উৎসে আয়কর আগের অবস্থায় রাখতে হবে -রপ্তানিকারক সমিতির দাবি

প্রস্তাবিত ২০১০-১১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে সব ধরনের রপ্তানির ক্ষেত্রে উৎসে আয়কর দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে এক শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বাড়িভাড়ার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে।
বাজেটের এ দুটি প্রস্তাবে রপ্তানিমুখী খাতগুলোর মধ্যে গভীর হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, এর ফলে প্রতিটি রপ্তানি খাতে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।
সমিতির নেতারা বলছেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নাজুক পরিস্থিতির কারণে কোনো কারখানা তার সক্ষমতার পুরো মাত্রায় উৎপাদন করতে পারছে না। এ বিষয়টি বিবেচনায় এনে ২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেটে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বাড়িভাড়ার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করার এবং উৎসে আয়কর কর্তনের হার শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির নেতারা এসব দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও বিজিএমইএ সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী। এ সময় রপ্তানিমুখী বিভিন্ন সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সালাম মুর্শেদী বলেন, ২০১০-১১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট একটি জনকল্যাণমুখী, রপ্তানি ও বাণিজ্যবান্ধব বাজেট। এ বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ছয় হাজার ১১৫ কোটি বরাদ্দ করা।
তবে রপ্তানিকারকেরা মনে করেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বর্তমান পরিস্থিতিতে এ খাতে আরও বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। কারণ, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ার কারণে কোনো রপ্তানি খাতই পূর্ণ সামর্থ্যের সদ্ব্যবহার করতে পারছে না।
সালাম মুর্শেদী আরও বলেন, অবকাঠামো খাতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) ভিত্তিতে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে পূর্ণাঙ্গ আইনি কাঠামো, নীতি নির্দেশিকা স্পষ্টীকরণ ও দপ্তর দ্রুত হওয়া উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য বিদ্যুতের অফ পিক হারকেই (৩.১৫ টাকা) ফ্লাট রেট হিসেবে ধার্য করার প্রস্তাব করা হয়। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের পরিস্থিতি উন্নয়ন না হওয়া পর্যন্ত ন্যূনতম চার্জ প্রথা বাতিলের দাবি করা হয়।
অনুষ্ঠানে ব্যাংক ঋণের সুদের হার সাত শতাংশে নির্ধারণ এবং ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলের দর লিটারপ্রতি যথাক্রমে ১০ টাকা ও ২০ টাকায় নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়। পাদুকা শিল্পে চলতি অর্থবছরের মতোই আগামী অর্থবছরের প্রণোদনা প্যাকেজ অব্যাহত রাখা, কৃষিভিত্তিক শিল্পের মতো রেশমজাত দ্রব্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা দেওয়া, প্রক্রিয়াজাত চামড়া ও ক্রাফট চামড়া রপ্তানিতে ১০ শতাংশ প্রণোদনা বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়।
এ ছাড়া হিমায়িত খাদ্যে নগদ সহায়তা বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ এবং মৎস্য খামারিদের ওপর আরোপিত পাঁচ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়। হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরের জন্য শিল্পোদ্যোক্তাদের ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিনিয়োগ বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে স্থাপন করা ৫০টি কারখানায় অনতি বিলম্বে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোজন দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

No comments

Powered by Blogger.