তদন্ত কমিটির কার্যক্রম শুরু

পুঁজিবাজারে অস্বাভাবিক উত্থান-পতনের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার কমিটি তাদের পরিচিতি পর্ব শেষ করেছে।
গতকাল বিকেলে কমিটির প্রধান ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ কমিটির অপর দুই সদস্যকে নিয়ে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচিতি পর্ব শেষ করেন। এসইসি এই কমিটিকে সাচিবিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দেবে।
কমিটির প্রধান ইব্রাহিম খালেদ টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার বলেছে, এসইসি আমাদের সাচিবিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দেবে। এসইসির অনেকের সঙ্গে আমাদের ভালো পরিচয় নেই। তাই আমরা আজ তাঁদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক পরিচয় পর্ব শেষ করেছি।’
কমিটির প্রধান জানান, পরিচিতি বৈঠকে তাঁরা এসইসির কর্মকর্তাদের কাছে রোববার থেকে কাজ শুরুর আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। প্রয়োজনীয় সহায়তাও চেয়েছেন। তিনি আরও আশা করছেন, রোববার থেকে পুরোদমে কাজ শুরু করা যাবে।
জানা গেছে, তদন্ত কমিটির দপ্তর হবে এসইসিতে। একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার ভিত্তিতে কমিটি তাদের কাজ শুরু করবে। আগামী রোববারের মধ্যেই এই কর্মপরিকল্পনা তৈরি হতে পারে বলে কমিটির প্রধান জানান।
গত বুধবার বিকেলে সরকারের নির্দেশে এসইসি তিন সদস্যের কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে। তাতে তদন্তকাজের জন্য কমিটিকে ১১টি কার্যপরিধি ঠিক করে দেওয়া হয়। এর বাইরে কমিটি চাইলে বাজারসংশ্লিষ্ট যেকোনো ব্যক্তির (সুশীল সমাজের সদস্যসহ) সাক্ষ্য নিতে পারবে। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, সরকার চাইলে কমিটিতে অন্য যেকোনো সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।
বাজার পরিস্থিতি: গতকাল সপ্তাহের শেষ দিনে শেয়ারবাজার কিছুটা স্বাভাবিক ধারায় ফিরেছে। আগের দুই দিন অনেকাংশে বিক্রেতাশূন্য ছিল বাজার। মঙ্গল ও বুধবার লেনদেনের শুরুতেই বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম দিনের সর্বোচ্চ সীমায় (সার্কিট ব্রেকার) পৌঁছে যায়। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ সূচক বাড়ে প্রায় ৯৫৪ পয়েন্ট। বাজার বিশ্লেষকেরা বলেছেন, একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বাজারের ওই আচরণ ছিল স্বাভাবিক।
তবে গতকাল বাজার যে আচরণ করেছে, সেটিকে অনেকটা পরিণত আচরণ বলে মনে করেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) নেতারা। তাঁরা বলেন, বৃহস্পতিবার বাজারে পর্যাপ্ত ক্রেতা-বিক্রেতা ছিল, যে কারণে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে।
ডিএসই: আগের দুই দিন যথাক্রমে ২০৬ ও ৫৮৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। আর গতকাল লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৩০ কোটি টাকার বেশি। ঢাকার বাজারে এদিন ২৫৭টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৩৯টির ও কমেছে ১১৫টির। অপরিবর্তিত ছিল তিনটির দাম। দিন শেষে সাধারণ মূল্যসূচক আগের দিনের চেয়ে প্রায় ১০৬ পয়েন্ট বেড়ে হয়েছে সাত হাজার ৩৮৬।
সিএসই: চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) গতকালও কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রেতাশূন্য ছিল। দিন শেষে সিএসইর সার্বিক সূচক প্রায় ৯০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৯৬৫ পয়েন্টে।
গতকাল সিএসইতে ১৮৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৭৬টির এবং কমেছে ১০০টির। অপরিবর্তিত ছিল ১৩টির দাম। এদিন ১২৬ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। আগের দিনের তুলনায় তা ১৭ কোটি টাকা বেশি।
বিএমবিএর সভা: এদিকে গত কয়েক দিনের শেয়ারবাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় গতকাল বিকেলে সভা করেছেন মার্চেন্ট ব্যাংকার্সদের সংগঠন বিএমবিএর নেতারা। রাজধানীর মতিঝিলের পূর্বাণী হোটেলে অনুষ্ঠিত সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনও করা হয়। তাতে বিএমবিএর নেতারা বলেন, বর্তমান বাজার আশানুরূপ আচরণ করছে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরছে। গতকালের বাজার বেশ পরিপক্ব আচরণ করেছে বলেও দাবি করেন সংগঠনটির নেতারা। এভাবে চলতে থাকলে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে বলেও মত দেন তাঁরা।

No comments

Powered by Blogger.