সামরিক অভিযানের হুমকি সত্ত্বেও ক্ষমতা ছাড়ছেন না বাগবো

সামরিক অভিযানের হুমকি সত্ত্বেও ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন আইভরি কোস্টের প্রেসিডেন্ট লঅন্ত বাগবো। পাল্টা হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, কোনো দেশ আইভরি কোস্টের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আলাসেন ওয়েতাহাকে সমর্থন দিলে, সেই দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করবেন তিনি।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর অর্থনৈতিক জোট ইসিওডব্লিউএএসের পক্ষ থেকে বেনিনের প্রেসিডেন্ট থমাস ইউয়েয়ি বোনি, সিয়েরা লিয়নের প্রেসিডেন্ট আর্নেস্ট বাই করোমা ও কেপ ভার্দের প্রেসিডেন্ট পেদ্রো ভেরোনা রদ্রিগেজ পিরেস গত মঙ্গলবার আইভরি কোস্টের প্রধান শহর আবিদজান পৌঁছান। সেখানে দেশটির প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনে বাগবোর সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে স্বীকৃতি পাওয়া প্রেসিডেন্ট ওয়েতাহার সঙ্গেও বৈঠক করেন তিন প্রেসিডেন্ট। এসব পৃথক বৈঠকের ব্যাপারে খুব বেশি কিছু জানা যায়নি।
বেনিনের প্রেসিডেন্ট ইউয়েয়ি বোনি বৈঠকের পর সাংবাদিককের বলেন, ‘সবকিছু ঠিকমতো হয়েছে।’ কেপ ভার্দের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগেজ পিরেস বলেন, ‘আমাদের সফর সফল বা ব্যর্থ বলে বিচার করা যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, আমরা এখানে ইতিবাচক একটি কাজ করতে এসেছি, এর বেশি কিছু নয়।’ আবিদজান থেকে নাইজেরিয়া ফিরবেন তিন প্রেসিডেন্ট। তাঁরা আবিদজান সফর নিয়ে ইসিওডব্লিউএএসের চেয়ারম্যান ও নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট গুডলাক জনাথনের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
সামরিক অভিযানের হুমকি সত্ত্বেও নিজের অবস্থানে অনড় রয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাগবো। তাঁর একজন উপদেষ্টা বলেন, প্রেসিডেন্ট বাগবো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ও বৈধ প্রেসিডেন্ট। আইভরি কোস্টের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ইসিওডব্লিউএএসের হস্তক্ষেপ তাঁর বিরুদ্ধে ‘আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের’ অংশ।
প্রেসিডেন্ট বাগবোর সরকারের পক্ষে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ওয়েতাহাকে সমর্থন দিলে সেই দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করবেন তিনি। এ ছাড়া আইভরি কোস্টে নিযুক্ত ওই দেশের দূতকেও বহিষ্কার করা হবে। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়, আইভরি কোস্টে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক বাস করে। সামরিক অভিযান চালানো হলে সবাই ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
আবিদজানের একটি হোটেলে কার্যালয় বানিয়ে অবস্থান করছেন ওয়েতাহা। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর ৮০০ সদস্য তাঁর নিরাপত্তা দিচ্ছেন। ওই হোটেলে প্রায় তিন ঘণ্টা ওয়েতাহার সঙ্গে বৈঠক করেন তিন প্রেসিডেন্ট। বৈঠকের পর তাঁরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি।
তবে ওয়েতাহার মুখপাত্র প্যাট্রিক আসি জানান, তিন প্রেসিডেন্ট ওয়েতাহাকে জানিয়েছেন, তাঁরা বাগবোকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পদত্যাগ করতে বলেছেন। আইভরি কোস্টের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওয়েতাহার পদ নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনাও হবে না বলে বাগবোকে জানিয়েছেন তাঁরা।
এদিকে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানিয়েছে, সহিংসতা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে আইভরি কোস্টের ১৯ হাজার ১২০ জন নাগরিক পাশের দেশ লাইবেরিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ নভেম্বর আইভরি কোস্টের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট গ্রহণ হয়। দেশটির স্বাধীন নির্বাচন কমিশন বিরোধীদলীয় প্রার্থী আলাসেন ওয়েতাহাকে জয়ী ঘোষণা করে। কিন্তু ওই ফল প্রত্যাখ্যান করে সাংবিধানিক পরিষদের সমর্থন নিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন বাগবো। ওয়েতাহাও পৃথকভাবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ওয়েতাহার প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রেসিডেন্ট বাগবোকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে আসছে।

No comments

Powered by Blogger.