ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী-সুস্থধারায় ফিরুক ছাত্ররাজনীতি

ক্ষমতাসীন মহাজোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের সহযোগী ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। পরাধীন আমল থেকে বাংলাদেশের দীর্ঘ গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক সংগ্রামের ধারায় এই ছাত্রসংগঠনটির বিশেষ অবদান রয়েছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধেও ছাত্রলীগের ভূমিকা উজ্জ্বল। ছাত্রলীগের একটি ইতিহাস আছে।


ছাত্রলীগ এ দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রসৈনিক। কিন্তু সেই ইতিহাস ভুলে আজকের ছাত্রলীগ নিজেদের নিয়ে গেছে এক ভয়ংকর জায়গায়। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত একটি খবরে দেখা যাচ্ছে, মোরেলগঞ্জে এমন একজনকে ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যার বিরুদ্ধে রয়েছে ৩১টি মামলা। আতঙ্কিত হওয়ার মতো তথ্য হচ্ছে, এসব মামলার মধ্যে খুন, ধর্ষণ, অপহরণসহ ১৩টি মামলা হয়েছে এ সরকারের আমলেই।
ছাত্ররাজনীতির নামে যে অসুস্থধারা এখন চলছে, তা নতুন নয়। সরকারি দলের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে অতীতেও ছাত্ররাজনীতির নামে নানা অপতৎপরতা লক্ষ করা গেছে। আজকে ছাত্রলীগ যেন অরাজকতা সৃষ্টির লাইসেন্স নিয়ে ফেলেছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের বিজয়ের পরই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছাত্রলীগের অরাজকতার খবর আসতে থাকে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগ। বাংলাদেশে সামরিকতন্ত্রের কবলে পড়ে ছাত্ররাজনীতির যে অধঃপতন শুরু হয়েছিল, ছাত্রলীগ যেন সেই ধারাতেই হাঁটতে শুরু করে দিল। অথচ এই সংগঠনটি একসময় প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। ছাত্রলীগকে অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে আসতে হয়েছে। ইতিহাসের অনেক ইতিবাচক পরিবর্তনের সঙ্গে ছাত্রলীগের নাম উচ্চারিত হয়। ঊনসত্তরের মহান গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের ঐতিহাসিক নির্বাচন, এর ধারবাহিকতায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ- সব কিছুতেই ছিল ছাত্রলীগের অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব। যে ছাত্রলীগ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস বদলে দিয়েছে, সেই ছাত্রলীগ নিয়েই আজ সর্বত্র আতঙ্ক। সব অর্জন যেন আজ বিফলে যেতে বসেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের নামে যা হচ্ছে, তা থেকে জনমনে 'ছাত্রলীগ' নামের নতুন 'ক্রনিক ফোবিয়া' দেখা দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কেন এমন হবে? এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। অনেক প্রতিকূল অবস্থা পেরিয়ে আসতে হয়েছে ছাত্রলীগকে। পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সময়ের সামরিক স্বৈরাচার ছাত্রলীগের যে ক্ষতি করতে পারেনি, সেই ক্ষতি যেন এখন হচ্ছে। এসব ঘৃণ্য মামলায় অভিযুক্তদের ছাত্রলীগের নির্বাহী পদে মনোনয়ন দিলে ভবিষ্যতে আরো অধঃপতন দেখতে হবে।
বড় একটি বাধা পেরিয়ে মহাজোট সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিল। সেই আশা নষ্ট হতে সময় লাগেনি। সরকারের অনেক ইতিবাচক অর্জন শুধু ছাত্রলীগ নামের আতঙ্কের কারণে ধুলোয় মিশে গেছে। কিন্তু এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। আমরা আশা করব, তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ছাত্রলীগ শুধু নয়, যেকোনো দলেরই নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নৈতিকতাকে শীর্ষে অবস্থান দেওয়া হবে। বর্তমানে ছাত্ররাজনীতি যে অবস্থায় চলে গেছে, সে অবস্থা থেকে সুস্থধারায় ফিরে আসবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.