খবর, কালের কণ্ঠের- নিষ্ফল উদ্ধার অভিযানঃ দখলচক্রে ২৭ খাল

ঢাকঢোল পিটিয়ে মাঝেমধ্যেই অভিযান চালানো হয়; কিন্তু খালের ভাগ্য খোলে না তাতে। নিষ্ফল উদ্ধার অভিযানের কারণে এখনো দখলদারদের থাবার নিচেই ধুঁকছে রাজধানীর ২৭ খাল। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাপে স্থবির হয়ে পড়েছে উদ্ধার অভিযান। উদ্ধার করা খালগুলোও আবার চলে যাচ্ছে দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে। দখলদারদের তালিকায় আছে সরকারি দলের নেতা, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।
এদের সম্মিলিত চাপ সামলে যথাযথভাবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। শুষ্ক মৌসুমে খাল উদ্ধার ও সংস্কারের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আগামী বর্ষা মৌসুমে ঢাকায় জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করার আশঙ্কা রয়েছে।
রাজধানীর খাল দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে গঠিত টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘খাল উদ্ধারের পর তা দখলে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ একদিকে উদ্ধার হয়, অন্যদিকে আবার দখল হয়ে যায়। এর একমাত্র সমাধান হলো, উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে খালের পাশে ওয়াকওয়ে (হাঁটাপথ) নির্মাণ করে দেওয়া। কিন্তু ওয়াকওয়ে নির্মাণ করতে হলে অনেক টাকার প্রয়োজন। বিষয়গুলো আমাদের বিবেচনায় আছে। এ ছাড়া খাল উদ্ধারের পর আর কিভাবে তা অবৈধ দখলমুক্ত রাখা যায়, তা নিয়ে কাজ করছে টাস্কফোর্স।’
জানা গেছে, একসময় রাজধানীতে খালের সংখ্যা ছিল ৪৩টি। এর মধ্যে ১৬টি খালের কোনো অস্তিত্ব বাস্তবে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। অবশিষ্ট ২৭টির মধ্যে পাঁচটি খালের বেশির ভাগ অংশ দখল হয়ে গেছে। বাকি ২২টি খালও বিচ্ছিন্নভাবে দখল হয়েছে। বর্তমান সরকার অধিকাংশ জায়গা দখল হয়ে যাওয়া পাঁচটি খাল উদ্ধারে অভিযান শুরু করে। গত বর্ষা মৌসুমে এ অভিযান শুরু হয়। বিরতি দিয়ে পুরো মৌসুমে ৮-৯ দফায় অভিযান চলানো হয়। শুষ্ক মৌসুম শুরুর পর অভিযান বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে সরকারি দলের একজন এমপি উচ্ছেদে বাধা দেওয়ার পর থেকেই কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে এ অভিযান।
সর্বশেষ গত ৩১ অক্টোবর ঢাকা ওয়াসা কল্যাণপুর ‘ক’ খালে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করলে ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক আসলাম প্রথমে তাতে বাধা দেন। পরে অবশ্য নিজেই উদ্ধার অভিযানে উপস্থিত থাকেন। তবে ওই অভিযানের মাধ্যমে তিনি তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর শোধ তোলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একটি নির্মাণাধীন ভবনের একাংশ উচ্ছেদের নামে ভেঙে ফেলা হয়েছে। আর বুলডোজার দিয়ে কিছু মাটি তুলে গর্তের মতো করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোনো পানি নেই। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নির্মাণাধীন ভবনের মালিকের রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হওয়ায় সেটি ভাঙা হয়েছে।
গত বর্ষা মৌসুমের অভিযানে যেসব খালের অংশবিশেষ উদ্ধার করা হয়, গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেগুলোর বেশির ভাগই আবার অবৈধ দখলে চলে গেছে।
উদ্ধার অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘খালের দখলদাররা প্রভাবশালী। তাঁদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলেরও সম্পৃক্ততা রয়েছে। এ কারণেই খাল উদ্ধার কার্যক্রমে সফলতা পাওয়া যায় না। এ কাজে সফলতা পেতে হলে রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
ঢাকার জেলা প্রশাসক মহিবুল হক খাল উদ্ধার অভিযানে কোনো চাপ নেই উল্লেখ করে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা পাঁচটি খাল অবৈধ দখলমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শুষ্ক মৌসুমে এ কাজ করতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এর জন্য আগামী জানুয়ারি মাসের দিকে এসব খাল দখলমুক্ত করার কাজ শুরু হবে।’
