শেয়ারবাজার থেকে বিশেষ সুবিধা নিতে নতুন কৌশল

নতুন কৌশলে শেয়ারবাজার থেকে বিশেষ সুবিধা তুলে নিতে নর্দার্ন পাওয়ার সল্যুউশন ৫০ ভাগ রূপান্তযোগ্য বন্ড ছাড়ার অনুমোদন চেয়ে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (এসইসি) আবেদন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কোম্পানিটি তাদের মূলধন আরও ১৭৫ কোটি টাকা বাড়াতে এসইসিতে এই আবেদন করেছে। বর্তমানে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৯১ কোটি টাকা। এসইসি আজ বুধবার অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এ বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে জানা গেছে।
নর্দার্ন পাওয়ারের উদ্যোক্তাদের মধ্যে রয়েছেন রাজশাহী-৪ আসনের সরকারি দলের সাংসদ এনামুল হক, তহুরা হক ও বেক্সিমকো গ্রুপের বেক্সটেক লিমিটেড। বেক্সটেক্সকে প্রতিনিধিত্ব করছেন সালমান এফ রহমান।
সূত্রগুলো বলছে, নিয়ম অনুসারে ৫০ কোটি টাকার বেশি মূলধন সংগ্রহ করতে হলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হয়। কিন্তু নর্দার্ন পাওয়ার প্রাথমিক শেয়ারের গণপ্রস্তাবে (আইপিও) না গিয়ে বন্ড (এক ধরনের ঋণ) ছেড়ে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে আপাতত তাদের মূলধন আরও ১৭৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই বন্ডের ৫০ ভাগ বছরভিত্তিতে এবং সম্পূর্ণ চার বছরে সাধারণ শেয়ারে রূপান্তর হবে। সব বন্ডই সম্পূর্ণ হস্তান্তরযোগ্য হবে।
অন্যদিকে এসইসির আইনে বাধ্যবাধকতা থাকায় কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে এবং এর জন্য একপর্যায়ে গণপ্রস্তাবেও যেতে হবে নর্দার্নকে। কিন্তু ততদিনে বন্ডের একটা অংশ সাধারণ শেয়ারে রূপান্তর হয়ে যাবে।
এই বন্ডের সুদের হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ শতাংশ এবং কোনো কারণে সুদ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ১৯ শতাংশ হারে তা পরিশোধ করবে কোম্পানিটি। কোম্পানি রাজশাহী জেলার কাটাখালীতে ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করবে। এর জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছ থেকে পাঁচ বছরের জন্য লিটারপ্রতি ২৬ টাকা ধরে জ্বালানি তেলের নিশ্চয়তাও পেয়েছে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছে বিক্রি করা হবে। এসব কারণে সাধারণভাবেই ধরে নেওয়া যায়, কোম্পানিটি আইপিও বা শেয়ার বিনিয়োগকারীদের কাছে অত্যন্ত লোভনীয় হবে।
সূত্রগুলো বলছে, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এই বিবেচনাতেই মূলত কৌশল করে এখনই আইপিওতে যাচ্ছে না। এখনই আইপিওতে গেলে কোম্পানি অভিহিত মূল্যের চেয়ে বেশি দর নিতে পারবে না ‘গ্রিনফিল্ড’ (স্থাপিতব্য কোম্পানি) হওয়ায়। কিন্তু কার্যক্রম চালিয়ে লাভ দেখাতে পারলে মোটা প্রিমিয়ামসহ (অভিহিত মূল্যের চেয়ে বেশি দরে) গণপ্রস্তাব করা যাবে। আবার একই সঙ্গে সে সময় বর্তমান রূপান্তরযোগ্য বন্ডের একটা অংশ সাধারণ শেয়ারে (অভিহিত মূল্যে) পরিণত হওয়ায় তা বাজারদরে বিক্রি করেও মোটা অঙ্কের মুনাফা তুলে নেওয়া যাবে।
যোগাযোগ করা হলে সাংসদ এনামুল হক বলেছেন, গ্রিনফিল্ড হওয়ায় তাঁরা আইপিওতে এখনই যাচ্ছেন না। এক বছর পরই তাঁরা আইপিওতে যাবেন। তিনি অবশ্য বলেন, তাঁরা ব্যাংক ঋণ পাচ্ছেন না বলেই বন্ড ছেড়ে অর্থ সংগ্রহ করছেন।
সূত্রগুলো বলছে, এই বন্ডের প্রস্তাবটি এসেছে আসলে আগের মতো প্রাক-আইপিও প্লেসমেন্ট শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করার সুযোগ না থাকায়। বিগত কয়েক বছরে এই প্রাক-আইপিও শেয়ার দিয়ে বাজারে শেয়ারমূল্যে কারসাজি হয়েছিল। এখন নতুন আদলে রূপান্তরযোগ্য বন্ড প্রাক-আইপিও প্লেসমেন্টের জায়গায় কৌশলী প্রস্তাব আকারে আসছে।
এসইসিতে নর্দার্ন পাওয়ারের আবেদনে কারা রূপান্তরযোগ্য বন্ডটি নেবে তার তালিকা পাঠানো হয়নি। সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবি নর্দার্ন পাওয়ারের ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।
এসইসির চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খোন্দকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অবশ্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিশনের সভায় আগামীকাল (আজ বুধবার) নর্দার্ন-এর বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কিছু তথ্য এখনো না পাওয়ায় সেটা হবে না। আমরা বরং তথ্যগুলো চাইব। তারপর যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেব কী করা যায়।’

No comments

Powered by Blogger.