গল্প- চিনেজোঁক by মাসুদুল হক

ত পরশুও মানুষটি এসেছিল কমলাদের বাড়িতে। এবার নিয়ে সে বেশ কয়েকবার এসেছে ওদের বাড়ি; মনে পড়ে যায় কমলার। মানুষটি যে কে, এখনো ওর বিষয়ে কিছুই জানতে পারেনি সে। ভাবিকে জিজ্ঞেস করবে না কি? নাহ্ দরকার নেই, তাহলে ভাবি আবার কত কী ভেবে বসবে। ভাববে, এত কৌতূহল কেন? তাহলে কি ওর পছন্দ হয়েছে? এ রকম সন্দেহ হওয়া তো অমূলক নয়!
মানুষটা না লোকটা কোথা থেকে আসে? মাঝাডাঙ্গা থেকে? না কি তেঘরা? আচ্ছা সে কি ঘুঘুডাঙ্গার মকবুল গায়েনের কেউ? তা না হলে, ককইডাঙ্গার মজিদ মাস্টারের ছেলেও তো হতে পারে। সে যেখানকারই হোক না কেন, অন্তত আমাদের রাজাপোড়া ঘাটের এপারের কেউ নয়। রাজাপোড়া ঘাটের উত্তর দিকের গ্রামগুলো ওর একে একে মনে আসে_মাঝাডাঙ্গা, মালঝাড়, চাকপাড়া, ছ্যাতরা, মহেশপুর, দপ্তইর, গোঁসাইপুর_আরো কত কী নাম আছে। কমলার বড় ভাই মাঠে কাজ করে, কত কত চৌধুরী আর শাহদের বাড়িতে যায়। কত রকম লোকের সঙ্গেই তো চেনাজানা হয় কাজ করতে গিয়ে। হোসেন মুন্সির সঙ্গে তার যেমন খাতির, রবিপুরের শাহজাহান শাহের সঙ্গেও তেমনি হৃদ্যতা। এই মানুষটার সঙ্গে যে ওর বড় ভাই আমজাদের বেশ ভালোই সম্পর্ক হয়েছে, তা অনুমান করতে পারে কমলা।
তার কথা_যার নামধাম কিছুই জানে না এহেন সেই পুরুষটির কথা, আজকে ও এত করে ভাবছে কেন? ওর লজ্জাও করছে ভাবতে। হঠাৎ ওর মনে কিসের যেন একটা ঢেউ খেলে যায়। অতর্কিতে গোপনে সেই মানুষটার কথাই যেন ওর মনকে তোলপাড় করে তুলছে! জোয়ারের পানিতে নৌকায় দাঁড় টেনে রাখা যায় না, মনটাকেও তেমন জোর করে বেঁধে রাখা যায় না। কার মুখে যেন ও শুনেছিল ব্যাঙমোল্লার কুমের তল খুঁজে পাওয়া যায় না। তেমনি মনের গভীরেও পেঁৗছানো যায় না। অপরিচিত পুরুষ একজনের প্রতি হঠাৎ এ রকম আকর্ষণে ওর যুবতী মনটা আনচান করে উঠল। বাড়ির সব কাজকর্ম করে-সেরে, রোজ ঘরদোর ঝাঁট দেওয়া, আর ধানের মৌসুমে দুই বেলা ঢেঁকিতে ধান ভেনে আশপাশের লোককে ওর উচ্ছল যৌবনের উদ্দামতা প্রকাশ করা। এই আঁটসাঁট চঞ্চল দেহটিতে আজ রাজ্যের আলস্য এসে ভর করেছে।