বর্ষা মৌসুম এলেই খাল উদ্ধার ও সংস্কারকাজ চালানোর জন্য সরকারের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ঢাকা ওয়াসার সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরাও।
ঢাকা ওয়াসার খাল রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম শহিদ উদ্দিন কালের কণ্ঠকে জানান, শুষ্ক মৌসুমে খাল উদ্ধার করতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এ জন্য আগামী মার্চ মাসের মধ্যেই যাতে খালের অবৈধ অবকাঠামোগুলো অপসারণ করে সংস্কারকাজে হাত দেওয়া যায়, সে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা ওয়াসার ম্যাজিস্ট্রেট কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, ‘আমরা তো খাল উদ্ধার ও অবৈধ দখলমুক্ত করতে গাঁইতি-কোদাল নিয়ে এক পায়ে খাড়া। ডিসি অফিসের নির্দেশনা পেলেই এ কাজ চালাতে পারি। কারণ সীমানা নির্ধারণের দায়িত্ব পালন করে ডিসি অফিস।’
খাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, ‘১৩টি খাল রক্ষার জন্য বিশ্বব্যাংক আর্থিক সহযোগিতা দেবে। এরই মধ্যে কিছু অর্থ পাওয়া গেছে। খালের পাড় বাঁধাই করে ব্লক দিয়ে সারিবদ্ধভাবে গাছ লাগিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ কাজ শেষ করা হবে, যাতে নতুন করে আর কোনো খালের জায়গা বেদখল হতে না পারে। ওয়াকওয়ে, ড্রেন নির্মাণ ও অন্যান্য কাজের জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ওয়াসা এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে পৌনে পাঁচ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। আরো ৭১ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে।’
ওয়াসার প্রতিবেদনে ঘাপলা : সম্প্রতি ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে ড্রেনেজ বিভাগ ১ ও ড্রেনেজ বিভাগ ২-এর আওতাধীন খালগুলোর বর্তমান অবস্থার প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এতে খালের নাম, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, অবৈধ দখলের অবস্থান, দখলের প্রকৃতি, বর্তমান অবস্থা প্রভৃতি বিষয় উঠে এসেছে। কিন্তু প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দখলকারীর নাম ও ঠিকানার ঘরটি শূন্য রাখা হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে বস্তিবাসী কিংবা নাম জানা সম্ভব হয়নিÑএ রকমভাবে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেবল কাটাসুর খালের দখলদার হিসেবে স্থানীয় আবদুল হাকিম, রাহাত ও জেবুন নেসা মির্জার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিগুণ খালের ভরাটকারী হিসেবে ইস্টার্ন হাউজিং ও খিলগাঁও-বসানো খালের জায়গা দখল করে স্থানীয় ছাত্রলীগ অফিস বানিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য কোনো দখলদারের নাম চিহ্নিত করেনি ওয়াসা। দখলদারদের সঙ্গে ওয়াসার কর্মকর্তাদের বোঝাপড়া থাকার সুবাদেই এমনটা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিন চিত্র : গত বর্ষা মৌসুমে টাস্কফোর্স অভিযান চালিয়ে কাটাসুর খালের কিছু অংশ উদ্ধার করা হয়েছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। এখন খালের অবস্থা দেখা বোঝার উপায় নেই যে এখান থেকে কাউকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। ভেঙে দেওয়া অংশগুলো দখলদাররা আবারও মেরামত করে নিয়েছে। তাই মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়ীর রহিম ব্যাপারীর ঘাটে দাঁড়িয়ে কাটাসুর খালের দিকে তাকালে কোনো পরিবর্তনই চোখে পড়ে না। চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই পুরনো চিত্রÑখালের জায়গা ভরাট করে একের পর এক দাঁড়িয়ে আছে পাকা ও আধাপাকা ভবন। বেদখল হতে হতে শীর্ণকায় হয়ে গেছে খালটি।
