মিসরাতায় গাদ্দাফি বাহিনীর ব্যাপক হামলা

লিবিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর মিসরাতায় গতকাল রোববার গাদ্দাফি বাহিনী ব্যাপক বোমা ও রকেট হামলা চালিয়েছে। দেশটির উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী খালেদ কাইম ‘মিসরাতা অভিযান স্থগিত করা হয়েছে’ ঘোষণা করার কিছুক্ষণ পরই গাদ্দাফির অনুগত সেনারা এই হামলা চালায়। এদিকে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে ন্যাটো আবারও বিমান হামলা চালিয়েছে। তবে এতে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী খালেদ কাইম গতকাল সকালের দিকে রাজধানী ত্রিপোলিতে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মিসরাতায় অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। তবে সেনা প্রত্যাহার করা হয়নি। একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করতে স্থানীয় উপজাতি নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘উপজাতি নেতারা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ...আমরা বিশ্বাস করি, মিসরাতার পরিস্থিতি সামরিকভাবে নয়, শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা সম্ভব হবে।’
কিন্তু উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী কাইমের এমন বক্তব্যের পরও মিসরাতায় গাদ্দাফি বাহিনী হামলা চালায়। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে শহরটি অবরুদ্ধ করে রেখেছে গাদ্দাফির অনুগত সেনারা। শহরের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহীদের সঙ্গে গাদ্দাফি বাহিনীর গেরিলাযুদ্ধ চলে। লিবিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম এই শহরে গত শনিবার ২৮ জন নিহত ও অন্তত ১০০ জন আহত হয়। মিসরাতার বেসরকারি প্রধান হাসপাতালের চিকিৎসক খালিদ আবু ফালরা জানান, শহরে প্রতিদিন গড়ে ১১ জন করে নিহত হচ্ছে।
লিবিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা জানা জানায়, ত্রিপোলির সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় ন্যাটো বিমান হামলা চালিয়েছে। আল-খুমস, ঘরিয়ান, এল আসা ও সিরতে এলাকায় এসব হামলা চালানো হয়। তবে এতে হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকেরা জানান, ত্রিপোলির ওপর দিয়ে ন্যাটোর বিমান চলে যাওয়ার পর পর তিনটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। এর কিছু সময় আগে ত্রিপোলির কেন্দ্রস্থলসহ কয়েকটি স্থানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এ ছাড়া বিমানবিধ্বংসী গোলা ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলির শব্দ পাওয়া গেছে।
এদিকে ন্যাটো জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের চালকবিহীন যুদ্ধবিমান দিয়ে লিবিয়ায় হামলা চালানো হয়েছে। এতে মিসরাতায় বেসামরিক লোকজনকে লক্ষ্য করে হামলার উদ্দেশ্যে রাখা গাদ্দাফি বাহিনীর বহু রকেট লঞ্চার ধ্বংস হয়।
অনেক দেশে গাদ্দাফির সম্পদ বাজেয়াপ্ত হচ্ছে না: মার্কিন প্রভাবশালী পত্রিকা লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক দেশ গাদ্দাফির সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখাচ্ছে। আবার কোনো কোনো দেশ তাঁর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দুটি প্রস্তাব পাস হয়। এতে বিভিন্ন দেশে থাকা গাদ্দাফির সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং গাদ্দাফি, তাঁর পরিবার ও ঘনিষ্ঠ ১৮ ব্যক্তির লিবিয়া ছাড়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে সূত্রের নাম উল্লেখ না করে বলা হয়, মধ্য ফেব্রুয়ারিতে লিবিয়ায় বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে গাদ্দাফি বিভিন্ন দেশ থেকে শত শত কোটি ডলার ফেরত নিয়েছেন। এতে আরও বলা হয়, তুরস্ক, কেনিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ গাদ্দাফির সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার ক্ষেত্রে গড়িমসি করছে। এই দেশগুলোর সঙ্গে লিবিয়ার ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.