ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অবরোধ আরোপের এক সপ্তাহের মাথায় যুক্তরাষ্ট্র গত বুধবার ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ওয়াশিংটন বলেছে, যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ইরানের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে সহায়তা করছে, তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) ইরানের পরিবহন, ব্যাংক ও ইনস্যুরেন্স খাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ইইউর এক সম্মেলনে এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেওয়ার কথা।
যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে ইরানের যেসব প্রতিষ্ঠান কালো তালিকাভুক্ত করেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ইনস্যুরেন্স কোম্পানি, তেল উৎপাদনকারী ও জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত কয়েকজন ব্যক্তির ওপরও অবরোধ আরোপ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, ইরানের এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সব ধরনের লেনদেন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি জব্দ করা হবে।
অর্থমন্ত্রী টিমোথি গেইথনার বলেছেন, নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের জন্য অনেক কাজ করতে হয়েছে। ইরানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য দেশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করার লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গেইথনার বলেন, মানববিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইরানের মালিকানাধীন পোস্ট ব্যাংক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে সহায়তার জন্য ২০০৭ সালে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল সে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সেপাহ। পোস্ট ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধ এই সেপাহ ব্যাংকের হয়ে কাজ করে আসছিল। এ নিয়ে ইরানের সর্বমোট ১৬টি ব্যাংক কালো তালিকাভুক্ত করা হলো।
ইরানের আন্তর্মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের বিমানবাহিনী ও ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনীকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া রেভল্যুশনারি গার্ডের বিমানবাহিনীর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই ব্যক্তি, গণবিধ্বংসী কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুটি প্রতিষ্ঠান ও আরও দুই ব্যক্তিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এদের মধ্যে কালায়া ইলেকট্রনিক কোম্পানির কর্মকর্তা জাভেদান মেহের তুসও রয়েছেন।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আওতায় ইরানের শিপিং লাইনের (আইআরআইএসএল) পাঁচটি কোম্পানি রয়েছে। আইআরআইএসএলের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় এই পাঁচটি কোম্পানি নাম পরিবর্তন করে জাহাজ চলাচল অব্যাহত রেখেছিল। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত ২৭টি জাহাজ শনাক্ত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
ইরানের আরও যেসব ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তাঁরা হলেন জাভেদ করিমি সাবেত ও মোহাম্মদ আলি জাফরি। ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে সাবেতের এবং জাফরি হলেন রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান কমান্ডার।
গেইথনার বলেন, ওবামা প্রশাসন ইরানের অভ্যন্তরে ও বাইরে অবস্থিত ২২টি তেল, জ্বালানি ও ইনস্যুরেন্স কোম্পানি শনাক্ত করেছে। এগুলো কোনো না কোনোভাবে ইরান সরকারের মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রণাধীন।
মার্কিন কংগ্রেসের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান হাওয়ার্ড বেরম্যান ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপে ওবামা প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও নিরস্ত্রীকরণবিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা রবার্ট এইনহর্ন বলেছেন, এ নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানের এই বোধোদয় হবে যে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসা ছাড়া তাঁদের আর কোনো পথ খোলা নেই।

No comments

Powered by Blogger.