আইভরি কোস্ট ছেড়ে পালাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ

আইভরি কোস্টে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে সহিংসতা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে হাজার হাজার মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত অন্তত ১৪ হাজার মানুষ পার্শ্ববর্তী দেশ লাইবেরিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে। তাদের অধিকাংশই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নতুন প্রেসিডেন্ট আলাসেন ওয়েতাহার সমর্থক বলে জানা গেছে। গত শনিবার জাতিসংঘ এসব তথ্য জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান নাকচ করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা দেশটির প্রেসিডেন্ট লঅন্ত বাগবো গতকাল রোববার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরানোর যেকোনো চেষ্টা ওই অঞ্চলকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে।
গত ২৮ নভেম্বর আইভরি কোস্টের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। দেশটির স্বাধীন নির্বাচন কমিশন বিরোধীদলীয় প্রার্থী আলাসেন ওয়েতাহাকে বিজয়ী ঘোষণা করে। কিন্তু ওই ফল প্রত্যাখ্যান করে সাংবিধানিক পরিষদের সমর্থন নিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন লঅন্ত বাগবো। আলাসেন ওয়াতেহাও পৃথকভাবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
আইভরি কোস্টের প্রতিবেশী দেশ বেনিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেন মেরি ইহোউজোউ জানান, প্রেসিডেন্ট বাগবোকে পদত্যাগের আহ্বান জানাতে পশ্চিম আফ্রিকার তিনটি দেশের প্রেসিডেন্ট কাল মঙ্গলবার আইভরি কোস্টে যাবেন। অনেক আগে থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে এলেও প্রেসিডেন্ট বাগবো বারবার তা নাকচ করে দিচ্ছেন।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) মুখপাত্র ফাটুউমাটা লেজেউন কাবা জানান, দ্বিতীয় দফা ভোট গ্রহণের দিন অর্থাৎ ২৮ নভেম্বর থেকে আইভরি কোস্টের পশ্চিমাঞ্চলের গ্রামগুলোর জনগণ দেশ ছাড়তে শুরু করে। নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় উদ্বিগ্ন জনগণ কয়েক দিন পর্যন্ত হেঁটে প্রতিবেশী দেশ লাইবেরিয়ার পূর্বাঞ্চলে আশ্রয় নেয়। এখনো অনেকেই দেশ ছাড়ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ইউএনএইচসিআরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আইভরি কোস্টের ছেড়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। শরণার্থী, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের মানবিক সহায়তা বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। লাইবেরিয়ার যে অঞ্চলে শরণার্থীরা আশ্রয় নিয়েছে, সেই গ্রামগুলোর জনগণেরও সাহায্য দেওয়া প্রয়োজন।’ বিবৃতিতে জানানো হয়, লাইবেরিয়ার পূর্বাঞ্চলে আশ্রয় নেওয়া নিবন্ধিত শরণার্থীর সংখ্যা ১৪ হাজার। ওই অঞ্চলে ৩০ হাজার শরণার্থীর সুবিধা নিশ্চিত করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সরকার ও বিভিন্ন মানবিক সাহায্য সংস্থার সহায়তা সত্ত্বেও শরণার্থীদের খাদ্য সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া শরণার্থীদের চাপের কারণে সেখানে সাত থেকে ২০ জন পর্যন্ত একটি কক্ষে থাকছে।
শরণার্থীদের মধ্যে কয়েকজনের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, শরণার্থী শিশুরা পুষ্টিহীনতার শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া তাদের মধ্যে ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট বাগবো পদত্যাগ না করলে সামরিক অভিযান চালানোরও হুমকি দিয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর আঞ্চলিক জোট ইসিওডব্লিউএএস। প্রেসিডেন্ট বাগবো এই হুমকিকে অবিচার বলে আখ্যা দিয়েছেন। পশ্চিম আফ্রিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আইভরি কোস্টের হিসাব পরিচালনার ক্ষমতা নতুন প্রেসিডেন্ট আলাসেন ওয়েতাহাকে দেওয়ায় এর নিন্দা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাগবো। গতকাল প্রেসিডেন্ট বাগবোর মুখপাত্র জানান, আইভরি কোস্টে এই অঞ্চলের অনেক দেশের নাগরিক আছে। সামরিক হামলা হলে সবাই বিপদের মুখে পড়বে। তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পক্ষে।’
বেনিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেন মেরি ইহোউজোউ জানান, ইসিওডব্লিউএএস এর পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট বাগবোকে পদত্যাগের আহ্বান জানাতে তিনটি দেশের প্রেসিডেন্ট কাল মঙ্গলবার আইভরি কোস্টে যাচ্ছেন। তাঁরা হলেন বেনিনের প্রেসিডেন্ট থমাস ইউয়েয়ি বোনি, সিয়েরা লিয়নের প্রেসিডেন্ট আর্নেস্ট বাই করোমা ও কেপ ভার্দের প্রেসিডেন্ট পেদ্রো ভেরোনা রদ্রিগেজ পিরেস।
নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আলাসেন ওয়েতাহা সাম্প্রতিক সহিংসতার বিষয়ে তদন্ত এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে সে দেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট ওয়েতাহা দেশটির আবিদজান শহরে একটি হোটেলে কার্যালয় বানিয়ে অবস্থান করছেন। দেশটিতে নিযুক্ত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী তাঁর নিরাপত্তা দিচ্ছে। আর দেশটির নিজস্ব সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে প্রেসিডেন্টের জন্য নির্ধারিত প্রাসাদে অবস্থান করছে প্রেসিডেন্ট বাগবো।

No comments

Powered by Blogger.