ঢাকার ওয়ার্ড বিএনপি নেতা রফিক-র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণ মিলল হাতকড়া পরা লাশ

রাজধানীর ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্যসচিব ও ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম মজুমদার (৪৫) খুন হয়েছেন। গত শনিবার রাতে তাঁকে শ্বশুরবাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপার আনন্দনগর গ্রাম থেকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করা হয়।
ওই রাতেই কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার আদাবাড়িয়া গ্রামের রাস্তার পাশ থেকে পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়ার সময় নিহত রফিকুলের হাতে পুলিশের হাতকড়া পরানো ছিল। র‌্যাব ও পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, তাঁরা রফিকুলকে আটক বা গ্রেপ্তার করেননি। র‌্যাবের পোশাক পরে সন্ত্রাসীরা এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে বলেও তাঁরা বক্তব্য দিয়েছেন।
বঙ্গবাজার মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চাপা বিরোধ, দলীয় বা রাজনৈতিক বিরোধ এবং ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণ- এর যেকোনো একটির জের ধরে খুন হয়ে থাকতে পারেন রফিকুল। গতকাল রাত ১০টার দিকে তাঁর লাশ গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আনা হয়। এ সময় খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন রফিক মজুমদারের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা ঝরা। তাঁকে সান্ত্বনা দেন খালেদা জিয়া। রাতে রফিকুলের লাশ যাত্রাবাড়ীতে তাঁর বাসায় রাখা হয়।
রফিকুল বঙ্গবাজার এলাকার ব্যবসায়ী এবং ব্যবসায়ীদের সমিতির সহসভাপতি ছিলেন। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতেন তিনি। নিহত রফিকুলের স্বজন ও সহকর্মীরা বলেন, পরিকল্পিতভাবে কৌশলে রফিকুলকে হত্যা করা হয়েছে। ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি চৌধুরী আলমও আড়াই বছর আগে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন। শ্বশুরবাড়ি এলাকা থেকে রফিকুলের নিখোঁজ হওয়াটিও রহস্যজনক। রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যক্তিগত বা পারিবারিক- এ তিন রহস্যকেই বড় করে দেখছেন তাঁরা। গতকাল রাত পর্যন্ত রফিকুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন ছিল। পুলিশ ও র‌্যাব কর্মকর্তারা এ ঘটনার দায় এড়ালেও হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত কিছুই জানাতে পারেননি।
যেভাবে অপহরণ : রফিকুলের শাশুড়ি লিপি খাতুন কালের কণ্ঠকে জানান, শৈলকুপার আনন্দনগর গ্রামে তাঁর বাড়িতে বেড়াতে আসেন ছোট জামাতা রফিকুল। ওই বাড়ির পাশেই আরেক জামাতা সাইদুজ্জামান সাইদের বাড়ি। শনিবার সন্ধ্যায় রফিকুলসহ কয়েকজন সাইদের বাড়িতে বসে গল্প করছিলেন। সাড়ে ৭টার দিকে বাড়ির সামনে একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাস এসে থামে। সেখান থেকে সাত-আটজনের একদল লোক নেমে এসে গেট খুলতে বলে। গেট খুলতে একটু দেরি হচ্ছিল দেখে তারা গেট টপকে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ে। বাড়ির লোকজন তাদের আসার কারণ জানতে চাইলে তাদের পিস্তল ধরে জিম্মি করে ফেলা হয়। এরপর চলে ঘরের জিনিসপত্র তছনছ করা। লিপি খাতুন আরো বলেন, এক পর্যায়ে লোকগুলো নিজেদের র‌্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে রফিকুলের হাতে হাতকড়া পরিয়ে জোর করে ওই মাইক্রোবাসে তোলে। এরপর ঝিনাইদহ র‌্যাব ক্যাম্প, শৈলকুপা থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করে রফিকুল ইসলামের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। রবিবার সকালে কুমারখালী থানার পুলিশ খবর দেয় যে আদাবাড়িয়া গ্রামে একটি লাশ পড়ে আছে। আনন্দনগর গ্রাম থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন গিয়ে রফিকুল ইসলামের লাশ শনাক্ত করে।
