এরশাদের বিচারে দুই দলেরই আগ্রহ কম ___প্রথম আলো থেকে

বৈধভাবে ক্ষমতা দখলের অভিযোগে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিচার হবে কি না, সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে তা বলা হয়নি। বরং তাঁর বিচার করা সরকারের জন্য বিব্রতকর হবে বলে মন্তব্য করেছেন মহাজোটের নেতারা। আর এ বিষয়ে বিরোধী দল বিএনপির অবস্থানও অনেকটা একই। হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, দেশে সামরিক শাসন জারির জন্য এরশাদ ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহ কর্মকাণ্ড করেছেন। এ জন্য তাঁর বিচার হওয়া উচিত।
এ বিষয়ে সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে কি না, সরকার তা তলিয়ে দেখবে। আদালত ভবিষ্যতে সামরিক শাসনকে নিরুৎসাহিত করতে নির্ভুল আইন প্রণয়নের কথাও বলেন। এই রায় সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাংসদ ওবায়দুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘তথ্যপ্রমাণ পাওয়া সাপেক্ষে এরশাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এই রায়কে সবাই স্বাগত জানিয়েছে। তবু বিষয়টি সরকারের জন্য অস্বস্তিকর হবে। কেননা এরশাদ মহাজোটের শরিক। যদিও আমি মনে করি, এরশাদের শাস্তি হওয়াটা বাঞ্ছনীয়।’ তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে সরকারের জন্য ইতিবাচক বিষয় হলো জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো আদর্শিক জোট নেই। এ জোট কৌশলগত। তা ছাড়া এটা জাতীয় পার্টির ব্যাপার নয়, ব্যক্তিগত ব্যাপার। সরকার চাইলে ব্যবস্থা নিতেই পারে। তবে সব কিছুতেই সরকারকে রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এরশাদ মহাজোট সরকারের শরিক। এ অবস্থায় আদালতের পরামর্শ অনুযায়ী এরশাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সরকারের জন্য কষ্টকর এবং বিব্রতকর হবে। এমনও হতে পারে, সরকার আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এরশাদকে চাপে রাখতে বিষয়টিকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় আমরা অপেক্ষা করে দেখতে চাই সরকার কী করে?’
এরশাদের বিচার হওয়া উচিত বলে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, সে বিষয়ে একমত কি না, জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে মত দিতে চাই না। দলীয় সিদ্ধান্তের পর বলা যাবে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এরশাদের বিচারের ব্যাপারে অতীতের সরকারগুলোর রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছিল না। নব্বইয়ের পর বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তখনকার অ্যাটর্নি জেনারেল আমিনুল হক এরশাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ১৮ বার। কিন্তু সরকার সদিচ্ছা দেখায়নি। আওয়ামী লীগও চুপ ছিল। এখনো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। এরশাদ তাদের শরিক। সুতরাং এবারের সরকার কী করে, তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে।’
মোজাফ্ফর আহমদ আরও বলেন, এরশাদের বিচার হওয়া উচিত বলে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, তার ভিত্তি আছে। আদালত এ দায়িত্বটি সরকার ও সংসদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন এবং আইন করতে বলেছেন। সংসদ যদি আইন করে, সেটা ভবিষ্যতের অপরাধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। কিন্তু পুরোনো অপরাধের জন্য এ আইন কতটা প্রযোজ্য হবে, সেটা একটা প্রশ্ন।
হাইকোর্টের রায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাংসদ রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, ‘আমরা আশির দশক থেকেই সব সময় বলে এসেছি, এরশাদ অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী। যে কারণে ১৯৮৬-এর নির্বাচন বর্জন করেছি। সপ্তম সংশোধনীর সময়ও বলেছি, এ সংশোধনী অবৈধ।’
মেনন আরও বলেন, ‘নব্বইয়ে এরশাদ সরকারের পতনের পর সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর সময় কমিটির সদস্য হিসেবে আমি অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের বিরুদ্ধে সংবিধানে শাস্তির ব্যবস্থা রাখার প্রস্তাব করেছিলাম। কারণ সামরিক শাসনের পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য সাংবিধানিকভাবে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ থাকা উচিত। ওই সময় হাসানুল হক ইনু মামলাও করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সে সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।’
