গল্পালোচনা- 'ডান রাস্তার বামপন্থী' by কাওসার আহমেদ চৌধুরী

আমি যখন প্যারেড বা সামরিক কুচকাওয়াজ শিখতে শুরু করি, তখন আমার বয়স ছয় বছর। ওই সময়টায় আমি কুমিল্লা শহরে মুকুল ফৌজের একজন স্বল্পশিক্ষিত সদস্য।
এরপর থেকে সারাটা স্কুলজীবন কেটেছে বয়-স্কাউট হিসেবে। বিরামহীনভাবে করে গেছি_লেফট-রাইট, লেফট-রাইট-লেফট, বাম-ডান, বাম-ডান, বাম! সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় আবার থ্রি-নট-থ্রি রাইফেলের পূর্ণ একটা কোর্সও করে ফেললাম। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে এই দ্বিতীয় পর্বে আমি তখন সিলেটে, পিতৃগৃহে। তার আগে মাতৃহীন অবস্থায় থাকতাম বোনের সঙ্গে।যা-ই হোক, স্কাউট-জীবনে আমি যে গভীর নিষ্ঠায় শৃঙ্খলার চর্চা করে গেছি দিনের পর দিন, তার তেমন কোনো ছায়া কিন্তু আমার উত্তর-জীবনে কেউ দেখতে পায়নি। শুধু সততার একটা অনুশীলন থেকে গেছে_সম্ভবত অগি্নযুগের বিপ্লবীদের ইতিহাস, সাহিত্য পাঠের অভ্যাস, পারিবারিক পরিবেশ এবং কিছু ভালো মানুষের সানি্নধ্যই এর কারণ। আর স্কাউট চর্চাও নিঃসন্দেহে কিছু অনড় মূল্যবোধ তৈরি করে দিয়েছিল আমার চরিত্রে।
তাও জীবনে যে শৃঙ্খলা এল না, এটা একটা মহাপরিতাপের বিষয়। ব্যাপারটা বয়-স্কাউট আন্দোলনের মহান জনক স্বর্গীয় লর্ড রবার্ট বেডেন-পোয়েলের, না আমার ব্যর্থতা, তা আমার কাছে অদ্যাবধি এক অমীমাংসিত প্রশ্নই বটে।এবার যে কথাগুলো বলব, তার প্রথম বাক্যটি শুনেই হয়তো আপনি আমাকে খুঁজবেন মুক্তহস্তে প্রহারের উদ্দেশ্যে। আপনার দণ্ড আমি পিঠ পেতে গ্রহণ করতে রাজি আছি। তবে আগে আমার পুরো বক্তব্যটা শুনুন।আমি বলতে চাই, স্কাউটিং হচ্ছে একটা বাম আদর্শভিত্তিক আন্দোলন। স্কাউট-শিক্ষার এই বাঁ দিকে হেলে পড়াটা একেবারেই একটা দৃশ্যমান ব্যাপার। সেটা পরে ব্যাখ্যা করছি। তবে তার আগে বুঝতে হবে যে উনিশ শতকের এক ইংরেজ সেনাধ্যক্ষ মার্ক্সবাদে দীক্ষিত হয়েছিলেন এবং তার পরও ভূষিত হয়েছিলেন 'লর্ড' উপাধিতে_এটা অসম্ভবেরও অতিরিক্ত কিছু ব্যাপার। আসলে লর্ড বেডেন-পাওয়েলের স্কাউট প্রথায় বামাবর্ত দর্শনটি এসেছে এই চিন্তা থেকে যে মানুষের হৃৎপিণ্ডটা রয়েছে বুকের বাঁ পাশে। ওখানেই_অনেকে এখনো বিশ্বাস করেন, হৃদয় বা মনের বাস : হার্ট যেখানে, মন সেখানে, হৃদয় সেখানে! অতএব, সেই বাম-নিবাসী হৃদয়কে কেন্দ্র করে লর্ড পাওয়েল গোটা স্কাউট আন্দোলনের তত্ত্বটাকেই দিলেন এক মহা 'হৃদয়গ্রাহী' রূপ। এভাবেই সিলেট এইডেড হাই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র আমি, গায়ে চড়ালাম বয়-স্কাউটের খাকি পোশাক। বাঁ হাত উঁচু করে মেলে ধরলাম তিনটি আঙুল_স্কাউটিংয়ের তিনটি মূলমন্ত্রের প্রতীক। নৌবাহিনী থেকে পালিয়ে আসা ট্রুপ লিডার পতন ভাইয়ের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে সবার সঙ্গে আমিও পাঠ করলাম স্কাউটের শপথবাক্য : অন মাই অনার আই প্রমিস টু ডু মাই ডিউটি টু গড অ্যান্ড মাই কান্ট্রি; টু হেলপ আদার পিপল অ্যাট অল টাইম; টু ওবে দ্য স্কাউট ল-জ...