ঢাকা ওয়াসার প্রতিবেদনে এক হাজার ২৬০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ইব্রাহিমপুর খালের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে, ওই খালের প্রায় ২০০ মিটার জায়গা দখল করে সাতটি বহুতল ভবন ও দুটি সেমিপাকা ঘর তোলা হয়েছে। ওই স্থানে খালের গতিপথ অত্যন্ত সরু হয়ে গেছে। এ ছাড়া ওয়াসার পাম্পহাউসের পাশে খাল দখল করে টিনশেড ও আধাপাকা ঘর তোলা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইব্রাহিমপুর কালভার্ট এলাকায় ঢাকা ওয়াসার পাম্পহাউসের পাশে খালের দক্ষিণ পাড় দখল করে টিনশেড ও আধাপাকা ঘর তুলে ভাড়া দিয়েছেন স্থানীয় শাহ মোহাম্মদ আলী শফিক নামের এক ব্যক্তি। ঘরগুলোতে যাতায়াতের জন্য খালের ওপর তৈরি করা হয়েছে বাঁশের সাঁকো। উত্তর পাশে খালের ওপর মাচা করে দোকান বানিয়ে ভাড়াও দিয়েছেন শাহ মোহাম্মদ আলী শফিক। তিনি বলেন, ‘খালটির গতিপথ ঠিক নেই। এটি আমার প্লটের দক্ষিণ পাশ দিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও উত্তর পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া খালটি ৬০ ফুটের স্থলে ৩০ ফুট করার আবেদন জানানো হয়েছে।’
দখলদার সব খালেই : ওয়াসার প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে, ২৭টি খালের ১৮টিতেই কমবেশি অবৈধ দখলদার রয়েছে। কেউ অবকাঠামো বানিয়ে, কেউ দোকান বানিয়ে খালের জায়গার সুবিধা ভোগ করছে। অন্যগুলোতে দখলদার না থাকলেও মাটি ভরাট করে বা ময়লা ফেলে দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে। খিলগাঁও-বাসাবো খালে দুটি, সেগুনবাগিচা খালে ছয়টি, মহাখালী খালে চারটি, মাণ্ডা খালে একটি পয়েন্টে খালের জায়গা বেদখল হয়েছে। এ ছাড়া কাটাসুর খালে বাউন্ডারি দেয়াল, টিনশেড ঘর, টয়লেট, একতলা বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। রামচন্দ্রপুর খালে টিনশেড ঘরসহ অসংখ্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ইব্রাহিমপুর খাল, দ্বিগুণ খাল, বাউনিয়া খাল, কল্যাণপুর ‘ক’ খাল, কল্যাণপুর প্রধান খাল, রূপনগর শাখা খাল, রূপনগর-১-৩ খাল, সাংবাদিক কলোনি খাল, বাইশটেকি খালে অবৈধ দখলদার রয়েছে।
=========================
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ বনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  ভ টিজিং : জরুরি ভিত্তিতে যা করণীয়  প্রতিশ্রুতির দিন  শোকের মাস, বিজয়ের মাস  চীনা প্রধানমন্ত্রীর পাক-ভারত সফর  দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীন মন্তব্য  নতুন প্রজন্ম ও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা  খিলক্ষেতে আগুনঃ কয়েলের গুদামে রাতে কাজ হতো ঝুঁকিপূর্ণভাবে  ভারতে বিহার রাজ্যের নির্বাচন  স্বপ্ন সত্যি হওয়ার পথে  আমাদের আকাশ থেকে নক্ষত্র কেড়ে নিয়েছিল যারা...  মুক্তির মন্দির সোপান তলে  আবেগ ছেড়ে বুদ্ধির পথই ধরতে হবে  বছর শেষে অর্থনৈতিক সমীক্ষা পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ  দুই কোরিয়ার একত্রিকরণ কি সম্ভব  গ্যাসের ওপর বিপজ্জনক বসবাস  উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ  সময়ের দাবি জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি  জনসংখ্যা বনাম জনশক্তি  ব্যাংকের টাকা নয়ছয় হওয়া উচিত নয়  একটি পুরনো সম্পর্কের স্মৃতিচিত্র  পাটশিল্প ঘুরিয়ে দিতে পারে অর্থনীতির চাকা  ড. ইউনূসকে বিতর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে হবে  সুশিক্ষার পথে এখনও বাধা অনেক  ব্যক্তির স্বাধীনতা হরণ ও মর্যাদাহানির পরিণাম কখনই শুভ হয় না ঘুষ ও লুটপাট উভয়ের বিরুদ্ধে একই সাথে লড়তে হবে  সুনীতি ও সুশাসন  আমি কেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের পক্ষে  শ্রমিক অসন্তোষ বর্তমান প্রেক্ষিত  জীবন ব্যাকরণঃ দর্জির মুক্তিযুদ্ধ  তথ্যের অধিকার ও জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ  শালীন ও সংযত কথাবার্তা কি শুধু একতরফা হতে হবে?  একটি অসমাপ্ত গল্প  মুসলিম বিশ্বে সেক্যুলারিজমের বর্তমান ও ভবিষ্যত  চীন দেশের কথা  হিকমতে হুজ্জতেদের কথা  মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে বিশ্বসভায়  ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো  বধ্যভূমিতে গেয়ে গেল যাঁরা জীবনের জয়গান  ভিক্ষাবৃত্তির মুখোশ  লন্ডন ভ্রমণ এবং সুখ-দুঃখের দু'টি কথা


দৈনিক কালের কন্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ আহমেদ দীপু ও অমিতোষ পাল


এই খবর'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.