অনেকটা বেলা হয়ে গেল। রোদ্দুর গায়ে লাগছে। এখনো অনেক কাজ বাকি। চালগুলো আর একবার ভানার দরকার ছিল। হাঁস-মুরগি কয়টিকে এখনো ছাড়া হয়নি, তারপর ওদের ঘরটাও পরিষ্কার করতে হবে। ঘরের সামনের মাটির দেয়ালটা এখনো নিকানো হয়নি। বাড়ির অন্য সবাই ব্যস্ত। ভাইপো-ভাইঝি আলাল আর হাসি কুত-কুত খেলছে। ওর ভাই আমজাদ সকালবেলাই সাইকেলে কোদাল বেঁধে নিয়ে তেঘরা চলে গেল। ভাবি হয়তো পেছন দিকের উঠানের দড়িতে শাড়ি মেলছে। বুড়িমা তাঁর ভাঙা ঘরটায় গুটিসুটি হয়ে বসে গুনগুন করছেন :
ডালও হালাইনু ফুলও তুলিনু
বিদেশিয়া বানিয়া রে
কেমন গড়াইছেন নাখেরো নতোয়া
নাখে নাই আমার সুবে রে
নাখেরো নতোয়া হেমেলাই উঠে
কলিজা গুল গুল করে রে।
চুলার সামনে কয়েকটা ভাঙা বাঁশ, গাছের ডাল, পাতা আর খড় জড়ো করা। কমলা তার ওপর বসে পায়ের আঙুল দিয়ে মাটি খুঁড়ছে। রাস্তার সামনে দিয়ে একজন বুড়ো লোককে যেতে দেখে আলাল আর হাসি দুষ্টুমি করে চেঁচাচ্ছে :
উত্তর ভিতিতে আইলো ধান
বানে খাইল মোর জমা ধান
ভাদই ধানে বাঁচাইছে জান
সিঁদল ভত্তা কুনঠ্ পে;াম ...
বাবাজি তোম্হার আণ্ডা পইল!
সঙ্গে সঙ্গে কমলার কানে এল ওর ভাবির কণ্ঠস্বর_'তোম্হারাগুলা বড় বাড়ি গেইছেন বাহে। রাস্তার মানুষগুলাক এমন করি টিট্কারি মারার মজা একদিন টের পাবু।'
কিছুক্ষণ বাদে কমলার ভাবি ওর কাছে এসে ওকে একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুঁটিয়ে দেখল। ভাবির বুকের শাড়ির আঁচল মাটিতে ঝুলে পড়েছে, সেটাকে টেনে নিয়ে কোমরে গুঁজতে গুঁজতে বিরক্তি প্রকাশ করে বলে_কমলা, তোর ফের কি হইল? চুপচাপ বসি আছি যে! এত্তিনা যে কত বেলা বই গেইল, খিয়াল আছে তোর? তামান কাম তো পড়ি আছে!
লজ্জা পেয়ে কমলা উঠে দাঁড়ায়। ভাবি হয়তো ওর মনের কথা বুঝতে পেরেছে। এ রকমভাবে কাজকর্ম ফেলে রেখে বসে থাকতে ওর ভাবি কমলাকে আগে কখনো দেখেনি। দোষ ঢাকতে কমলা নিজে থেকেই বলে ওঠে_আইজ সকাল থাকি দেহাটা মোর ভালো নাই। মাথাটা কেনেবা ভারী ভারী নাগেছে।
সুযোগ পেয়ে ভাবি ঠাট্টা করতে ছাড়ে না_তাই বুঝি? মুই ভাবেছো হয়তোবা কুনো মনের অসুখ। আইজকাইলকার দামড়ি ছুঁড়িগুলার মনের অসুখ-বেসুখ বেশি হচ্ছে কি না? উঠতি বয়সত্ এইলায় হয়।
_কেনে ঠাট্টা করেছি ভাবি? আইজকাইল তোক কিছু কহিলেই তুই অইন্য রকম ভাবি নেছি।
_তোর আর মোক নয়া করি বুঝাবা হবে নাই। মুই যা বুঝো, ওইটাই ঠিক।
_কী বুঝিলু ফের?
_বুঝিচু, তুই হে এখোন চালাক আর হামরাগুলা তামান বোকা। এর চাহিতে আর ফের মুই কি বুঝিম্!