ঈশ্বর এবং মাতৃভূমির প্রতি আমি আমার কর্তব্য পালন করব; সর্বদা সকল মানুষকে সাহায্য করব; স্কাউটের (দশটি) বিধান মেনে চলব।'হৃদয়ের' পথ ধরে শুরু হলো আমার বাম তীর্থযাত্রা! বাঁ হাতে স্যালুট বা অভিবাদন, বাঁ হাতে হ্যান্ডশেক বা করমর্দন, প্রথমে বাঁ পায়ে জুতা পরা, প্রথমে বাঁ কদম ফেলে পিটি-প্যারেড মার্চ করা ইত্যাদি। এই বাম-চর্চার হিড়িক দেখে স্বয়ং কার্ল মার্ক্সেরও মুগ্ধ হওয়ার কথা। শুনে হাসবেন না, ওই দৈহিক বাঁও চক্কোরের প্রভাব এ বয়সেও আমার মধ্যে রয়ে গেছে!তবে সেকালে স্কাউট হিসেবে বিস্তর ভালো ভালো কাজ আমাদের করানো হয়েছে। মেলা ক্যাম্প-জীবন যাপন করেছি দেশের নানা জায়গায়। এতে স্বাবলম্বী হওয়ার কঠিন শিক্ষা পেয়েছিলাম। পরিতাপের বিষয়, আজ তা ভুলে গেছি। এক কাপ চা বানাতে গেলেও আজ অনেক ঝামেলা হয়ে যায়। নিজের জুতা জোড়াটাও আজ আর নিজে ব্রাশ করতে পারি না। অথচ মনে আছে, স্কাউট তহবিলের উপার্জন সপ্তাহে সিলেট কোর্ট প্রাঙ্গণে ইতর-ভদ্র-নির্বিশেষে সবার জুতা পালিশ করেছি মহানন্দে। মহাগৌরবে গ্রহণ করেছি পারিশ্রমিক।সবাই জানেন, বয়-স্কাউটসেরই বালিকা সংস্করণ হচ্ছে গার্লস গাইড। এই শাখাটির মা-জননী হচ্ছেন লর্ড বেডেন-পাওয়েলের সুযোগ্য সহধর্মিণী লেডি বেডেন-পাওয়েল। আমাদের ওপর নির্দেশ ছিল, গাইডের পোশাক পরা কোনো মেয়েকে 'দেখিবামাত্র' স্যালুটের মাধ্যমে সম্মান জানাতে হবে। আমরা যথেষ্ট ভাবগম্ভীরচিত্তেই এ নির্দেশনা পালন করতাম। কিন্তু মেয়েরা হাত তুলে স্যালুট গ্রহণের সময় মিটিমিটি হেসে আমাদের নাজেহাল করত। গা জ্বলে গেলেও এতে আমাদের কিছু করার ছিল না। আর্ত-মানুষের জন্য সাহায্য সংগ্রহের কাজে প্রায়ই ছেলে এবং মেয়েদের মিশ্র দলকে বাড়ি বাড়ি পাঠানো হতো। এ ক্ষেত্রে গাইড অর্থাৎ মেয়েরাই বেশি কৃতিত্ব দেখাত। কেননা, যেকোনো বাড়ির অন্দরমহলে স্বচ্ছন্দে ঢুকে পড়ার ক্ষমতা একমাত্র তাদেরই ছিল। আর আবদার ধরা থেকে আদায় করা পর্যন্ত যে তৎপরতা, তাতে তো এমনিতেই মেয়েরা অগ্রণী।আমি যখন সপ্তম শ্রেণীতে, তখন বাংলা সাহিত্যের এক নতুন শিক্ষক এসে যোগ দিলেন আমাদের স্কুলে_রিয়াসত আলী। বয়সে তরুণ ও তেজি। পরনে ঢাকাই ধুতি, গলায় চাদর! কাঁধ পর্যন্ত দোলানো বেপরোয়া বাবরি। হাতে ছাত্র পেটানো বেতের বদলে মোটা দু-একখানা সিলেবাসবহির্ভূত বই। এই অভিনব শিক্ষকটি রাতারাতি পরিচিত হয়ে গেলেন, 'কমিউনিস্ট স্যার' নামে। সেই ঘোর পাকিস্তানি যুগে সে এক বিপজ্জনক খেতাব! কেননা, পার্টি তখন নিষিদ্ধ। নেতা-কর্মীরা সব আন্ডারগ্রাউন্ডে। আমার এক বহুশ্রুত কমিউনিস্ট মামা তাসাদ্দুক হোসেন চৌধুরী লন্ডনে পলাতক। এ অবস্থায় কোত্থেকে বেরিয়ে এলেন সিলেটের এই শিক্ষক_তাঁর মুসলিম পরিচয়ের সঙ্গে এভাবে ধুতিতে মালকোঁচা মেরে? যা-ই হোক, আমি খুব দ্রুত আকৃষ্ট হয়ে পড়লাম আমাদের কমিউনিস্ট স্যারের প্রতি। তাঁর চিন্তার উদারতা এবং সাহিত্য পড়ানোর স্বতন্ত্র ভঙ্গিটি আমার দারুণ ভালো লেগে গেল। অবশ্য বিপ্লবী, আদর্শ নিয়ে ক্লাসে তিনি কোনো কথাবার্তাই বলতেন না ।