রফিকুলের ভায়রা সাইদুজ্জামান সাইদ বলেন, 'যে লোকগুলো রফিকুলকে নিয়ে গেছে, তাদের পরনে র‌্যাবের পোশাক ছিল। সবার হাতে অস্ত্র এবং ওয়াকিটকিও ছিল। তাই আমাদের ধারণা, র‌্যাবই তাকে জোর করে তুলে নিয়েছিল। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, সন্ত্রাসীরা র‌্যাবের পোশাক ব্যবহার করে রফিকুলকে অপহরণ করে থাকতে পারে।' সাইদ দাবি করেন, অপহৃত হওয়ার সময় রফিকুলের কাছে একটি ব্রিফকেসে প্রায় ১৮ লাখ টাকা ছিল।
রফিকুলের ছোট ভাই মফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে নিউ মার্কেটে গিয়ে স্ত্রীসহ কেনাকাটা করেন রফিকুল। এরপর স্ত্রী ঝরা ও ছোট ভাই মফিজুরকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে নিজে ঝিনাইদহের উদ্দেশে রওনা হন। ব্যক্তিগত নোয়া (মাইক্রোবাস) গাড়িতে চালক আমির হোসেন ছিলেন রফিকুলের সঙ্গী। শুক্রবার রাতেই শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে মোবাইল ফোনে ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন রফিকুল। শনিবার সকাল ১০টায় এবং বিকেল ৩টার দিকে দুই দফায় ফোন করে ছেলেমেয়েদের খোঁজ নেন তিনি। বিকেল ৫টার দিকে মফিজুরের ফোনে কল করে চার ছেলে-মেয়ের সঙ্গে কথাও বলেন রফিকুল।
মফিজুর রহমান আরো জানান, অসুস্থ শাশুড়িকে দেখতে এবং রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে 'পুলিশি হয়রানি' এড়াতে ঝিনাইদহ যান রফিকুল। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গাড়িচালক আমির ফোন করে মফিজকে বলেন, রফিকুলকে র‌্যাব ধরে নিয়ে গেছে। এরপর রাত ১২টা ১০ মিনিটে মোবাইল ফোনে কুমারখালীতে একটি লাশ পাওয়া গেছে বলে খবর পান মফিজ। রাতেই তাঁরা রফিকুলকে হত্যার ব্যাপারে নিশ্চিত হন। শনিবার রাতেই খবর পেয়ে নিহত রফিকুলের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা ঝরা ঝিনাইদহে চলে যান।
রফিকুলের স্ত্রী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গত শুক্রবার রাতে আমার স্বামী আমার বাবার বাড়িতে আসে। শনিবার সন্ধ্যার পর খবর পাই, র‌্যাব এসে তাঁকে ধরে নিয়ে গেছে।' কান্নায় ভেঙে পড়ে ঝরা বলেন, 'আমি জানতে চাই কেন এটা করা হলো? একজন মানুষকে বিনা বিচারে এভাবে কেন মারা হলো? আমি এর বিচার চাই।' স্বজনরা জানান, রফিকুল অপহৃত হওয়ার পর তাঁর ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ফোনও খোয়া গেছে।
তিন রহস্য : ২০১০ সালের ২৫ জুন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগরের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর চৌধুরী আলম নিখোঁজ হন। এখনো তাঁর হদিস নেই। আগে বিএনপির বঙ্গবাজার ইউনিটের সভাপতি ছিলেন রফিকুল। চৌধুরী আলম নিখোঁজ হওয়ার পর আহ্বায়ক কমিটিতে তিনি সদস্যসচিব হন। রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে বিভিন্ন কর্মসূচি এবং তৎপরতায় চৌধুরী আলমের মতো কিছু ভূমিকা পালন করতেন রফিকুল। বঙ্গবাজারে 'রকি ফ্যাশন' নামে একটি তৈরি পোশাকের দোকান আছে ব্যবসায়ী রফিকুলের।
সূত্র জানায়, চৌধুরী আলম ছাড়াও ঢাকা মহানগর কমপ্লে মালিক দাবিদার এবং মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি পরিচয়দানকারী হাজী মোহাম্মদ ওয়াজিউল্লাহ নিখোঁজ হন। ২০১১ সালের ১৪ জুলাই এ ঘটনায় ওয়াজিউল্লাহর স্ত্রী সালেহা বেগম একটি মামলা করেন। মামলায় রফিকুল ইসলামও আসামি ছিলেন। পরবর্তী সময়ে অন্য আসামিদের সঙ্গে তিনিও অভিযোগ থেকে মুক্ত হন। গোয়েন্দা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দিয়েছে।
