অস্ট্রেলিয়ায় চীনা ইতিহাস

আগের রাতে ভালো ঘুম হয়নি। স্বামী বড্ড জ্বালাতন করছিলেন। না, রোমান্টিক কিছু নয়, স্বামী বেচারার আবার নাক ডাকার ধাত। লি নার ঘুম আজ এবং কালও ভালো হওয়ার কথা নয়। ইতিহাস গড়ার ধুকপুকানি বুকে নিয়ে বেঘোরে ঘুমাতে চাইলে কুম্ভকর্ণের বংশধর হতে হয়। লি অবশ্যই তা নন।
চীনের ২৮ বছর তরুণী অবশ্য এরই মধ্যে ইতিহাস গড়ে ফেলেছেন। ওপেন যুগে প্রথম এশিয়ান নারী হিসেবে উঠে এসেছেন কোনো গ্র্যান্ড স্লাম এককের ফাইনালে। সেটিও টুর্নামেন্টের এক নম্বর বাছাই ক্যারোলিন ওজনিয়াকিকে ৩-৬, ৭-৫, ৬-৩ গেমে হারিয়ে। ফাইনালে তাঁর প্রতিপক্ষ প্রত্যাবর্তন-রানি কিম ক্লাইস্টার্স। ২০০৯ সালের শেষাশেষি ফিরে আসার পর তৃতীয় শিরোপার সন্ধানে শনিবার রড লেভার অ্যারেনায় ক্লাইস্টার্স মুখোমুখি হবেন লির। কাল আরেক সেমিফাইনালে বেলজিয়ান তারকা সরাসরি সেটে (৬-৩, ৬-৩) হারিয়েছেন ভেরা জনারেভাকে।
কালকের দিনটা ‘এশিয়ার দিন’ হয়ে গেল পুরুষ দ্বৈতের ফাইনালে ভারতীয় জুটি মহেশ ভূপতি আর লিয়েন্ডার পেজ ওঠায়। ফাইনালে তাঁদের প্রতিপক্ষ ব্রায়ান ব্রাদার্স বব আর মাইক।
চীনের অনেক ‘প্রথম’-এর জন্ম দিয়েছেন লি। প্রথম ডব্লুটিএ শিরোপা জেতা চীনা নারী, র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা দশে ওঠার দিক দিয়েও প্রথম। প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠে এসে মজা করেই বললেন, ‘প্রথম চীনা নারী হিসেবে ফাইনালে উঠতে পেরে আমি গর্বিত। আসলে আমি সব সময়ই প্রথম দৃষ্টান্ত গড়তে চাই।’
লির রসবোধের পরিচয় কোর্টেও পাওয়া গেছে। প্রথম সেটে খুব একটা জমিয়ে লড়াই করতে পারেননি। দ্বিতীয় সেটেও পিছিয়ে পড়েছিলেন। ওজনিয়াকি ম্যাচ পয়েন্টের জন্য সার্ভ করছিলেন, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। এর মধ্যে কোচ জিয়াং শানের দিকে তির্যক চোখে তাকাচ্ছিলেন বারবার। না, পরামর্শ চাইতে নয়, জিয়াং যে তাঁর স্বামীও, তাঁর কারণেই তো ভালো ঘুম হয়নি।
পরে কোর্টে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময়ও মজা করে বলেছেন, ‘সেমিফাইনাল বলে নার্ভাস তো ছিলামই। তবে কালকে ভালো ঘুম হয়নি। ও বারবার নাক ডাকছিল। প্রায় প্রতি ঘণ্টায় আমার ঘুম ভেঙে গেছে।’
গতবারও অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে দুর্দান্ত খেলেছিলেন। ওজনিয়াকি, ভেনাসকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছিলেন। আফসোস, সেখানে তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলেন সেরেনা, টুর্নামেন্টের ভাবী চ্যাম্পিয়ন। এবার আর কোনো হতাশায় পুড়তে চান না। কাল শিরোপা জিতেই দিতে চান শান্তির ঘুম!

No comments

Powered by Blogger.