কথাগুলো বলে ভাবি হাসতে থাকে। সে হাসিতে কমলা যোগ দিতে পারে না। ওর বুকের মধ্যে কি রকম শিরশির করে ওঠে।
_আলাল আর হাসির কাপড়াগুলা ধোয়া হয় নাই ভাবি?
_না হউক। আইজ তোক্ মুই রেহাই দিনু। অইন্যের বাড়িত্ বউ হই গেইলে তখোন কি আর মোর তনে এত করি চিন্তা করিবার সময় পাবু?
_ইস্ ভাবি...
_যা হইচে, তোর আর অত ঢঙ করিবা হবে নাই।
এবার ওর ভাবি কমলার উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে ঘরের ভেতরে চলে গেল। ভেতর থেকে কমলার কানে এল বিয়ের গীতের সুর :
ওহে কমলা তোমার নয়নের কাজল
তোমাকে দেখি জালাল মিয়া হইয়াছে পাগল
তোমার মাথায় বা কি
দিনাজপুরের ছবি দেখি টায়রা বানাইছি
তোমার গালায় বা কি
দিনাজপুরের ছবি দেখি মালা বানাইছি।
কমলার আর বুঝতে বাকি থাকে না যে ওর ভাবি ওকে খ্যাপানোর জন্যই ঘরের ভেতর গিয়ে বিয়ের গীত গাইছে। আজকে ভাবির জন্য ওর মনটা কেমন করে! এত স্নেহপ্রবণ আর কত আমুদে এই মানুষটা। দুঃখ বলে যেন কোনো বস্তুই নেই!
দুই.
ওদের ঘরের পেছন দিকে একটা আদা-হলুদ, আলু-কচু আর কাঁটা বেগুনের ক্ষেত। তার মধ্যে দুটি কালোজাম আর একটা কুলের গাছ। মন খারাপ হলে কমলা প্রায়ই এ বাগানে এসে বসে। একটা খুন্তি নিয়ে আলু-কচু আর আদা-রসুন-হলুদের গোড়া খুঁড়ে মাটি আলগা করতে থাকে। ও আজকেও এই ক্ষেতে এল। ওকে দেখে দুটো দোয়েল উড়ে গেল। কার্তিকদের বাগানের বাঁশঝাড়ের দিকে তাকিয়ে দেখে কমলা, কয়েকটা মধুচুষি পাখি গাছের এ-ডাল থেকে ও-ডালে ছুটে বেড়াচ্ছে। কমলার মনে হলো, এরাও যেন ওর মনের কথা টের পেয়েছে। পশু-পাখি আগে থেকেই অনেক কিছু বুঝতে পারে। এরা যে ওর সব কথা জানতে পারছে_এটা আশ্চর্যের কিছুই নয়। আর তাই তো ওরা এমন করছে। ও এসব কী ভাবছে? এসব আবোল-তাবোল কথা লোকে ভাবে নাকি? ও পাগল হয়নি তো! আদতে এসব কথার কোনোই মানে নেই হয়তো।
কিন্তু কাঞ্চন নদের পাড়ের মেয়েরা এমনি করেই ভাবে। এর আশপাশের ঝোপঝাড়, গাছগাছড়া, পাখি-প্রাণী আর এক ধরনের রুক্ষ, বিরূপ অথচ শ্যামল মনোরম এই প্রকৃতি_সবাই আপনজন। প্রকৃতির সঙ্গে অভিন্ন। দোয়েল, কোয়েল মনের কথা বলে, কাঞ্চনের টল্টলে জলে, চিকচিকে বালুতে পানির স্রোতে ওরা জীবনের ছন্দ খুঁজে পায়। ওরা কাঞ্চন নদ ছাড়তে পারে না। এখানে জীবনের দীক্ষা নেয়। কাঞ্চন নদ ওদের সঙ্গে কথা বলে, নাচে, হাসে-কাঁদে।
