নতুন এক ফাইনাল

কমলাপুর স্টেডিয়ামে তখন অনুশীলনে নেমেছে ফরাশগঞ্জ। দেখতে দেখতেই সংবাদকর্মীদের ভিড় হয়ে গেল। কেউ কোচ, কেউ অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলছেন। ফরাশগঞ্জের জন্য এটা নতুন অভিজ্ঞতা। ঠিক তখন উত্তরার আর্মড পুলিশের মাঠে শেখ রাসেলও নামল অনুশীলনে। সেখানকার পরিবেশও একই রকম।
দুটি ছবিই একসূত্রে গাঁথা। আজ বিকেল পাঁচটায় শুরু স্বাধীনতা কাপ ফাইনালের দুই কুশীলব তারা। মঞ্চটা এবার বেশ অনাকর্ষক। শেখ রাসেল ফাইনালে উঠতেই পারে। কিন্তু ফরাশগঞ্জ? গ্রুপ পর্বেই যাদের বাতিল করে দেয় সবাই, সেই দলটাই ফাইনালে!
আবাহনী-মোহামেডানময় ফাইনাল দেখতেই একসময় অভ্যস্ত ছিল দেশের ফুটবল। এই দুই দল ব্যর্থ হলে মুক্তিযোদ্ধা-ব্রাদার্স। শেখ জামাল ছিল এবার অন্যতম বড় নাম। কিন্তু এই স্বাধীনতা কাপ সব হিসাব পাল্টে দিয়েছে। সব বড় নাম আজ দর্শকাসনে।
বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল আজ তাই নতুন এক ফাইনালই দেখছে। শেখ রাসেল-ফরাশগঞ্জ এই প্রথম খেলছে কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে। ২০০২ সালে প্রিমিয়ারে ওঠা শেখ রাসেল ওই বছরই লিগে রানার্সআপ। প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পেরিয়েও বলার মতো কোনো ট্রফি পায়নি ফরাশগঞ্জ। ব্যতিক্রম গত সুপার কাপের প্লেট গ্রুপে ফাইনালে খেলা এবং সেখানে তারা হারিয়েছিল শেখ রাসেলকেই। কিন্তু প্লেট জেতা তো বলার মতো সাফল্য নয়।
ফরাশগঞ্জের ফাইনালে আসাটা রূপকথার মতো। গ্রুপ ম্যাচে রহমতগঞ্জের সঙ্গে ২-২ ড্র। মুক্তিযোদ্ধার কাছে তাদের হার ৪-১ গোলে, কিন্তু রহমতগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধার কাছে ৪-২ গোলে হারায় গোল গড়ে ভাগ্যগুণে শেষ আটে ফরাশগঞ্জ! দলটির সহকারী কোচ জাতীয় দলের সাবেক ডিফেন্ডার ফয়সাল আহমেদ হেসে বললেন, ‘১৯৯২ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ইমরান খানের পাকিস্তানের মতো ভাগ্য সাহায্য করল আমাদের।’
আর্থিকভাবে বাজে অবস্থায় থাকা ক্লাবটি হঠাৎই জেগে উঠেছে। কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে হারিয়ে দিয়েছে দেশের সেরা দুই শক্তি আবাহনী-শেখ জামালকে। কোচ কামাল বাবুরই এটি বিশ্বাস হতে চায় না, ‘ফাইনালে খেলব, স্বপ্নেও ভাবিনি!’
এটি এমন এক ফাইনাল, দুই ক্লাব ছাড়া আর কোথাও আগ্রহ নেই। বাফুফে অফিস শূন্য, ক্লাবপাড়া ঘুমিয়ে। তবে উত্তরায় শেখ রাসেলের ক্যাম্প আর পুরান ঢাকায় বুড়িগঙ্গার কোলঘেঁষা ফরাশগঞ্জ ক্লাবে উৎসবময় পরিবেশ। ফরাশগঞ্জের গোলরক্ষক তারেকসহ মাত্র দু-তিনজন খেলোয়াড়ের ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা আছে। রানার্সআপ হলেই দলটি বর্তে যাবে।
ফরাশগঞ্জ অধিনায়ক খোকন দাস কাল অনুশীলনে সতীর্থদের উদ্দেশে দিলেন উদ্দীপনামূলক বক্তব্য, ‘আর একটা ম্যাচ জিতলেই চ্যাম্পিয়ন! জানপ্রাণ ঢেলে খেলতে হবে বন্ধুরা।’ আফ্রিকান স্ট্রাইকার কালু জনসনের কণ্ঠেও একই সুর, ‘একটা কথাই ভাবো। জয়, জয় আর জয়।’
ফরাশগঞ্জ প্রতিআক্রমণ-নির্ভর ফুটবল খেলেই এই সাফল্য পেয়েছে। প্রতিপক্ষের সীমানায় নয়, নিজেদের অর্ধ থেকেই প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করে একটা দল হয়ে খেলে তারা। গোল করে গোল ধরে রাখতে পারছে ফরাশগঞ্জ। শেখ রাসেল অধিনায়ক আমিনুল চান সেই দেয়াল ভেঙে দিতে, ‘আমরা এত কাছে এসে ফিরতে চাই না। জিততে আমাদের হবেই।’ কোচ মাহমুদুল হক অবশ্য সমীহ করছেন প্রতিপক্ষকে, ‘ওরা এত দূর এসেছে ভালো ফুটবল খেলে। আমরা সমীহ করি।’
রুশ স্ট্রাইকার এডওয়ার্ড তিনটি গুরুত্বপূর্ণ গোল করে রাসেলকে তুলেছেন ফাইনালে। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের তরুণ সোহেল রানা সেমিফাইনালে গোল করে জিতিয়েছেন ফরাশগঞ্জকে। আজও সোহেলের দিকে তাকিয়ে থাকবে দল। লাল কার্ড ও চোট সমস্যায় চার বিদেশির দুজনসহ সেরা দল যে পাওয়া যাচ্ছে না।
ধারেভারে ফেবারিট শেখ রাসেল। চ্যাম্পিয়ন হলে দলটি খেলোয়াড়দের ৭ লাখ টাকা বোনাস দেবে। ফরাশগঞ্জ এক লাখ দেবে বলেছে। তবে বোনাস নয়, প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ কাজে লাগানোই দুই দলের মূল মন্ত্র। চ্যাম্পিয়ন শব্দটাই যে জাদুকরি!

No comments

Powered by Blogger.