ধাক্কাটা খেলাম সেদিন_যেদিন দেখলাম স্কুলের বার্ষিক মিলাদ মাহফিল পরিচালনা করতে বসেছেন আমাদের কমিউনিস্ট স্যার। তাঁর ধুতিখানা লুঙ্গির মতো করে পরা। শিরে শোভা পাচ্ছে বৃহদাকার ইসলামি টুপি। বাংলায় একখানা নাত-এ-রসুল গেয়ে তিনি মুগ্ধ করলেন হাজিরানে মজলিশেকে। সমাজতন্ত্র কী, তা না বুঝলেও এটুকু আমি সেদিন বুঝলাম যে এই কমিউনিস্ট স্যার আসল কমিউনিস্ট নন।পরবর্তী জীবনে বাংলাদেশ চারুকলা ইনস্টিটিউটে পড়ার সময় একবার আমি লম্বা ছুটিতে সিলেটে ছিলাম। তখন কচি-কাঁচা মেলার সিলেট শাখায় শিশুদের ছবি আঁকা শেখানোর কাজ নিই। দেখি, উপদেষ্টা কমিটির মহাতৎপর সদস্য হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন আমাদের কমিউনিস্ট স্যার। কিন্তু তখন কাটা পড়েছে তার সেই র‌্যাডিক্যাল বাবরি চুল। ধুতি-চাদর-চপ্পলও উধাও। এখন নিত্যনতুন শার্ট-প্যান্ট-শু তো আছেই, গরমের দিনেও টুঁটিতে আঁটা আছে অরুচিকর রঙের টাই।...শেষটা মর্মান্তিক। ১৯৭১ সালে তিনি নাকি তাঁর নিজ গ্রামে মুক্তিবাহিনীর হাতে মারা পড়েন পাকবাহিনীর দোসর হিসেবে।অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতে সিলেট খুব উজ্জ্বল ছিল। অগি্নযুগের বড় অনেক বিপ্লবী ছিলেন এখানে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই দীক্ষিত হয়েছিলেন মার্ক্সবাদে। তাঁরা পার্টির ত্যাগী কমরেড হিসেবে শক্তিশালী অবদান রেখেছেন জীবনের শেষপ্রান্ত অবধি পেঁৗছেও। তাঁদেরই একজন ছিলেন সদ্যঃপ্রয়াত কমরেড হেনা দাস। কিন্তু সেসব কথা এখানে নয়।সিলেটে আমার বেশি থাকা হয়নি। স্কুলজীবনে চার বছর। পরে আরো বছর দেড়েক। সেই স্কুলে পড়ার সময়কার স্কাউটিং দিনগুলোর মজার কিছু ঘটনা এখন বলি। ইতিহাসের ধারা হিসেবেও এর যে একটা মূল্য আছে_ আপনারা তা বুঝবেন। আগেই বলেছি, আমি যখন স্কুলে পড়ছি, তখন যুগটা ছিল পাকিস্তানি। স্কাউটদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রেওয়াজ ছিল হাতে তাল দিয়ে মিলিত কণ্ঠে গান গাওয়া।সাম্যবাদ অথবা ভারত রাষ্ট্রের উল্লেখ আছে_এমন গান নিষিদ্ধ ছিল। সিনিয়র স্কাউট মোসাব্বের হারমোনিয়াম বাজিয়ে গাইতে পারত, কাজেই সে ছিল আমাদের সংগীত পরিচালক। এখন, সে যুগে ভালো গান মানেই তো সব ভারতীয় গান_হিন্দি ও বাংলা। মোসাব্বের ও আমরা মিলে সেগুলোর পাকিস্তানি এবং ইসলামিকরণ করে নিতাম। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের এ প্রতিভা হৃদয়ঙ্গম করতে পারত কি না জানি না, তবে গানগুলো জায়েজ হিসেবে ছাড়পত্র দিয়ে দিত। যেমন_বোম্বের সেই জনপ্রিয় গানটাই ধরুন_'মেরা জুতা হ্যায় জাপানি, ইয়ে পাতলুন ইংলিশস্তানি, সরপে লাল টোপি রুশি-ফিরভি দিল হ্যায় হিন্দুস্তানি।' এটা সাম্যবাদসহ আন্তর্জাতিকতা এবং ভারতীয় জাতীয়তাবাদের একটা গান। আমরা গানটিকে করে নিলাম 'ফিরভি দিল হ্যায় পাকিস্তানি'।