কমলাদের ঘর পার হয়ে বেগুনক্ষেত, ক্ষেত পার হয়েই দেড় কুড়ি হাত সমান লম্বা একটা বাঁশবাগান। দুই জায়গায় বড় বাঁশ। বাকিগুলো ছোট ছোট কাঁটা বাঁশের ঝাড়। তার মাঝখানে যে সরু রাস্তা আছে, সেটা দিয়ে কাঞ্চন নদের ঘাটে নামা যায়। আর পেছন দিকের উঠোন থেকে কাঞ্চন নদের ঘাট পর্যন্ত মাত্র তিন মিনিটের রাস্তা। ঘাটে যেতে হলে যেকোনো সময়ই চলে যাওয়া যায়। লোকের উঠোন মাড়িয়ে কিংবা রাস্তা দিয়ে কাঞ্চন নদে যেতে হয় না। নিজেদের ক্ষেতের পেছন দিক দিয়েই যাওয়া যায়। এ ঘাটের একটা নাম আছে_রাজাপোড়া ঘাট। এ ঘাটের পাশেই একসময় শ্মশান ছিল। এই শ্মশানের পাশ দিয়েই কমলার বাবার বাবার বাবা এবং অন্য সবাই মাছ ধরে বেড়াতেন। শোনা যায়, কমলার বাবার বাবার বাবা যে রকমভাবে বড়শিতে মাছ ধরতেন, সে রকম কেউ পারত না, পারবেও না। এই ঘাটেই আধমণ ওজনের বোয়াল মাছ বড়শিতে ধরে তিনি জিইয়ে রেখে দিতেন। এমনিভাবে কত যে গজার, চিতল জিইয়ে রাখতেন তিনি। এ ব্যাপারে তার খুব নাম-ডাক ছিল। একবার এক রাজা এ ঘাট দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় মারা যান। রানির আদেশে তাঁকে এ ঘাটের পাশে দাহ করা হয়েছিল বলেই নাকি এ ঘাটের নাম হয়েছে রাজাপোড়া ঘাট।
কমলা গোসল করতে ঘাটে গেল। ওপারে যত দূর দেখা যায় চোখের দৃষ্টি ফেলল তাতে। কোনটা কোন গ্রাম হতে পারে ভাবতে চেষ্টা করল। এইটা হইল্ মালঝাড়, চাকপাড়া, মহেশপুর, গোঁসাইপুর ঠিক চৌখের সামনে যেইটা পড়ে সেইটা মাঝাডাঙ্গা। ও যেখানে দাঁড়িয়ে, সেখান থেকে একটু পুবে যে ঘাটটা সেই দিক দিয়েই তো মানুষটা যায়। প্রায়ই সে সাইকেলে চেপে আসে। কিন্তু কোথা থেকে আসে? মাঝাডাঙ্গা, তেঘরা, ছ্যাতরা, দপ্তইর না কানাইবাড়ি? ওর নাম কী? বাড়িতে কে কে আছে? বিয়ে করেছে? কিন্তু মানুষটা কমলাকে চেনে। এক দিন সে এসেছিল বড় ভাইকে খুঁজতে। সাইকেলটা ঘরের সামনের কদমগাছে রেখে হন হন করে পা বাড়াতে থাকে ভাবির ঘরের দিকে। আজ ওর ঠিক মনে পড়ে গেছে। ওর গায়ের শার্টটা বকের ডানার মতো সাদা। কালো একটা প্যান্ট পরা। জামার হাত দুটি কনুইয়ের কাছে গোটানো। আমজাদ ভাইয়ের মুখে এক জঙ্গল দাড়ি, ওর মুখ কিন্তু পরিষ্কারভাবে কামানো। কালো গোঁফের জন্য মুখের রঙ যেমন ফর্সা, দেখতেও তেমন সুশ্রী। মানুষটা দেখতে বেশ লম্বা-চওড়া। আর গলার স্বরটাও কেমন গম্ভীর। কমলা ভাবতে ভাবতে গোসল শেষ করে উঠে আসে। নদী থেকে উঠে আসতেই দেখতে পায়, ওই মানুষটা আর সঙ্গে সাদা চামড়ার এক বিদেশিনী। কমলার বুকটা কেমন যেন টিপ টিপ করতে থাকে। মানুষটা আর বিদেশিনী ওর আগে আগে ওদের বাড়ির উঠানে গিয়ে ওঠে। কমলা আস্তে আস্তে ভাবতে ভাবতে এগিয়ে যায়।
তিন.
