শুরু আর শেষে মিলান মাঝে বার্সা

শুরুর দৃশ্য: ম্যাচ শুরুর বাঁশি। ঘড়ির কাঁটায় তখন মাত্র ২০ সেকেন্ড পেরিয়েছে। সেন্টার সার্কেলের একটু ওপরে বল পেলেন পাতো। তাঁর দিকে ধেয়ে আসা সার্জিও বুসকেটসের পাশ দিয়ে ঠেলে দিলেন বল। এরপর নিজেই অবিশ্বাস্য দ্রুততায় পেরিয়ে গেলেন বুসকেটসকে। মিলান স্ট্রাইকারের সামনে শেষ বাধা কেবল গোলরক্ষক ভিক্টর ভালদেস। নিখুঁত ফিনিশিংয়ে ভালদেসের পায়ের নিচ নিয়ে বলকে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলেন পাতো। ২৪ সেকেন্ডেই প্রথম গোল! চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসের পঞ্চম দ্রুততম।
শেষের দৃশ্য: শুরুর ধাক্কা সামলে ভালোমতোই ম্যাচে ফিরেছে বার্সেলোনা। পেদ্রো আর ডেভিড ভিয়ার গোলে ২-১-এ এগিয়ে। ন্যু ক্যাম্প তখন ম্যাচ শেষের বাঁশি শোনার অপেক্ষায়। ৯০ মিনিট পেরিয়ে যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিট চলছে। বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে উল্টো কর্নার দিলেন আবিদাল। সেই কর্নার থেকে দুর্দান্ত হেডে থিয়াগো সিলভার গোল!
ম্যাচের একদম শুরু আর শেষে এই দুই নাটকীয় গোল শেষ পর্যন্ত জিততে দিল না বার্সেলোনাকে। ৭৫ শতাংশ বলের দখল, ১১টি কর্নার, ২২টি শট (যার সাতটিই লক্ষ্যে) আর ম্যাচে একতরফা দাপট দেখিয়েও একটা শিক্ষা পেল পেপ গার্দিওলার দল। ফুটবল শেষ পর্যন্ত গোলের খেলা।
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বার্সার শুরুটা অবশ্য মন্দ হয়নি। শুরুতেই ব্রাজিল তারকা পাতোর সেই দুর্দান্ত গোলের ধাক্কা দ্রুতই সামলে নিয়েছে বার্সা। ছন্দটা তুলে নিয়েছে নিজেদের পায়ে। পাসের পর পাস। যদিও পাতোর গোলটি শোধ করতে ৩৬ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। বক্সের ডান প্রান্তে বল নিয়ে ঢুকেছেন লিওনেল মেসি। তিন-চার ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে একেবারে শেষ লাইন থেকে বল ঠেলে দিয়েছেন পেদ্রোর দিকে। ফাঁকা পোস্টে সহজ গোলটি করতে ভুল করেননি পেদ্রো।
এই গোলের খানিক পরেই অবশ্য চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন ইনিয়েস্তা। তাঁর জায়গায় সেস ফ্যাব্রিগাস নামলেও ইনিয়েস্তার অনুপস্থিতি ভালোই বুঝেছে বার্সা। তবে বার্সা ভুগেছে আলেসান্দ্রো নেস্তার নেতৃত্বাধীন মিলানের অটুট রক্ষণের কাছে। ইতালির ঐতিহ্যবাহী রক্ষণের কথাই মনে করিয়ে দিয়েছে মিলান। এই ৩৫ বছর বয়সেও জীবনের সেরা ফর্মে থাকা ২৪ বছর বয়সী মেসিকেও বারবার আটকে দিয়েছেন নেস্তা।
দ্বিতীয়ার্ধের পঞ্চম মিনিটে দ্বিতীয় গোলটি পায় বার্সা। দুর্দান্ত ফ্রিকিকে বাঁকানো শটে গোলপোস্টের বাঁয়ের কোনায় বল ঢুকিয়ে দিয়েছেন ভিয়া। বার্সেলোনা আরও কয়েকবার গোলের সুযোগ তৈরি করলেও মিলানের রক্ষণপ্রাচীরে তা প্রতিহত হয়েছে। তাই শেষ মুহূর্তের ওই ভুলে শেষ পর্যন্ত দুটো পয়েন্টের জলাঞ্জলি।
সেই হতাশা ছিল গার্দিওলার কণ্ঠে। তবে সাতবারের চ্যাম্পিয়ন মিলান এদিন বেশি রক্ষণাত্মক খেলেছে বলেও অনুযোগ করেছেন এই সময়ের সফলতম কোচ, ‘প্রতিপক্ষ আটজন ডিফেন্ডার নিয়ে খেললে তো তাদের পেনাল্টি বক্সে আতঙ্ক তৈরি করা অসম্ভব।’ আর সৌভাগ্যক্রমে এক পয়েন্ট পেয়ে ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের কথা মনে করিয়ে দিলেন মিলান কোচ অ্যালেগ্রি, ‘বার্সা এখনো বিশ্বের সেরা দল, তবে তারাও মাঝেমধ্যে ড্র করে। ফুটবলের মজাটা এখানেই। কখনো কখনো আপনি জেতার যোগ্য হলেও হেরে যাবেন, কখনো হার প্রাপ্য হলেও জিতবেন।’

No comments

Powered by Blogger.