ভাঙার জন্য জাহাজ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা বহাল

ভাঙার জন্য জাহাজ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা ও এ বিষয়ে নীতিমালা তৈরি করা-সংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করেননি আপিল বিভাগ। ১৫ ডিসেম্বর হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশন আপিল বিভাগে আবেদন করে। আজ সোমবার আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি কোনো আদেশ দেননি।
এর ফলে ভাঙার জন্য জাহাজ আমদানির ক্ষেত্রে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ কার্যকর থাকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে আইনজীবী আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের আদেশ স্থগিতের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। আদালত শুনানি মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর ফলে হাইকোর্টের আদেশে হস্তক্ষেপ করা যাবে না।
জাহাজ ভাঙা শিল্পের ক্ষেত্রে ইতিপূর্বে দেওয়া হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসরণ না করা পর্যন্ত জাহাজ আমদানি বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই নির্দেশনার আলোকে দেশে বিষাক্ত জাহাজ অনুপ্রবেশ রোধে, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে ও শ্রমিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘পর্যাপ্ত ও কার্যকরী’ বিধিমালা তিন মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। বেলার করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এ আদেশ দিয়েছিলেন।
একই সঙ্গে নির্দেশনা বাস্তবায়নে রসায়নবিদ, পদার্থবিদ, পরিবেশবিদ, আইনবিদ, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে এক মাসের মধ্যে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদালতের আদেশে বলা হয়, মানুষের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা বিধান না করে বর্জ্যবাহী জাহাজ আমদানি করা যাবে না। ভাঙার জন্য জাহাজ এমনভাবে আনতে হবে, যাতে মানুষের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি না থাকে। এ বিষয়ে ইতিপূর্বে হাইকোর্টের দেওয়া রায় যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। ওই রায় অনুসরন না করা পর্যন্ত বাংলাদেশের জলসীমায় কোনো বর্জ্যবাহী জাহাজ প্রবেশ করতে পারবে না।
এর আগে ২০০৯ সালের ১৭ মার্চ কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আগে আমদানি করা জাহাজের বর্জ্যমুক্তকরণ (প্রিক্লিনিং) নিশ্চিত করতে এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণ নিশ্চিত করতে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন সাপক্ষে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর অনাপত্তি (এনওসি) প্রদানের কথা বলা হয়।
একই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা ঝুঁকিমুক্ত ছয়টি আইনের অধীনে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে বলা হয়। সে সঙ্গে এসব বিষয় তদারকি করার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। চলতি বছরের ১১ মে হাইকোর্ট ওই রায়ে স্পষ্টতা দিয়ে হাইকোর্ট ভাঙার জন্য আমদানি করা সব জাহাজের ক্ষেত্রে পরিবেশগত ছাড়পত্র ও বর্জ্যমুক্তকরণ সনদ লাগবে বলে নির্দেশ দেন। বলা হয়, এ আদেশটি সব জাহাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
জানা যায়, সম্প্রতি বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত বিধিমালা খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে হাইকোর্টের ইতিপূর্বে দেওয়া রায়ের নির্দেশনা অনুসরণ করা হয়নি। এ ছাড়া ইতিমধ্যে পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া ২২টি জাহাজকে অনাপত্তিপত্র দেওয়া হয়।
এ প্রেক্ষাপটে হাইকোর্টের রায়ের আলোকে নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে গত ১২ ডিসেম্বর বেলা হাইকোর্টে আবেদন করে। এতে নীতিমালা তৈরি না করা পর্যন্ত জাহাজ আমদানি বন্ধ ও ইতিমধ্যে আনা জাহাজগুলো না ভাঙার নির্দেশনা চাওয়া হয়। এ আবেদনের ওপর দুই দিনের শুনানি শেষে আদালত ১৫ ডিসেম্বর এ আদেশ দেন।

No comments

Powered by Blogger.