বুড়িমার ভাঙা ঘরে কমলা লুকিয়ে পড়ে। মানুষটার কথা কানে এল ওর। সে বলছে, ভাবি শুনেক, হামার এনজিও থাকি সাহায্য নিবা লাগিলে এই ভেলেনিয়া ম্যাডামের সাথত্ কাথা কহিবা লাগিবে। ওঁয় যেইলা কাথা জানিবা চাহিবে তার উত্তর ঠিক ঠিক করি দিস্ কিন্তু।
মিসেস ভেলেনিয়া সরাসরি চুলার পাশেই বসে পড়ে। আমজাদের বউ মঞ্জিলা একটু অস্বস্তিতে পড়ে যায়। হায় হায় করে কী? হামরা গরিব মানুষ, এলা যে কী দিম্ বসিবা?
মিসেস ভেলেনিয়া বলে_আমার বসিতে লাগিবে না। তুমি কী রান্না করিতেছ?
_মুই এংনা ভাত আর বেগুন ঘণ্ট করেছো।
_তোমরা কি এই বাঁশ আর পাতা জ্বালাইয়া রান্না কর?
_হেঁ
_দিনে কতটুকু জ্বালানি লাগে তোমাদের?
_মুই জানো না। তবে মঞ্জিলা হাত উঁচিয়ে অনুমানে দেখায়।
_এই বাঁশ আর পাতা না থাকিলে তখন তোমরা কী দিয়া রান্না কর?
মঞ্জিলা তখন হাত উঁচিয়ে ঘরের খড়গুলো দেখায়। মিসেস ভেলেনিয়া প্রথমে বুঝতে পারে না, পরে বুঝতে পেরে বলে, হোয়াট! তোমরা ঘরের চাল পুড়াইয়া দাও? তো বৃষ্টির দিনে ঘরে পানি পড়ে না?
_তখন হামরা নয়া খেড় দিয়া ঘর ঠিক করি নেই। আর পুন্না খেড়গুলা দিয়া ভাত আন্ধি।
_এটা অবশ্য ঠিক আছে। আচ্ছা তোমার স্বামী কী করে?
_মাঠত্ কাম করে।
_এখন কোথায়?
_ঘরত্ নিন্দাছে।
_নিন্দাছে মানে ঘুমিয়ে আছে?
_হেঁ,
_ঘরে ঘুমিয়ে কেন? আজ কাজে যায়নি?
_নাহ্, আইজ কাম নাই।
_আমি একটু তোমার স্বামীর সঙ্গে কথা বলিতে চাই।
এবার মোবারক মুখ খোলে। ঘরের দরজায় টোকা দেয়। আমজাদ ভাই এংনা বাহিরত্ আইসেক্ কেনে। ভেলেনিয়া মেডাম তোর সাথত্ এংনা কাথা কহিবা চাহেচে।
_না, মুঁই এখন আসিবা পারিম্ নাই।
_এংনা তুঁই বাহির হই আয়। নাহেতে দরজা ভাঙ্গি ফেলাম।
_দরজা ভাঙ্গি ফেলাইলে তোর এনজিওত্ থাকি দরজা নিয়া আসিম্ তাঁহোঁ খুলিম্ নাই।
_তে অসুবিধাটা কুণ্ঠে কহিবু তো?