_বাহ্, পাস! আর পায় কে? অথচ দেখুন মজা, গানটির মাঝখানে যে সোভিয়েত রাশিয়ার প্রতীকী লাল রঙের টুপিখানার উল্লেখ রয়েছে_তা আমাদের গানে রয়েই গেল। না পারলাম তা আমরা বুঝতে, না আমাদের স্কুল কর্তৃপক্ষ কিংবা পুলিশের সদাতৎপর গোয়েন্দা বিভাগ। কী বিপজ্জনক পরিত্রাণ! স্কাউট ক্যাম্প-ফায়ার বা বিনোদন অনুষ্ঠানে সস্ত্রীক হাজির থাকতেন পদস্থ পাকিস্তানি সামরিক-বেসামরিক কর্তাব্যক্তিরা। তাঁদের সামনে বসেই অম্লান বদনে আমরা গাইতাম কোলকাতা থেকে ছড়িয়ে পড়া আর একটি সাম্যবাদী গান_ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটারেরও (আইপিটি) হতে পারে_'নওজোয়ান, নওজোয়ান, বিশ্বে জেগেছে নওজোয়ান; কোটি প্রাণ একই প্রাণ, একই স্বপ্নে মহীয়ান! আমাদের মুক্তিস্বপ্নে সূর্যে রং লাগে, যৌবনেরই অভ্যুদয়ে হিমালয় জাগে...'। গানের উৎস এবং মর্মার্থ সম্পর্কে আমরা অজ্ঞ ছিলাম তখন। আমাদের শাসকশ্রেণীর শ্রোতারাও ছিলেন সমান অজ্ঞ। এ রকমই এক অনুষ্ঠানে একবার আমরা ২০-২৫ জন স্কাউট মিলে দলীয় কণ্ঠে পরিবেশন করি একটি জনপ্রিয় ভারতীয় আধুনিক বাংলা গান : 'তোমার বিরহ চোখে আনে জল, তবু যে মধুর লাগে...'। সম্মিলিত কিশোর-কণ্ঠের গাওয়া এই বিরহপীড়িত গানটি শুনে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসকের স্ত্রী কী কারণে যে সেদিন হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়েছিলেন, তা বুঝতে আমাদের অনেক দিন লেগেছে।ওই অনুষ্ঠানেরই শেষদিকে হারমোনিয়াম টেনে নিয়ে গাইতে বসেন এক অনির্ধারিত অতিথি শিল্পী, স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক শ্রী অমরেন্দ্র শ্যাম। এই শ্যাম স্যারেরই ছেলে সুজেয় শ্যাম আজকের বাংলাদেশের এক যশস্বী সংগীত পরিচালক। আর স্যারের বড় মেয়ের ছেলে শুভ্র দেব হচ্ছেন এক জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী। শ্যাম স্যারকে হারমোনিয়াম ধরতে দেখে আমাদের চোখ গোল হয়ে গেল। বিশাল লম্বা-চওড়া ব্যায়ামপুষ্ট দেহ, দর্শনযোগ্য একখানা আশুতোষী গোঁফ, ধবধবে ফরসা ধুতি-পাঞ্জাবি, কাঁধে শাল, পায়ে লম্বা সাদা মোজার সঙ্গে চকচকে পাম্প-শু, হাতে তাঁর সেই ছাত্র পিটিয়ে সোজা করার সার্বক্ষণিক লম্বা বেত...ওফ্! শ্যাম স্যারের ছায়া দেখলেই আমাদের বুকের রক্ত হিম হয়ে যেত। এহেন শ্যাম স্যার যখন গোঁফের আড়ালে মিষ্টি হাসি নিয়ে রসিয়ে রসিয়ে গাইলেন_'চুড়ি দিলাম, বালা দিলাম, জবাকুসুম তৈল দিলাম' আমরা তখন মন্ত্রমুগ্ধ। কী ভরাট সুরেলা কণ্ঠ, কি রোমান্টিক প্রকাশভঙ্গি! বিশ্বাস হলো না, পরদিন থেকেই আবার তিনি ধারণ করবেন তাঁর সেই নিত্যকার রুদ্রমূর্তি।