সিডন্সের চিন্তায় মাশরাফি

ব্রিসবেনে প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। ছুটির মধ্যেও তাই অস্ট্রেলিয়ায় বেশির ভাগ সময় ঘরেই কাটছে জেমি সিডন্সের। সময় কাটানোর সঙ্গী অ্যাশেজ আর দুই সন্তান স্টেলা-টোবি। ব্যস্ত বাবাকে এতটা সময় কাছে পেয়ে স্টেলা-টোবির সময় ভালো কাটলেও সিডন্স কিছুটা বিচলিত। বিশ্বকাপের আগে মাশরাফি বিন মুর্তজার ইনজুরি চিন্তায় ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ কোচকে।
‘অ্যাঙ্কেলের ইনজুরি থেকে মাত্রই ফিরেছিল সে। জিম্বাবুয়ে সিরিজের কয়েকটা ম্যাচে দুর্দান্ত বল করে বোলিং আক্রমণের নেতৃত্বও দিল। দলের কথা ভেবে তাই আমি কিছুটা হতাশই’—অস্ট্রেলিয়া থেকে বলেছেন সিডন্স। স্পিন বোলারদের দলের মূল বোলিং অস্ত্র মানলেও দলে মাশরাফির প্রয়োজনটা বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করছেন কোচ, ‘আমাদের মূল বোলিং অস্ত্র স্পিনাররা। তবে প্রথম ১০ ওভারে ম্যাশই (মাশরাফি) আমাদের এগিয়ে দিতে পারে এবং পরে স্পিনারদের ভালো বোলিংয়ের জন্যও সেটা জরুরি। তখন সাকিবকেও খুব বেশি আগে আনতে হয় না বোলিংয়ে।’
তবে ইনজুরির দুর্ভাগ্যের সঙ্গে যেহেতু পেরে ওঠার উপায় নেই, অদৃষ্টকেই মেনে নিচ্ছেন কোচ, ‘দলটা এখন যেকোনো পরিস্থিতির জন্যই প্রস্তুত। আমরা এখন কারও একার ওপর নির্ভরশীল নই।’
অস্ট্রেলিয়ায় বসেই মাশরাফির এমআরআই রিপোর্ট দেখেছেন সিডন্স, যোগাযোগ হয়েছে মাশরাফির চিকিৎসক অস্ট্রেলিয়ান বিশেষজ্ঞ ডেভিড ইয়াংয়ের সঙ্গেও। আশার কথা, মাশরাফির এবারের ইনজুরিটাকে খুব গুরুতর কিছু মনে করছেন না ইয়াংও। সিডন্সও তাই বলছেন, ‘মাশরাফিকে না দেখলেও তিনি (ডেভিড ইয়াং) মোটামুটি নিশ্চিত, এই ইনজুরি অন্তত ওর ক্যারিয়ার থামিয়ে দেবে না। তবে তার বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে এটা বড় একটা ধাক্কা তো অবশ্যই। দল নির্বাচনে এখন আমাদের খুব বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে। শুধু তা-ই নয়, চূড়ান্ত দল নির্বাচনের আগে ওর ইনজুরিটা সম্পর্কে আমাদের আরও ভালোভাবে জানতে হবে।’
মাশরাফি অবশ্য সুসংবাদই শোনাচ্ছেন কোচকে। হাঁটুর ইনজুরির অবস্থা প্রতিদিনই একটু একটু করে উন্নতি হচ্ছে। এ ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হতে আজ আবার দেখাবেন অ্যাপোলো হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। তবে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী এর মধ্যেই হালকা ব্যায়াম এবং সাইক্লিং শুরু করে দিয়েছেন। জাতীয় দলের এই পেসার আশাবাদী, একবার বোলিং শুরু করতে পারলে বিশ্বকাপের জন্য তৈরি হতে সমস্যা হবে না, ‘ফোলা একটু থাকবেই, তবে ব্যথা অনেক কমে গেছে। চার-পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে বোলিং শুরু করতে পারলে আশা করি বিশ্বকাপের আগেই প্রস্তুত হয়ে যাব।’
মাশরাফির ইনজুরির পর বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসানের অধিনায়ক হওয়া একরকম নিশ্চিত। সাকিব ভোট পাচ্ছেন কোচের কাছ থেকেও, ‘অধিনায়ক হিসেবে সাকিব অসাধারণ। আমাদের কাজের সমন্বয়টাও খুব ভালো। সে আক্রমণাত্মক মানসিকতার, ফিল্ডিং সাজানো আর বোলিং পরিবর্তনেও বিচক্ষণতার পরিচয় দেয়। বিশ্বকাপে আমাদের এটাই দরকার।’
ছুটি কাটিয়ে ৭ জানুয়ারি ঢাকায় ফিরবেন সিডন্স। প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণোদ্যমে শুরু করে দেবেন বিশ্বকাপের প্রস্তুতি। তবে সিডন্সই জানিয়েছেন, বিশ্বকাপের প্রস্তুতি বলে আলাদা কিছু থাকবে না সেখানে, ‘নতুন কিছু নয়, আমরা নির্দিষ্ট বিষয় ধরে ধরে কাজ করব। যেমন নতুন বলের ব্যাটিং-বোলিং, পাওয়ার প্লের পরিকল্পনা, বোলিং বৈচিত্র্য। এ ছাড়া প্রতিপক্ষদের নিয়ে আগামী এক-দেড় মাসে প্রচুর হোমওয়ার্ক করা হবে। ফিল্ডিংটাও প্রস্তুতিতে বিশেষ গুরুত্ব পাবে, তবে এর কোনোটাই নতুন নয়। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভালো ক্রিকেট খেলার জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে, এটাই হলো শেষ কথা।’

No comments

Powered by Blogger.