_অসুবিধা আছে। মুই দরজা খুলিবা পারিম্ নাই।
এবার ভেলেনিয়া উঠে যায় দরজার দিকে। তখন মঞ্জিলা গিয়ে মোবারককে জানায়, কী করেছেন এইলা, হামরাগুলা গরিব হবা পারি, তাই বুলি কি হামার মানসম্মান নাই? আলালের বাপ মোর শাড়িটা পিন্ধি শুতি আছে আর লুঙ্গিখান ধুই দিছে।
এবার মোবারক হেসে ওঠে। কমলার দিকে ইঙ্গিতপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। কমলাও আবেগে আর লজ্জায় বিহ্বল হয়ে উঠোন পেরিয়ে ঘরের পেছনে বেগুনক্ষেতে চলে যায়। মঞ্জিলা আধভেজা লুঙ্গিটা এনে দেয় আমজাদকে। মিসেস ভেলেনিয়া এবার বিষয়টি বুঝতে পেরে একটু বিস্ময় আর একটু মায়ার চোখে গম্ভীর হয়ে ওঠে। আমজাদ চুলার কাছে মঞ্জিলার পাশে গিয়ে বসে। আর মিসেস ভেলেনিয়া এবার প্রশ্ন করে, তুমি দিনের বেলায় ঘুমিয়ে আছো কেন?
_মোর আইজ কাম নাই সেই তনে এংনা শুতি আছোঁ
_কাজ তো তোমাকে খুঁজিয়া নিতে হইবে।
_ধান কাটা হই গেইলে হামার এইঠেনা কুনো কাম থাকে না।
_শুধু ধান কাটার কাজ কেন? অন্য কাজও তো করিতে পার? এই তোমার বউ যেমন আমাদের সমিতিতে যায়_ওটাও তো একটা কাজ।
_ওইটা হচে মাগিদের ব্যাপার।
_না, না, তুমি খুব অলস আছো।
মোবারক খুব সন্তর্পণে মঞ্জিলা, আমজাদ আর ভেলেনিয়ার কথার মাঝে আস্তে করে উঠে আসে। বাড়ির পেছনে বেগুনক্ষেতে গিয়ে দাঁড়ায়। কমলা বাগানে কাজ করছে।
_ও তুমিই তাহিলে কমলা? তোম্হার ভাই সব সময় কমলা কমলা করি ডাকে শুনি মুই ভাবিনু যে, কমলা বুুঝি একখান ছোট মাইয়া হবা পারে। এখোন তো দেখেছো তুই তো বেইশ ডাগর সুন্দরী মাইয়া!
কমলা কোনো কথা বলে না। লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে। আর ওর মনটা ভরে ওঠে খুশিতে। কাঞ্চন নদ থেকে বয়ে আসা ঠাণ্ডা বাতাসের ছোঁয়ায়ও ওর শরীর ঠাণ্ডা হচ্ছে না। কী একটা উত্তেজনায় ওর রক্তের স্রোত দ্রুত বইতে থাকে। মোবারক অনেকক্ষণ চুপচাপ কমলাকেই শুধু দেখতে থাকে। একসময় নীরবতা ভেঙে প্রশ্ন করে_কিছু কহিন্ না কেনে কমলা?
_আপনি কী কাম করেন?
_মুই এনজিওত্ কাম করোঁ। সব্বাক সাহায্য করোঁ।
_কী সাহায্য?
_মোর অফিসের বাবুলা এইটাক্ কহে মানবিক সাহায্য।
_এইটা ফের কেমন সাহায্য?
_এইটা আস্তে আস্তে বুঝিবা হবে।
_হামাকও সাহায্য করিবা পারিবেন?
