অস্ট্রেলিয়ায় ভয়াবহ বন্যা ত্রাণের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কুইন্সল্যান্ড রাজ্যে বন্যা-পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড গতকাল বুধবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। বন্যার কারণে এরই মধ্যে এ অঞ্চলের শহরগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ভারী বৃষ্টিপাত ও ঘূর্ণিঝড় টাসার প্রভাবে এই বন্যা দেখা দিয়েছে। কুইন্সল্যান্ডের রাজধানী ব্রিসবেনে প্রায় দেড় শ বছরের মধ্যে চলতি ডিসেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত শনিবার ঘূর্ণিঝড় টাসা কুইন্সল্যান্ডে আঘাত হানে।
মৌসুমি ঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট এ বন্যায় কুইন্সল্যান্ডের বেশির ভাগ রাস্তা ডুবে গেছে। বন্যাকবলিত এলাকা থেকে এক হাজার লোককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের ৩৮টি অঞ্চলকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী গিলার্ড বন্যাকবলিত লোকজনকে সহায়তায় ত্রাণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সরকারি কোষাগার থেকে দুর্দশাগ্রস্ত লোকজনকে ১০ লাখ মার্কিন ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘কিছু অঞ্চলের বন্যা-পরিস্থিতি কয়েক দশকের মধ্যে ভয়াবহ আকার নিয়েছে। আর কিছু অঞ্চলের পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা অতীতে কখনো ঘটেনি।’ বড়দিনের ছুটি শেষে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করবেন বলে জানিয়েছেন।
ব্রিসবেনের উত্তরাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর বান্দাবার্গের শত শত বাসিন্দা ঘর ছেড়ে চলে গেছে। অন্যদিকে সম্পূর্ণ প্লাবিত থিওদর শহরের সব বাসিন্দাকে হেলিকপ্টারে করে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় আইনপ্রণেতা ভন জনসন এবিসি রেডিওকে বলেছেন, ভারী বর্ষণের কারণে এখানকার কয়েক শ কোটি ডলারের ফসল ও কৃষিজমি ডুবে গেছে। তিনি বলেন, ‘আলফা থেকে বারকালডিন পর্যন্ত আমি হেলিকপ্টারে করে ঘুরেছি। এর আগে কখনো এত পানি এখানে দেখা যায়নি।’
বান্দাবার্গের বাসিন্দা ড্যানিয়েল বেলের পুরো বাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কোথাও যাওয়ার নেই। এখানে আর কোনো পরিবার নেই। আমরা একেবারে বিপদগ্রস্ত। প্রার্থনা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’
এমারল্যান্ডে কাল শুক্রবার বন্যা-পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ২০০৮ সালের শুরুতে সেখানে যে বন্যা হয়েছিল, তার চেয়েও এবারের অবস্থা খারাপের দিকে যেতে পারে। ওই বছর এ অঞ্চলের দুই হাজার ৭০০ লোক বাড়িছাড়া হয়েছিল। রকাম্পটন শহরের মেয়র ব্রাড কার্টার বলেছেন, বন্যা-পরিস্থিতির অবনতি হলে এখানকার প্রধান বিমানবন্দর, রেলস্টেশন ও রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে ৪০০টি পরিবার ঝুঁকির মুখে পড়বে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ডালবি শহরের পানি শোধনাগার স্থাপনাটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আগামী দুই দিনের মধ্যে সেখানে পানযোগ্য পানির সংকট দেখা দিতে পারে।
অর্থনীতিবিদেরা বলেছেন, ভয়াবহ এ বন্যার ফলে কৃষি খাতে ৭০০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.