জানা গেছে, ফুলবাড়িয়ার মহানগর মার্কেট, গুলিস্তান হকার্স মার্কেট, আদর্শ মার্কেট ও বঙ্গবাজার মার্কেট নামে চারটি মার্কেট মিলে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি। এ সমিতির সহসভাপতি ছিলেন রফিকুল। এ ছাড়া মহানগর কমপ্লেক্স মার্কেটের একজন পরিচালক ছিলেন তিনি। বিএনপি সরকারের আমলে চৌধুরী আলমের নেতৃত্বে কয়েকজন এ মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করতেন। ওই সময় ওয়াক্ফ স্টেটের কাছ থেকে ৩০ বছরের ইজারা নেয় বিএনপি সমর্থিত ব্যবসায়ী গ্রুপ। আওয়ামী লীগ সমর্থিত গ্রুপ ১৯৯৭ সাল থেকে রেলওয়ের কাছ থেকে মার্কেটটি ইজারা নিয়ে দখল করে। এ মার্কেটের জায়গা নিয়ে রেল ও ওয়াক্ফ স্টেটের মধ্যে মামলা এখনো চলছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রথম স্ত্রী রুবিনা ইসলামের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় রফিকুলের। বিচ্ছেদের আগে এ নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়েছে। পরে রফিকুল বিয়ে করেন ঝরাকে। প্রথম পক্ষের চার সন্তানসহ চলছে তাঁদের সংসার। গত শনিবার রফিকুল অপহৃত হন তাঁর ভাইরার বাড়ি থেকে। এসব ব্যাপারকেও সন্দেহের চোখে দেখছেন সহকর্মীরা। তবে রফিকুলের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা ঝরা বলেন, 'প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর আমার সঙ্গে রফিকুলের বিয়ে হয়। আমাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা ছিল না।'
জানা গেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মগবাজার থেকে অস্ত্রসহ আটকের অভিযোগে একটি মামলা ছিল রফিকুলের বিরুদ্ধে। ওই মামলায় তিনি আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন। এরপর সম্প্রতি অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচির সময় দুটি মামলায় আসামি হয়েছেন। এ মামলায় রফিকুল ইসলাম জামিনে ছিলেন।
রফিকুলের ছোট ভাই মফিজুর রহমান অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের বঙ্গবাজার ও ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু লোক তাঁর ভাইকে রাজনৈতিক কারণে হুমকি দিয়েছে। বিএনপি করার কারণে ব্যবসা করতেও বাধা এবং চাঁদাবাজির শিকার হয়েছেন রফিকুল।
৫৬ নম্বর বিএনপির আহ্বায়ক জাহিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'র‌্যাব পরিচয়ে ধরে নেওয়ার পর পুলিশের হ্যান্ডকাফ পরানো অবস্থায় রফিকুলের লাশ পাওয়া গেছে। এর আগে আমাদের নেতা চৌধুরী আলমও গুম হয়েছেন। তাই আমরা ধারণা করছি, রফিকুলও গুপ্তহত্যার শিকার।' জাহিদ আরো বলেন, 'আগেই হয়রানিমূলক অস্ত্র মামলা দিয়ে রফিকুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু আপনারা খোঁজ নিলে জানতে পারবেন তিনি অত্যন্ত ভালো একজন ব্যবসায়ী ছিলেন।' বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী গোলাম মাওলা বলেন, 'কী কারণে এভাবে তাঁকে (রফিকুল) হত্যা করা হয়েছে, তা আমরা বুঝতে পারছি না। তবে আমরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।' বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী গোলাম মাওলা বলেন, 'রফিকুল ভাই অত্যন্ত ভালো পলিটিশিয়ান ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত বিরোধের কোনো কারণ দেখি না। তবে বর্তমান সরকারের দখলদারদের রোষানলের শিকার হতে পারেন তিনি।'
লাশ উদ্ধার হলো যেভাবে : কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার ওসি আলী নওয়াজ কালের কণ্ঠকে জানান, শনিবার রাতে উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের আদাবাড়িয়া গ্রামের মাঠের মধ্যে একটা মৃতদেহ দেখে স্থানীয়রা থানায় খবর দেয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। লাশের সামনের দিক থেকে দুই হাতে হাতকড়া লাগানো ছিল। হাতকড়ায় পুলিশ লেখা ছিল। তাঁর পরনে ছিল সাদা লুঙ্গি, নীল ও লাল রঙের সোয়েটার এবং গলায় শক্ত করে মাফলার দিয়ে ফাঁস লাগানো। রবিবার সকালে নিহতের স্ত্রী থানায় এসে লাশ শনাক্ত করেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে রফিকুলকে হত্যা করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. তাপস কুমার পাল জানান, নিহত রফিকুলের মাথায় সামান্য আঘাতের চিহ্ন আছে। তবে তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে ময়নাতদন্তে পাওয়া গেছে। গতকাল বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন উপস্থিত থেকে রফিকুলের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেন। পারিবারিক ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সোমবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রথম জানাজা শেষে রফিকুলের লাশ তাঁর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে।