এরশাদের বিচারের ব্যাপারে সরকার কতটা আন্তরিক হবে জানতে চাইলে মেনন বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এরশাদের শাস্তি হওয়া উচিত।’
মহাজোটের অপর শরিক জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘স্বৈরশাসক এরশাদের বিচার চেয়ে আমি ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে মতিঝিল থানায় মামলা করেছিলাম। দুঃখজনক হলো, ১৯৯৫ সালের জুনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেছিলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে মামলার কাজ স্থগিত রয়েছে, যে কারণে ১৯৯৬ সালের নভেম্বরে এক লাখ টাকা মুচলেকা দিয়ে এরশাদ ঢাকার মেট্রোপলিটন আদালত থেকে জামিন পেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষের অনাগ্রহের কারণে বছর দুই আগে আমাকে না জানিয়েই মামলাটি আদালত খারিজ করে দেন। অর্থাৎ খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার সরকার—কেউই মামলাটি চালানোর ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না।’ তিনি মনে করেন, দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য এরশাদের শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। তিনি আশা করেন, মহাজোট সরকার এ বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘এ বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমার কিছু বলার নেই। এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। আদালত অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারীদের শায়েস্তা করার জন্য সংসদে আইন প্রণয়নের কথা বলেছেন।’
যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তাঁরা বলেন, ব্যক্তিগতভাবে মত প্রকাশ করার কিছু নেই। তবে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর দলীয়ভাবে মতামত জানানো হবে।
============================
কিশোরদের সাদামাটা ফল  জিপিএ-৫ পেয়েছে আট হাজার ৫২ জন  এরশাদের বিচার হওয়া উচিত  ছোটদের বড় সাফল্য  প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষাঃ পাস ৯২%, প্রথম বিভাগ বেশি  বাংলাদেশের বন্ধুঃ জুলিয়ান ফ্রান্সিস  নিষ্ফল উদ্ধার অভিযানঃ দখলচক্রে ২৭ খাল  জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ বনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  ভ টিজিং : জরুরি ভিত্তিতে যা করণীয়  প্রতিশ্রুতির দিন  শোকের মাস, বিজয়ের মাস  চীনা প্রধানমন্ত্রীর পাক-ভারত সফর  দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীন মন্তব্য  নতুন প্রজন্ম ও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা  খিলক্ষেতে আগুনঃ কয়েলের গুদামে রাতে কাজ হতো ঝুঁকিপূর্ণভাবে  ভারতে বিহার রাজ্যের নির্বাচন  স্বপ্ন সত্যি হওয়ার পথে  আমাদের আকাশ থেকে নক্ষত্র কেড়ে নিয়েছিল যারা...  মুক্তির মন্দির সোপান তলে  আবেগ ছেড়ে বুদ্ধির পথই ধরতে হবে  বছর শেষে অর্থনৈতিক সমীক্ষা পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ  দুই কোরিয়ার একত্রিকরণ কি সম্ভব  গ্যাসের ওপর বিপজ্জনক বসবাস  উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ  সময়ের দাবি জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি  জনসংখ্যা বনাম জনশক্তি  ব্যাংকের টাকা নয়ছয় হওয়া উচিত নয়  একটি পুরনো সম্পর্কের স্মৃতিচিত্র  পাটশিল্প ঘুরিয়ে দিতে পারে অর্থনীতির চাকা  ড. ইউনূসকে বিতর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে হবে  সুশিক্ষার পথে এখনও বাধা অনেক  ব্যক্তির স্বাধীনতা হরণ ও মর্যাদাহানির পরিণাম কখনই শুভ হয় না ঘুষ ও লুটপাট উভয়ের বিরুদ্ধে একই সাথে লড়তে হবে  সুনীতি ও সুশাসন  আমি কেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের পক্ষে  শ্রমিক অসন্তোষ বর্তমান প্রেক্ষিত  জীবন ব্যাকরণঃ দর্জির মুক্তিযুদ্ধ  তথ্যের অধিকার ও জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ  শালীন ও সংযত কথাবার্তা কি শুধু একতরফা হতে হবে?  একটি অসমাপ্ত গল্প  মুসলিম বিশ্বে সেক্যুলারিজমের বর্তমান ও ভবিষ্যত


দৈনিক প্রথম আলো এর সৌজন্যে

এই খবর'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.