একজন আলী হোসেনের বঞ্চনা

২৯ বছর আগে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত হলেও এখনো ন্যায্য বেতন-ভাতা পাননি ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক কর্মকর্তা আলী হোসেন। বাধ্য হয়ে পান-বিড়ি বিক্রেতা ছেলের সংসারে বোঝা হয়ে আছেন ৭৬ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ। ক্যানসারে আক্রান্ত স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে পারেননি অর্থের অভাবে। আলী হোসেন পাওনা বেতন-ভাতার জন্য প্রায় তিন দশক ধরে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও প্রতিকার পাননি।
প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৬২ সালে ঢাকা পৌরসভায় পরিদর্শক হিসেবে যোগদানকারী আলী হোসেন নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতায় উচ্ছেদ কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি পান। এই পদে থাকাকালে তিনি অনেক সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করে দেন। এতে নাখোশ কর্তাব্যক্তিরা নিয়মবহির্ভূতভাবে তাঁকে চাকরিচ্যুত করেন। এর বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলে মন্ত্রণালয় তাঁকে পুনর্বহালের নির্দেশ দেয়। কিন্তু সেই নির্দেশ মানেনি ডিসিসি। এরপর তিনি উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হন এবং আদালতও তাঁর পক্ষে রায় দেন। কিন্তু ডিসিসি এখন পর্যন্ত পাওনা বুঝিয়ে দেয়নি। এ ব্যাপারে মেয়র বলেছেন, আদালতের রায় অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন। তিনি ডিসিসির মেয়রের দায়িত্বও পালন করছেন সাড়ে আট বছর। এত দিনেও পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হলো না কেন?
প্রকৃত প্রস্তাবে, ডিসিসি একটি অন্যায়কে আড়াল করতে একাধিক অন্যায়ের আশ্রয় নিয়েছে। আদালত যেহেতু তাঁকে চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছেন, সেহেতু অবসরের মেয়াদ পর্যন্ত তাঁর বেতন-ভাতা ডিসিসিকে পরিশোধ করতে হবে। সংস্থাটির কাছে আলী হোসেনের পাওনার পরিমাণ ৩০ লাখ থেকে ৩৫ লাখ টাকা। অথচ তাঁকে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
কেবল আলী হোসেন নন, চাকরিচ্যুতি বা অবসর নেওয়ার পর অনেক সরকারি কর্মকর্তাই তাঁদের পাওনা বুঝে নিতে নানা হয়রানির শিকার হন। যাঁরা অসহায় চাকরিচ্যুত ও অবসরভোগীদের পাওনা নিয়ে টালবাহানা করেন, তাঁদের শাস্তি হওয়া উচিত। আলী হোসেনের সমুদয় পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে ডিসিসি অতীতের পাপ মোচন করতে পারে। এভাবে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাচারিতার কাছে একজন সৎ কর্মকর্তা অনন্তকাল জিম্মি থাকতে পারেন না।

No comments

Powered by Blogger.