র‌্যাব-পুলিশের দায় অস্বীকার : ঘটনার ব্যাপারে র‌্যাব-৬ ঝিনাইদহের অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার হামিদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমাদের কোনো টিম রফিকুলকে তুলে আনেনি। তবে অন্য কেউ র‌্যাবের পরিচয় দিয়ে রফিকুলকে নিয়ে যায় কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।'
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দীন আহম্মেদ বলেন, 'নিহত ব্যবসায়ী রফিকুলের পরিবার থেকে দাবি করা হচ্ছে- কে বা কারা তাঁকে শ্বশুরবাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে তদন্ত না করে আমরা কিছু বলতে পারব না। তাঁর স্ত্রী লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।' পুলিশ সুপার আরো বলেন, পুলিশের ব্যবহৃত হ্যান্ডকাফ বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। অপরাধীরা এটা ব্যবহার করতে পারে। শৈলকুপা থানার ওসি আবদুল বারি জানান, আনন্দনগর গ্রাম থেকে রফিকুল ইসলাম নামের একজনকে কে বা কারা ধরে নিয়ে কুমারখালী থানা এলাকায় হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। নিহত রফিকুল ইসলামের পরিবার থেকে থানায় কোনো খবর দেওয়া হয়নি বলে ওসি জানান। তিনি বলেন, অভিযোগ পেলে থানায় মামলা হবে।
গতকাল রাত পর্যন্ত রফিকুল হত্যার ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছিল। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দীন আহম্মেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অপহরণ হয়েছেন এক স্থানে এবং লাশ উদ্ধার হয়েছে অন্য স্থানে। কোন থানায় মামলা হবে, তা সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। অভিযোগ পেলেই ঝিনাইদহের শৈলকুপায়ই পরিবারের করা মামলা নেওয়া হবে।'
বাড়িতে কান্নার রোল : গতকাল দুপুরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর পূর্ব দনিয়ার জিয়া সরণি সড়কের ৯ নম্বর লেনের ৭ নম্বর বাড়ির সামনে যেতেই শিশুদের কান্না আর আহাজারি ভেসে এলো কানে। বাড়িটির মালিক নিহত মালিক রফিকুল ইসলাম। ছয়তলা ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় পরিবার নিয়ে থাকতেন তিনি। গতকাল সেখানে ছিল প্রতিবেশী, সহকর্মী ও স্বজনদের ভিড়। বাড়িতে ছিল তাঁর চার ছেলেমেয়ে ও ছোট ভাই মফিজুর রহমান। নির্ঘুম রাতের পরদিনও কেঁদে কাটছিল তাদের। বড় ছেলে রাকিবুল হাসান রকি বিলাপ করে বলছিল, 'আমার আব্বুকে কে মারল, আপনারা বলেন? আব্বু গো...।' ছোট ভাই মফিজুরেরও একই প্রশ্ন, 'র‌্যাব ধরে নিয়ে গেছে, তাইলে কে মারল? সরকার কী আমার ভাইরে মারল? অন্য কেউ মারলে বের কইরা দেন?'
স্বজনরা জানান, রফিকুলের বাবার নাম মনিরুজ্জামান মজুমদার। মায়ের নাম সুফিয়া খাতুন। তাঁর গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের শাহারাস্তি উপজেলার চণ্ডিপুর মজুমদার বাড়ি। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে রফিক ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁর তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। এর মধ্যে বড় চারজনই প্রথম পক্ষের। বড় ছেলে রাকিবুল হাসান মজুমদার দনিয়ার বাইট স্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়ে। বড় মেয়ে তানজিদা মজুমদার পিংকি ভিকারুননিসা স্কুলের নবম শ্রেণীতে, তৃতীয় সন্তান আবদুল্লাহ আল রাকিব মজুমদার দনিয়ার এ কে স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে এবং চতুর্থ সন্তান তাবাসসুম মজুমদার রিংকি বাইট স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। ছোট ছেলে মাহিদ মজুমদারের বয়স মাত্র সাড়ে তিন বছর।

No comments

Powered by Blogger.