উপভোগের মন্ত্র জপেই শিরোপা

উত্তাপটা টের পাওয়া যাচ্ছিল সেই দুপুর থেকেই। খেলা শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে বাদ্যি-বাজনা বাজিয়ে, বিশাল ব্যানার নিয়ে, রংবেরঙের মুখোশ বানিয়ে মোহামেডানের গ্যালারিতে হাজির হাজারখানেক ফরাশগঞ্জ সমর্থক। এসেই গোটা কতক পটকা ফুটিয়ে ঢোলের তালে তালে নাচ। উল্টোদিকে আবাহনীর গ্যালারিতে শেখ রাসেলের সমর্থকেরা। লাল টি-শার্ট পরা একদল তরুণ সারাক্ষণ নেচে-গেয়ে মাতিয়ে রাখলেন গ্যালারি। বিশাল জাতীয় পতাকা আর বঙ্গবন্ধু তনয় শেখ রাসেলের প্রতিকৃতি নিয়েও হাজির হয়েছিলেন তাঁদের অনেকে। শেষ পর্যন্ত শেখ রাসেল সমর্থকদের এই হাসি থামিয়ে দিলেন ফরাশগঞ্জের গোলরক্ষক সুজন চৌধুরী।
শেখ রাসেলের ফাইনালে ওঠায় তেমন বিস্ময় ছিল না। তবে ফরাশগঞ্জ এই স্বাধীনতা কাপের অবিশ্বাস্য এক গল্প। সেই ১৯৫৯ সালে ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবের জন্ম। কিন্তু ঢাকার ফুটবলে পদচারণ শুরু ১৯৮১ সালে। এত দিন ধরে তাদের শো-কেসে ছিল না কোনো বড় ট্রফি। কাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে স্বাধীনতা কাপ জয় তাই ফরাশগঞ্জের জন্য স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ব্যাপার। ফাইনালে ওঠাটাই ছিল অপ্রত্যাশিত। এটাই বোধ হয় পক্ষে কাজ করেছে ফরাশগঞ্জের। হারানোর তো কিছু ছিল না তাদের। উল্টো চাপে ভুগতে থাকা শেখ রাসেল যেন নিজেদের খেলাটাই গিয়েছিল ভুলে। দ্বিতীয়ার্ধে সমতায় ফেরার পর বেশ কয়েকবার সুযোগ পেয়েছিল গোল সংখ্যা বাড়ানোর। কিন্তু পারেননি শেখ রাসেলের স্ট্রাইকাররা। কোচ মাহমুদুল হক লিটনও দুষলেন স্ট্রাইকারদেরই, ‘স্ট্রাইকাররা এত গোল মিস করলে কীভাবে হবে? তা ছাড়া ভাগ্যও আমাদের পক্ষে ছিল না। দুবার ক্রসবারে বল লেগেছে।’
ম্যাচ শেষে শেখ রাসেল শিবিরে যখন শ্মশানের নীরবতা, ফরাশগঞ্জ মেতেছে উৎসবে। আনন্দে কেঁদেই ফেললেন কোচ কামাল বাবু। বললেন, ‘আমাদের আসলে হারানোর কিছু ছিল না। ছেলেদের বলেছিলাম, ‘খেলাটা উপভোগ কোরো। এমনকি পেনাল্টির শেষ শট নেওয়ার আগেও বলেছি, হারলেও কাউকে কিছু বলব না।’ দলকে জিতিয়ে বীরের বেশেই ফিরেছেন গোলরক্ষক সুজন। তাঁর ওপর ছিল কোচের অগাধ আস্থা। সেই আস্থার প্রতিদান ভালোমতোই দিলেন এই তরুণ।
আগের তিন ম্যাচের নায়ক সোহেল রানা কাল গোল না পেলেও টুর্নামেন্ট-সেরার স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনিই। চার গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার উঠেছে মুক্তিযোদ্ধার সুদানের স্ট্রাইকার জেমস মগার হাতে।

No comments

Powered by Blogger.