তখনকার দিনে ম্যাট্রিক পরীক্ষা পাসের পরই চারুকলা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়া যেত। সে অনুযায়ী ১৫ বছর বয়সে আমি ওখানে ভর্তি হলাম। তখন সৌভাগ্য হলো সাচ্চা বামপন্থীদের কাছে থেকে দেখার। তখনো পাকিস্তান যুগের অবসান হয়নি এবং যথারীতি কমিউনিস্ট পার্টি তখনো নিষিদ্ধ। তবে বড় নেতারা আড়ালে থাকলেও কর্মীরা প্রকাশ্যেই থাকেন প্রায়, বিশেষত ছাত্র শাখার কর্মীরা। অন্য অনেকের মতো আমারও ঝোঁক গেল তখন ইতিহাস, সাহিত্য, চলচ্চিত্র আর মার্ক্সবাদের দিকে। কিন্তু ক্রমাগত বাঁয়ে সরলেও সমাজতন্ত্রের প্রতি পূর্ণ অঙ্গীকার জন্মাল না। সেটা সাম্রাজ্যবাদী প্রচারণার কারণে নয়, রেজিমেন্টেশনের ভয়ে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর এক সুবিধাবাদী, ভোগী এবং কাপুরুষ ছেলে তার ব্যক্তিস্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের গুহা থেকে বেরিয়ে আসতে পারল না। দ্বিধা-সংশয়ের ফলে কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থক হিসেবে গোপনে আমি অনেক কাজ করলাম বটে, তবে পার্টির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হতে পারলাম না। আজীবনই রয়ে গেলাম 'না-প্রেমিক, না-বিপ্লবী'। এভাবে শুধু এক ডান দলের বাম যাত্রী হয়েই ঝুলে থাকলাম আমি এবং তারও পরে সেই ডান রাজনৈতিক দলের সরাসরি সংস্পর্শ থেকেও বেরিয়ে এলাম অবশেষে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে বাম দর্শন আজও আমার ভেতর মিশ্র অবস্থান নিয়ে আছে_এ কথা সত্যি হলেও তেমন প্রশংসনীয় কিছু নয়। আর মাঝখান থেকে আমার স্কাউটজীবনের বাঁয়ে উপুড় হওয়া আদর্শখানাও গেল!================================খবর- 'মারা যাবে না একটি শিশুও' -বিলগেটসপত্নী, মেলিন্ডা গেটস  আলোচনা- 'সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের অঙ্গীকারঃ  নিবন্ধ- সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড-একটি দেশ একটি কবিতার জন্ম by আলীম আজিজ  আলোচনা- 'আরও একটি সর্বনাশা দেশ চুক্তির বোঝা' by আনু মাহমুদ  গল্পালোচনা- হতাশার বিষচক্র থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে  আলোচনা- 'বেঁচে থাকার জীবন্ত পোট্র্রেট' by বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গির  খবর- চলন্ত ট্রেনের নিচে মেয়েকে নিয়ে মা'য়ের আত্মহত্যা  গল্প- 'সেদিন অফিসে যায়নি আন্দালিব' by হাবিব আনিসুর রহমান  বিজ্ঞান আলোচনা- মানবযকৃৎ উদ্ভাবনে বিজ্ঞানীরা সফল  খবর- দিলমা রুসেফ । নারী গেরিলা থেকে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট  আলোচনা- 'সকল গৃহ হারালো যার' by তসলিমা নাসরিন  রাজনৈতিক আলোচনা- 'বিষয় কাশ্মীর-ইনসাফ ও স্বাধীনতা by অরুন্ধতী রায়     কালের কণ্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ কাওসার আহমেদ চৌধুরী

এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...

free counters

No comments

Powered by Blogger.