ফুটবলে আশার আলো

কাজী সালাউদ্দিন থেকে শুরু করে গোলরক্ষক আমিনুল। আলী আকবর পোরমুসলিমি থেকে জোরান কার্লেভিচ। বাফুফে সভাপতি, জাতীয় দলের গোলরক্ষক, আবাহনী ও শেখ জামালের দুই বিদেশি কোচ—কারও সঙ্গেই কারও মিল নেই। তবে একটা জায়গায় সবাই একমত। পরশু শেষ হওয়া গ্রামীণফোন ফেডারেশন কাপ ফুটবল দেশের ফুটবলে একটা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে।
গত বছর সুপার কাপের ফাইনাল শেষেও সবার মুখে ইতিবাচক পরিবর্তনের কথাই ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ লিগে অসংখ্য পাতানো ম্যাচ আর প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভাব আবার সেই আগের অবস্থানে নিয়ে যায় ঘরোয়া ফুটবল। সেটি মনে রেখেও সব মহল থেকেই বলা হচ্ছে, এবারের ঘরোয়া মৌসুমটা শুরু হলো সত্যিই একটা পরিবর্তনের হাওয়া ছড়িয়ে।
সালাউদ্দিনের যেমন সবচেয়ে ভালো লেগেছে, ‘এই টুর্নামেন্টে খেলার মান বেশ ভালো ছিল। আগের ফুটবলের চেয়ে অনেক ব্যবধান। প্রতিদ্বন্দ্বিতাও বেড়েছে অনেক, যেটা আগে ছিল না। খেলায় গতি ছিল। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর ফুটবলের উন্নয়নে যে কাজ করছি, এই টুর্নামেন্ট তারই প্রমাণ। দর্শক মাঠে এসে সেই স্বীকৃতিই দিয়েছে।’
স্টেডিয়াম-ভর্তি ১৫ হাজার দর্শক। ফাইনালে ৮ গোল। একটি বাদে বাকি গোলগুলো দেখার মতো। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সুন্দর মাঠ—সবকিছু মিলিয়ে ভালো ফুটবলের জন্য আদর্শ পরিবেশ। শুধু ফাইনাল নয়, টুর্নামেন্টের আগাগোড়াই খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল, যা আগের সব আয়োজনে তেমন দেখা যায়নি। খেলাও দর্শকদের কাছে সেভাবে আকর্ষণীয় ছিল না।
একজন দর্শক হিসেবে মোহামেডান কোচ শফিকুল ইসলাম (মানিক) বলছেন, ‘এই টুর্নামেন্ট আমাদের ফুটবলের জন্য ইতিবাচক বার্তা এনেছে। পাতানো খেলার অশুভ ছায়া না থাকলে আসন্ন লিগও জমবে। সুপার কাপও ভালো হবে। এটার একটাই কারণ, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলে মানুষ খেলা দেখে আনন্দ পায়। মাঠে আসে।’
আর মাঠে যাঁরা খেলেন, তাঁরা কী বলেন? জয়-পরাজয় এক পাশে থাকুক। ফাইনালে পরাজিত শেখ জামালের অধিনায়ক আমিনুল কাল সারা দিন বিষণ্ন থাকলেও ফেডারেশন কাপের প্রভাব নিয়ে বলতে গিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিতই ছিলেন, ‘ফুটবলে নিরপেক্ষ দর্শক দুই দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখতে চায়। ঠিক এই জিনিসটা পাওয়া গেছে এবারের ফেডারেশন কাপে। সামনের দিকে ফুটবলের এই ধারাবাহিকতা থাকবে আশা করি।’
এই আশাবাদ দেখছেন দুই ভিনদেশিও। আবাহনীর ইরানি কোচ আলী আকবর ফাইনাল শেষে বলছিলেন, ‘বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল এত জমজমাট হতে পারে আমার ধারণা ছিল না। এখানে এসে বুঝলাম এ দেশে ফুটবলের প্রতি টান আছে মানুষের।’
জোরান জর্জেভিচের সহকারী হিসেবে কাজ করে যাওয়ায় বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে ধারণা আগেই পেয়েছেন কার্লেভিচ। তবে এবার ঘরোয়া ফুটবলের সামগ্রিক মান, দর্শক আগ্রহ, প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখে তাঁর মন্তব্য, ‘এখনো অনেক কাজ করতে হবে। সবকিছু আরও পেশাদার করা দরকার। তবে এই টুর্নামেন্ট বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হওয়ায় আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। আমার দল শেখ জামাল চ্যাম্পিয়ন হলে আরও ভালো লাগত।’
একজনের কিন্তু ‘ভালো’ লাগেনি ফাইনাল দেখে! জাতীয় দলের কোচ বরার্ট রুবচিচের ভালো না লাগার কারণও আছে। অলিখিত জাতীয় দল শেখ জামালের ৫ গোল খাওয়া তাঁকে তীরবিদ্ধই করেছে। মাঝমাঠ এবং রক্ষণে শেখ জামালের নড়বড়ে অবস্থা প্রকারান্তরে এই ক্রোয়েশিয়ান কোচের দুশ্চিন্তার বড় কারণই হলো। সামনে যে এশিয়ান গেমস।
এশিয়াডগামী অনূর্ধ্ব-২৩ জাতীয় দল ৪ নভেম্বর গুয়াংজু যাত্রা করছে। হাতে সময় নেই। আজ থেকে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি শুরু করছেন রুবচিচ। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ান কোচের একটাই চিন্তা, ‘ফাইনালটা ভালো হলেও খেলোয়াড়েরা বেশ নার্ভাস ছিল। শেখ জামালের খেলোয়াড়েরা অনেক ভুল করেছে, যেটা আমি আশা করিনি।’
‘আমি অবশ্য ভিন্ন কৌশল ও পদ্ধতিতে খেলাব। তা হোক, আমার চিন্তাটা কিন্তু বেড়ে গেল। খেলোয়াড়দের সমস্যাগুলো রাতারাতি সমাধান করা সম্ভব নয়’—আরও যোগ করেছেন তিনি। আর সবার সঙ্গে একটা জায়গায় একমত রুবচিচ, ‘দুজন বিদেশি কোচের ট্যাকটিকসই ভালো ছিল। ভবিষ্যতে এটি অব্যাহত থাকলে খেলা আরও ভালো হবে। ফুটবল জমবে।’

No comments

Powered by Blogger.