_কেনে পারিম্ নাই? তুই চাহিলেই সাহায্য দিম্।
কমলা আর কিছুই বলে না। মঞ্জিলার ডাক শুনতে পেয়ে কমলা ছুটতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে মোবারকের ওপর পড়ে। মোবারক আলতো করে জড়িয়ে ধরে কমলাকে। লজ্জায় ও আরো রাঙা হয়ে ওঠে। এক অজানা আনন্দের শিহরণ জাগে ওর শরীরে। কত সেকেন্ড যে মোবারক কমলাকে ওর বুকে চেপে রাখে_তা বুঝে ওঠার আগেই ও দৌড়ে চলে যায় চুলার ধারে বসে থাকা মঞ্জিলার কাছে। ওখানে গিয়ে টের পায় ওর বাঁ পায়ের কানি আঙুলে একটা চিনেজোঁক রক্ত চুষে বেশ নাদুস-নুদুস হয়ে উঠেছে!
==========================
পুস্তক প্রকাশনা ও বাংলা একাডেমীর বইমেলা  শাহি মনজিলে সাহিত্য উৎসব by শাহীন আখতার  বাজে জসীমউদ্দীন  নান্দনিক চৈতন্য  গ্রামকে শহরে এনেছি  গল্প- জলঝড়  একাত্তরের অপ্রকাশিত দিনপঞ্জি  রশীদ করীমে'র সাক্ষাৎকার- 'মনে পড়ে বন্ধুদের'  প্রাচ্যের ছহি খাবনামা  গল্প- এভাবেই ভুল হয়  গল্প- মাঠরঙ্গ  ফয়েজ আহমেদঃ স্মৃতিতে চিঠিতে  অরুন্ধতী রায়ের সাক্ষাৎকারঃ উপন্যাসের জগতের জগতের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই  ইতিহাস ও জাতি দিয়ে ঘেরা  গল্প- চাল ডাল লবণ ও তেল  ক-য়ে ক্রিকেট খ-য়ে খেলা  গল্পসল্প- ডাংগুলি  হ্যারল্ড পিন্টারের শেষ সাক্ষাৎকারঃ আশৈশব ক্রিকেটের ঘোর  সূচনার পিকাসো আর ভ্যান গঘ  আল্লাহআকবরিজ সি সি  গল্প- কবি কুদ্দুস ও কালনাগিনীর প্রেম  গল্পসল্প- আমার বইমেলা  বাংলাদেশ হতে পারে বহুত্ববাদের নির্মল উদাহরণ  শিক্ষানীতি ২০১০, পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি এবং জাতীয় স্বার্থ  চীন-ভারত সম্পর্ক এবং এ অঞ্চলে তার প্রভাব  নারী লাঞ্ছনার সর্বগ্রাস  একজন এস এ জালাল ও মুক্তিযুদ্ধের তথ্যভাণ্ডার  গল্প- স্বপ্নের মধ্যে কারাগারে  গল্পিতিহাস- কাঁথা সিলাই হইসে, নিশ্চিন্ত  ‘এখন প্রাধান্য পাচ্ছে রম্যলেখা'  অকথিত যোদ্ধা  কানকুনের জলবায়ু সম্মেলন, বাংলাদেশের মমতাজ বেগম এবং আমার কিছু কথা  নাপাম বোমা যা পারেনি, চ্যালেঞ্জার ও আব্রাম্‌স্‌ ট্যাংক কি তা পারবে?  ঠাকুর ঘরে কে রে...!  ষড়যন্ত্র নয়, ক্ষুধা ও বঞ্চনাই আন্দোলনের ইন্ধন  বাহাত্তরের সংবিধানের পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বাধা কোথায়?  ড.ইউনূসের দুঃখবোধ এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা  গীতাঞ্জলি ও চার্লস এন্ড্রুজ  গল্প- তেঁতুল  একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের পুস্তক প্রকাশনা  গল্প- বট মানে গরুর ভুঁড়ি  গল্প- কিশলয়ের জন্মমৃত্যু  গল্প- মাকড়সা  দুর্নীতি প্রতিরোধে আশার আলো


দৈনিক কালের কন্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ মাসুদুল হক


এই গল্প'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.