঘটনাস্থল থেকে র্যাব কাউকে উদ্ধার কিংবা আটক করেছে বলে থানায় কোন তথ্য নেই।
No comments